রংপুর অঞ্চলে জেঁকে বসেছে শীত। বিভিন্ন স্থানে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠা-নামা করছে। ফলে শীতের শুরুতেই নাকাল হয়ে পড়েছে রংপুরবাসী। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছেন শীতজনিত রোগে। রংপুর অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা। রংপুর বিভাগের আট জেলায় একদিনে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৪৯২ শিশুর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এক সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে প্রায় ৩ হাজারের বেশি শিশু। বুধবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি শয্যায় একাধিক শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। জায়গা না হওয়ায় মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে অনেক শিশুকে। এবার কোল্ড ডায়রিয়ায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। চলতি মাসে প্রতিদিন ৫০-৬০ শিশু নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে।নীলফামারীর জলঢাকা থেকে আসা এই নারী জানান, তার নাতির কয়েক দিন ধরে সর্দি-কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন। শীতের কারণে নিউমোনিয়া হয়েছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বিভাগের অন্য জেলার হাসপাতালগুলোতেও শীতজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা গেছে। রোগীর পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. বোরহানুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেছেন, দিনাজপুর সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন শতাধিক শিশুকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। শিশু ওয়ার্ডে ২০ শয্যার বিপরীতে প্রতিদিন ভর্তি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ জন। শীতজনিত রোগের কারণে বেশিরভাগ শিশুই এখন জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, পঞ্চগড়ে ১১ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিন ও রাতে তাপমাত্রা দুই রকম থাকায় এই জেলায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ।শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুন্নবী বলছেন, উত্তরাঞ্চল শীতপ্রবণ হওয়ায় এই সময়ে শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। মৌসুমি আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেশি থাকে। যার প্রভাব পড়ে শিশু ও বয়স্কদের ওপর। সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। রোগ প্রতিরোধে শিশুদের চিকিৎসার পাশাপাশি গরম কাপড় ও উষ্ণতার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরিফুল হাসান বলেছেন, শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, জ্বর ও শীতজনিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা শিশুদের মধ্যে যাদের অবস্থা সংকটাপন্ন মনে হচ্ছেঘ তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, জেলায় তাপমাত্রা কমছে। ভারতের হিমালয়ের কাছাকাছি হওয়ায় রংপুরে শীত তীব্র হয়। সকাল ৬টায় তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার রেকর্ড হয়েছিল ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন তাপমাত্রা ১৩ থেকে ১৪ ডিগ্রিতে সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। ডিসেম্বর মাসে দুটি শৈত্য প্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।