kbdnews ডেস্ক : ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত চীনের কাছে প্রতিবছর গড়ে ২০০ কোটি মার্কিন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে রাশিয়া।
কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ এখন ঘটনা উল্টে দিয়েছে। অস্ত্রের জন্য রাশিয়া এখন তাকিয়ে আছে চীনের দিকে।খবর রয়টার্সের।
গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে রাশিয়া ৯ হাজার ৪০০ যুদ্ধ সরঞ্জাম খুইয়েছে।এর মধ্যে রয়েছে ১ হাজার ৫০০টি ট্যাংক।
এ ছাড়া এক বছরের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চালাতে গিয়ে গোলাবারুদের তীব্র সংকটে পড়েছে মস্কো।
মার্কিন গোয়েন্দাদের ধারণা, রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহের কথা ভাবছে বেইজিং।যুদ্ধের বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, চীন যদি রাশিয়াকে অস্ত্র দেয়, তবে যুদ্ধের গতি পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।
এতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সঙ্গে চীনের সম্পর্কে গভীর সংকট তৈরি হবে।তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক এমনিতেই ভালো নয়। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনা বেলুন শনাক্ত হওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে শুরু হয়েছে কথার লড়াই।
এর মধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বৈঠক করে রাশিয়াকে শায়েস্তা করার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে চীন রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহ করলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে চীনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, রাশিয়াকে অস্ত্র দিলে চীনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে। চীনের পক্ষ থেকে অবশ্য রাশিয়াকে অস্ত্র সরবরাহের কথা স্বীকার করা হয়নি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চীনকে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণ ও ভারসাম্য তৈরিতে বড় সুযোগ করে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রুশ সামরিক প্রযুক্তি আমদানি করেছে দেশটি।
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু পর থেকে চীনের কাছ থেকে একাধিকবার অস্ত্র সহায়তা চেয়েছে মস্কো। চীন বারবার মস্কোকে ফিরিয়ে দিয়েছে। এত দিন পর্যন্ত কেবল প্রাণঘাতী নয়, এমন অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করেছে।
চীনের পক্ষ থেকে রাশিয়াকে দেওয়া সহায়তার মধ্যে রয়েছে হেলমেট ও বিমানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে রাশিয়াকে কোন ধরনের অস্ত্র সহায়তা দেওয়া হতে পারে, সে বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মান ম্যাগাজিন ডের স্পিগেল দাবি করে, চীনের কাছ থেকে ড্রোন পেতে আলোচনা করেছে রুশ বাহিনী।
ড্রোন নিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে দর–কষাকষি চলছে রাশিয়ার। চীনের বিংগো ইনটেলিজেন্ট অ্যাভিয়েশন টেকনোলজি আক্রমণের কাজে ব্যবহার করা যায়, এমন ড্রোন তৈরি করে থাকে। এ ড্রোন পেতেই চেষ্টা করছে রুশ বাহিনী। যুদ্ধক্ষেত্রে ইতিমধ্যে গত সেপ্টেম্বর থেকে এ ধরনের ড্রোন ব্যবহার করে আসছেন রুশ সেনারা।
বিশেষ করে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে হামলার কাজে ড্রোনের ব্যবহার দেখা গেছে। ইউক্রেনের অভিযোগ, এ ধরনের হামলার ক্ষেত্রে ইরানের কাছ থেকে পাওয়া ড্রোন ব্যবহার করেছে রুশ বাহিনী।
প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াশিংটন পোস্ট বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বরাতে জানায়, মস্কোকে গোলা সরবরাহের কথা ভাবছে বেইজিং। যুদ্ধে রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় পক্ষই সোভিয়েত যুগের ক্যালিবার ১২২ এমএম ও ১৫২ এমএম শেল ব্যবহার করে আসছে।
তবে এক বছর ধরে চলা এ যুদ্ধে রাশিয়ার গোলা ফুরিয়ে এসেছে। ইতিমধ্যে দেশটি বেলারুশে যে গোলার মজুত রেখেছিল, তা–ও শেষ করে ফেলেছে। উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে কিছু গোলাবারুদ পেয়েছিল। কিন্তু উত্তর কোরিয়া নিজেদের গোলাবারুদ নিঃশেষ করে ফেলা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। ইরানের কাছ থেকেও খুব বেশি কিছু পাওয়ার আশা নেই মস্কোর।
এখন মস্কোর ভরসার নাম চীন। তাদের কাছে যথেষ্ট গোলা রয়েছে। পেন্টাগনের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক কর্মকর্তা লোনি হেনলি বলেন, চীনের কাছে ঠিক কী পরিমাণ গোলা আছে, সে সম্পর্কে খুব বেশি জানা সম্ভব নয়। তবে তা অবশ্যই রাশিয়ার গোলা সংকট মোকাবিলায় যথেষ্ট হবে। বর্তমান সংঘাতে বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে এই গোলা।