এ বছরের ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই
হতে পারে নির্বাচন। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র kbdnews কে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন,
সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের
সভায়ও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঐ সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী
লীগের সভাপতি, সংসদীয় দলের প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঐ সভায় উপস্থিত
থাকা আওয়ামী লীগ দলীয় কয়েক জন সংসদ সদস্য ইত্তেফাকের সঙ্গে আলাপকালে জানান, সভায়
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ডিসেম্বরে নির্বাচনের আভাস দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী এখন
থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতেও দলের সংসদ সদস্যদের দিকনির্দেশনা দেন দলীয়
প্রধান। নির্বাচন সামনে রেখে দলের এমপিদের নিজ নিজ এলাকায় জনসম্পৃক্ততা বাড়ানোর
পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নচিত্র জনগণের সামনে তুলে ধরার পরামর্শও দিয়েছেন
প্রধানমন্ত্রী।সংসদীয় দলের সভায় ডিসেম্বরে নির্বাচনের আভাস পাওয়ার কয়েক দিন পর
বিষয়টি সামনে আনেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী
ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘ডিসেম্বরে নির্বাচনের আভাস পাচ্ছি।’
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আওয়ামী
লীগ ও সরকারের বিশ্বাস- একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে
নির্বাচন করতে পারলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে। কারণ, মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী
দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ডিসেম্বরে সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এসময়ে
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের ভোটার-সমর্থকরাও উজ্জীবিত থাকেন। যেটির ইতিবাচক
প্রভাব পড়বে ভোটে। ২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম এবং ২০১৮ সালের ৩০
ডিসেম্বর হওয়া একাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এমন ইতিবাচক প্রভাবের ফল মিলেছিল।
এদিকে,
নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইকালে গতকাল
সোমবার নির্বাচন কমিশনে উপস্থিত ছিলেন মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে স্বাক্ষরকারী
ওবায়দুল কাদের। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের
জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন চাই। আমি স্পষ্ট
করে বলছি, আমরা চাই বিএনপির মতো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে আসুক।’
তবে আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ
বিএনপি এখনো নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনড়। দলটির স্থায়ী কমিটির
সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন জানান, তাদের মূল দাবিই হচ্ছে- সরকারের পদত্যাগ
এবং সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। তার দাবি,
আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, সেটি ইতিমধ্যে নানাভাবে
প্রমাণিত। অবশ্য, বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,
আন্দোলনের পাশাপাশি দলটি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছে। দলের ভাইস চেয়ারম্যান
আবদুল আউয়াল মিন্টু জানান, আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
আসনওয়ারি যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নে প্রাথমিক বাছাইপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেক্ষেত্রে
ইতিমধ্যে দুই শতাধিক আসনে প্রাথমিক বাছাইয়ের কাজ প্রায় শেষ।
সংবিধানের ৭২(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সংসদের
মেয়াদ প্রথম বৈঠকের দিন থেকে পাঁচ বছর। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৮
সালের ৩০ ডিসেম্বর। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি চলমান সংসদের প্রথম বৈঠক বসে। সেই
হিসেবে, আগামী বছরের (২০২৪ সালের) ২৯ জানুয়ারি বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে। সংসদ
নির্বাচনের বিষয়ে সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘(ক) মেয়াদ-অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া
যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে; এবং (খ) মেয়াদ-অবসান
ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই
দিনের মধ্যে নির্বাচন হইবে।’
সংবিধান মোতাবেক এ বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে
আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জানা
গেছে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য
তপশিল নিয়েও কথা হয়েছে। অতীতের কয়েকটি নির্বাচনের উদাহরণ তুলে ধরে বৈঠকে বলা হয়,
সেক্ষেত্রে এ বছরের নভেম্বরের প্রথম দিকে দ্বাদশ সংসদের তপশিল ঘোষণা হতে পারে।
তবে, ভোটের তারিখসহ তপশিল ঘোষণার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। উল্লেখ্য, ২০১৮
সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের তপশিল ঘোষণা হয়েছিল ঐ বছরের ৮
নভেম্বর।