টুইটারে কিসেকি জানান, হংকংয়ে ২০১৯ সালের প্রত্যর্পণ বিলবিরোধী যে বিক্ষোভ হয় তার ছবি তুলেছিলেন তিনি। সেসব ছবি নিয়ে তিনি জাপানে প্রদর্শনীও করেন। বিমানবন্দরে পুলিশ সেই বিষয়েও জেরা করে তাকে।কিসেকি জানান, ‘একটি কক্ষে জিজ্ঞাসাবাদের সময় বেশ কয়েকবার আমার আলোকচিত্র প্রদর্শনীর কথা তারা উল্লেখ করে।’
তিনি আরও
বলেন, ‘‘আমি জানতাম এমন পরিস্থিতি একদিন আসবে, তবে এত তাড়াতাড়ি তা প্রত্যাশা
করিনি। ২০১৯ সালের ছবিগুলো প্রদর্শন করার জন্য আমার বিন্দুমাত্র আফসোস নেই। কারণ,
সেগুলো 'আমার প্রমাণ'। আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি যে 'হংকংয়ের স্বাধীনতা চলে
গেছে।’’ হংকং জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (এইচকেজেএ) এই ঘটনাকে ‘উদ্বেগজনক' হিসাবে
বর্ণনা করে বলেছে, কর্তৃপক্ষ যে বিদেশি সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে বাধা দিচ্ছে এই
ঘটনা সেটাই প্রমাণ করে।
বিশেষজ্ঞদের
আশঙ্কা, স্থানীয় গণমাধ্যমের ওপর দমন-পীড়ন নীতি বিদেশি সাংবাদিকদের ওপরেরও
গড়াচ্ছে।
সংগঠনটি
জানায়, কিসেকি হচ্ছে ২০১৮ সালের পর থেকে হংকংয়ে ঢুকতে না দেওয়া চতুর্থ বিদেশি
সাংবাদিক৷ যোগাযোগ করলেও কিসেকির বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে হংকং কর্তৃপক্ষ।
বিশ্লেষকরা
বলছেন, হংকংয়ের পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করা বিদেশি সাংবাদিক বা বিদেশি নাগরিকরা
প্রবেশের চেষ্টা করলে যে তারা ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন এই ঘটনা তার প্রতিফলন।
জাপানের
মেইজি ইউনিভার্সিটির একজন ভিজিটিং গবেষকের মতে, ‘ঘটনাটি উদ্বেগজনক, কারণ; কর্তৃপক্ষ
কেবল হংকংয়ে নয়, বরং বিদেশে কী ঘটছে সেটাও পর্যবেক্ষণ করছে।’
তিনি
বলেন, ‘হংকংয়ের বাইরে বসবাসরত মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য চীনা কর্তৃপক্ষ
জাতীয় নিরাপত্তাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। মনে হচ্ছে, জাতীয় নিরাপত্তা
আইনের (এনএসএল) এখতিয়ার হংকংয়ের সীমানা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’
২০২০
সালের জুলাইয়ে এনএসএল কার্যকর হওয়ার পর থেকে হংকংয়ের কর্তৃপক্ষ স্বাধীন
গণমাধ্যম, গণতন্ত্রপন্থী রাজনীতিবিদ এবং তরুণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে আইনটি
ব্যবহার করে আসছে। অ্যাপল ডেইলি এবং স্ট্যান্ড নিউজসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম বন্ধ
করে দেওয়া হয়েছে। অ্যাপল ডেইলির প্রতিষ্ঠাতা জিমি লাই ও স্ট্যান্ড নিউজের শীর্ষ
সম্পাদকদের আটক করে জেলে পাঠানো হয়।
গত
সপ্তাহে রাষ্ট্র সমর্থিত সংবাদপত্র কমার্শিয়াল ডেইলিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে
হংকংয়ের প্রধান নির্বাহী জন লি দাবি করেন, ‘শহরের কিছু লোক রাজনৈতিক উদ্দেশ্য
অর্জন বা 'অর্থ পাচারের' জন্য সাংবাদিকতাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে।’
লি বলেন,
‘এনএসএল কার্যকর হওয়ার পর থেকে গণমাধ্যমের 'পেশাদারিত্বের' উন্নতি হলেও কিছু লোক
সাংবাদিকতার ছদ্মবেশে তাদের ব্যক্তিগত লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করছে।’
মানবাধিকার
সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের সহযোগী পরিচালক মায়া ওয়াং এ
প্রসঙ্গে বলেন, লির মন্তব্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রতি অব্যাহত ও গভীর শত্রুতার
প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত।
‘হংকংয়ে
সাংবাদিকতা সত্যিই কঠিন। অনেক সাংবাদিক শহর ছেড়ে চলে গেছেন, কারণ, সেখানকার
পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে,’ বলেন তিনি।
রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের তথ্য মতে, গত
দুই বছরে হংকংয়ে কমপক্ষে ২৩ জন সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা নিয়ে কাজ
করা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১২ জন এখনো আটক রয়েছেন।এসব
কারণে ২০২২ সালে ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে হংকংয়ের অবস্থান ৮০ থেকে ১৪৮-এ
নেমে গেছে।