Kbdnews ডেস্ক : সাত দশমিক আট মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে
তুরস্ক ও সিরিয়া। দুই দেশে ধসে পড়েছে হাজার হাজার ভবন।
এদিকে সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ‘জীবিতদের খোঁজা
শেষ হয়েছে’ বলে জানা গেছে। দেশটির উত্তর ও উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে বিদ্রোহীদের
নিয়ন্ত্রিত এই এলাকাগুলোতে ২১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।শুক্রবার
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) এর সিরিয়া প্রতিনিধি শিভাঙ্ক
ধানপালা বলেছেন, দেশটিতে ৫৩ লাখ মানুষ ভূমিকম্পে গৃহহীন হয়ে পড়তে পারে। তাছাড়া এক
যুগের বেশি সময় ধরে দেশটিতে যুদ্ধ চলছে। আগেই সিরিয়ায় লাখ লাখ মানুষ বাড়ি-ঘরছাড়া
হয়ে আছে। তিনি আরও বলেন, সিরিয়ায় সংকটের মধ্যেই আরেক সংকট শুরু হয়েছে।
যুদ্ধ, অর্থনৈতিক সংকট, করোনা, বৈরী আবহওয়া
এবং সবশেষ ভূমিকম্প দেশটিতে বিপর্যয় নিয়ে এসেছে। তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পের
পর পেরিয়ে গেছে পাঁচদিন। ঘণ্টার হিসাবে ১২৫’র বেশি। তাই ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে
থাকা লোকদের জীবিত উদ্ধারের আশা প্রায় ফুরিয়েই এসেছে। অথচ এখনো নিখোঁজ হাজার হাজার
মানুষ। তাদের উদ্ধারে আরও সময় দরকার, যে জিনিসটা কারও হাতেই নেই। তাতে সময়ের সঙ্গে
প্রতিযোগিতায় ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছেন উদ্ধারকারীরা। আর জিতে যাচ্ছে মৃত্যু।
শনিবার মার্কিন
সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, গত সোমবারের প্রলয়ংকরী ওই ভূমিকম্পে নিহতের
সংখ্যা এরই মধ্যে ২৪ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে উদ্ধারকারীরা আটকেপড়া লোকদের উদ্ধারে
প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তুর্কি কর্তৃপক্ষ এবং সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর
হিউম্যান রাইটসের সবশেষ তথ্যমতে, দেশ দুটিতে এ পর্যন্তকয়েক হাজার মানুষ এখনো
নিখোঁজ। এছাড়া, কেবল তুরস্কেই আহত হয়েছেন ৮০ হাজারের বেশি লোক।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি হোয়াইট হেলমেটস
জানিয়েছে, সিরিয়ার বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ‘জীবিতদের খোঁজা শেষ হয়েছে’।
বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এ এলাকাগুলোতে ২১৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সিরিয়ার উত্তর ও উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের বিদ্রোহী
নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ভূমিকম্পের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে আটকা পড়া জীবিতদের খোঁজে
তাদের শুরু করা অভিযান শেষ হয়েছে বলে সিরিয়ান সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবী এই সংগঠনটি হোয়াইট হেলমেটস নামেই বেশি পরিচিত। গত সোমবার স্থানীয় সময়
ভোররাতে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে হওয়া ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে তুরস্ক ও
প্রতিবেশী সিরিয়ায় অন্তত ২৩৮৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সিএনএন জানিয়েছে। এর মধ্যে
শুধু তুরস্কে মৃত্যু হয় ২০৩১৮ জনের আর আহত হয়েছেন ৮০০৫২ জন, জানিয়েছে দেশটির
দুর্যোগ সংস্থা। সিরিয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা ৩৫১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে দেশটির
উত্তর ও উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে ২১৬৬ জনের মৃত্যু
হয়েছে বলে হোয়াইট হেলমেটস জানিয়েছে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা জানিয়েছে,
উত্তরাঞ্চলের সরকার নিয়ন্ত্রিত অংশে ১৩৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এক ঘোষণায় হোয়াইট হেলমেটস জানিয়েছে, তারা ১০৮
ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালিয়েছে, এরপর ধ্বংসাবশেষের নিচে আটকা পড়া আর কেউ জীবিত নেই
বলে বিশ্বাস তাদের। তবে তারা এখন ধসে পড়া ভবনগুলোর নিচে মৃতদেহ খোঁজা শুরু করেছে
বলে জানিয়েছে।
শুক্রবার
দেওয়া এক বিবৃতিতে হোয়াইট হেলমেটস বলেছে, “সোমবার স্থানীয় সময় ভোররাত ৪টা ১৭
মিনিটে ভূমিকম্প শুরু হওয়ার পর থেকে তল্লাশি ও উদ্ধার অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা
পর্যন্ত সিরিয়ার উত্তর ও উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে
২১৬৬টি মৃত্যু এবং ২৯৫০ জন আহতের তথ্য তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের টিমগুলো
সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের ৪০টিরও বেশি শহর, ছোট শহর ও গ্রামে ১০৮ ঘণ্টা ধরে
উদ্ধারকাজ পরিচালনা করেছে। এসব এলাকায় ৪৭৯টি আবাসিক ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে
এবং ১৪৮১টিরও বেশি ভবন আংশিক ধসে পড়েছে। সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের জিন্দিরেস ও হারাম
শহর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে নিহতদের
মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।