সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে আদমশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের
জন্য অপেক্ষা করবে না কমিশন। তবে আপাতত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) থেকে পাঠানো
খসড়া প্রতিবেদনের তথ্য ধরেই কাজ শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যে সীমানার পরিবর্তন চেয়ে ইসিতে
১৮টি আবেদন জমা পড়েছে।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার
বেগম রাশেদা সুলতানা বলেছেন, জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে গেলে
নানা ধরনের প্রশাসনিক অসুবিধা সৃষ্টি হবে। তাই সীমানা পুনর্নির্ধারণের ক্ষেত্রে
প্রশাসনিক অখণ্ডতার বিষয়টি এবার সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে। তবে সবার সঙ্গে আলোচনা করে
যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ইসি
সূত্র জানায়, জনশুমারি ও গৃহগণনার খসড়ার প্রতিবেদন ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। তবে
চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হতে আরো সময় লাগতে পারে। এরই মধ্যে জেলাভিত্তিক
জনসংখ্যার হিসাবও প্রকাশিত হয়েছে। উপজেলাভিত্তিক হিসাব প্রস্তুতের কাজ চলছে। তাই
চূড়ান্ত জনশুমারি প্রকাশ না হলেও এসব ধরেই সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হবে।
এ ব্যাপারে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার
দেবনাথ বলেন, ‘আমরা বিবিএস থেকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হয়তো জুনের আগে পাব না। তবে
না পেলেও তারা যে খসড়া প্রতিবেদন পাঠিয়েছে তা থেকে ৪-৫ শতাংশ এদিক সেদিক হয়।
সেহেতু আমাদের কাজ করতে সমস্যা হবার কথা নয়। সেটা দিয়েই আমরা কাজ শুরু করছি।’
সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য একটা সফটওয়ারের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
২০২১
সালে নির্বাচন কমিশনকে আইনের অধীনে বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা দিয়ে ‘জাতীয় সংসদের নির্বাচনি
এলাকার সীমানা নির্ধারণ’ আইন পাশ হয়। আইনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘ইসির সীমানা
নির্ধারণের বিষয় নিয়ে দেশের কোনো আদালত বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশ্ন তোলা
যাবে না।’ তবে ইসিকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হলেও বিতর্ক ও ঝামেলা এড়াতে এবার
জনসংখ্যার ভিত্তিতে নয়, প্রশাসনিক এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতাকে গুরুত্ব দিয়ে সীমানা
পুনর্নির্ধারণ করা হবে। সেই অনুযায়ী জাতীয় সংসদের অন্তত ৪০-৪৫টি আসনের এলাকা
পরিবর্তন হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, গতকাল পর্যন্ত
সীমানা পুনর্নির্ধারণ চেয়ে ১৮টি আবেদন জমা পড়েছে ইসিতে। সংশ্লিষ্ট এলাকার
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, উপজেলা চেয়ারম্যান, পৌরসভা মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদ
চেয়ারম্যান, অ্যাডভোকেটসহ বিভিন্ন মহল থেকেই আবেদন জমা পড়ছে। অনেকেই বর্তমান
সীমানা বহাল রাখার আবেদন করেছেন। আবার কেউ কেউ আগের সীমানা বহাল রাখার আবেদনও
জানিয়েছেন। তবে মৌখিকভাবে তদবির করলেও এমপিদের কেউ এখনো লিখিত আবেদন করেননি।
এর মধ্যে কুমিল্লা-১ ও কুমিল্লা-২ আসনের
সীমানা নিয়ে পাঁচটি আবেদন জমা পড়েছে। একটিতে বিদ্যমান কুমিল্লা-১
(দাউদকান্দি-মেঘনা) ও কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করে
হোমনা ও মেঘনা উপজেলার সমন্বয়ে আসন পুনর্নির্ধারণ এবং আরেকটি আবেদনে কুমিল্লা-১ ও
২ আসনের বিদ্যমান সংসদীয় আসনের সীমানা পরিবর্তন করে হোমনা ও মেঘনা উপজেলায়
পুনর্নির্ধারণ চাওয়া হয়েছে। এছাড়া, হোমনা ও মেঘনা উপজেলার সমন্বয়ে সংসদীয় আসনের
পুনর্নির্ধারণ, বিদ্যমান কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি ও মেঘনা) এবং কুমিল্লা-২ (হোমনা ও
তিতাস) উপজেলার পরিবর্তে সংসদীয় আসনের পূর্ব ইতিহাস অনুযায়ী হোমনা ও মেঘনা উপজেলার
সমন্বয়ে নির্বাচনি এলাকা পুনর্নির্ধারণের আবেদনও পড়েছে ইসিতে। অন্যদিকে
সিরাজগঞ্জ-১ ও ৫ আসন নিয়েও আবেদন জমা পড়েছে ইসিতে। এতে সিরাজগঞ্জ জেলায় সমন্বয়ের
(বেলকুচি ও কামারখন্দ) ভিত্তিতে পুনর্নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। পিরোজপুর-৩ আসনের
(মঠবাড়িয়া উপজেলা) সংসদীয় আসনের বর্তমান সীমানা বহাল চেয়ে আবেদন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত
কমিটির প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত আবেদন
আহ্বান করিনি। তার পরও অনেকে ব্যক্তিগতভাবে দরখাস্ত দিচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও
রাজনৈতিক নেতারা যোগাযোগ করছেন। দুই রকম দরখাস্তই আসছে আমাদের কাছে। আমরা
আদমশুমারির চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনো পাইনি। তবে আমরা অপেক্ষা করতে পারব না। কেননা,
জুনের মধ্যে আমরা সীমানা পুনর্নির্ধারণের কাজ সম্পন্ন করব।