আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে
অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী যুব মহিলা লীগের তৃতীয় জাতীয় ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। এর উদ্বোধনী
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিন বছর
পর সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও দুই দশকে মাত্র দুই বার কাউন্সিল হয়েছে। তবে
নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটেনি। অর্থাত্ ২০০২ সালে যুব মহিলা লীগের জন্মলগ্ন থেকেই
নেতৃত্বে রয়েছেন নাজমা আখতার ও অপু উকিল। সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলেন,
এতদিনেও নেতৃত্বে পরিবর্তন না আসায় সংগঠনের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। আধিপত্যের
কারণে সংগঠনের শৃঙ্খলাও ব্যাহত হচ্ছে। তাই এবার নেতৃত্বে পরিবর্তন আসছে। যদিও এটি
নির্ভর করছে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের ওপর। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী
সম্মেলনে কাউন্সিলররা নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করার কথা। কিন্তু অন্যান্য সহযোগী
সংগঠনের মতো যুব মহিলা লীগের কাউন্সিলরাও এবার নেতৃত্ব নির্বাচন করার ক্ষমতা
শেখ হাসিনার ওপর অর্পণ করবেন বলে জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পাঁচ জন নেতা জানান, পাঁচ বছর পরে সম্মেলন
হতে যাওয়া যুব মহিলা লীগ সভাপতি-সম্পাদক পদে নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে। যারা দীর্ঘ
দিন ধরে ছাত্ররাজনীতি শেষ করে যুব মহিলা লীগের সঙ্গে যুক্ত ত্যাগী তাদের মূল্যায়ন
করা হবে। আর সম্মেলনের মাধ্যমে যারাই নেতৃত্বে আসবেন তাদের নির্বাচনকালীন
পরিস্থিতি সামলাতে হবে।
২০০২ সালের ৬ জুলাই
প্রতিষ্ঠিত হয় আওয়ামী যুব মহিলা লীগ। নাজমা আক্তারকে আহ্বায়ক করে যুব মহিলা লীগের
১০১ সদস্যের কমিটি দেওয়া হয়েছিল। সেখানে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন অপু উকিল।
২০০৪ সালের ১৫ মার্চ প্রথম সম্মেলনে সভাপতি হন নাজমা আক্তার। আর সাধারণ সম্পাদক হন
অপু উকিল। ১৩ বছর পর দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ১১ মার্চ। ঐ সম্মেলনে
নাজমা আক্তারকে সভাপতি ও অধ্যাপিকা অপু উকিলকে সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় বহাল
রাখা হয়।
আওয়ামী লীগের দুই জন নেতা জানান, দলের নীতিনির্ধারকরা চাচ্ছেন যুব
মহিলা লীগের শীর্ষ দুই পদে পরিবর্তন। কারণ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেক নেত্রী
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় অসন্তুষ্ট আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। বিশেষ করে
আলোচিত পাপিয়া-কাণ্ডে যুব মহিলা লীগের ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে। পাপিয়া-কাণ্ডে সংগঠনের
অনেক নেত্রীর নামে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। শুধু তা-ই নয়, বর্তমান কমিটির শীর্ষ
নেতারা দিবসভিত্তিক কিছু কার্যক্রমের বাইরে তেমন আলোচনায় আসতে পারেননি। করোনার সময়
তাদের কার্যক্রম কার্যত নজরে আসেনি। তবে সচিবালয়ে তদবির করার ক্ষেত্রে একশ্রেণির
নেতারা ছিলেন এগিয়ে।
এদিকে বর্তমান দুজনের বাইরেও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায়
রয়েছেন জাকিয়া পারভীন খানম, আলেয়া সারোয়ার ডেইজী, কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, আদিবা
আঞ্জুম মিতা, শারমিন সুলতানা লিলি, জেদ্দা পারভীন রিমি, শারমীন আক্তার নিপা,
শাহনাজ পারভীন ডলি, নাভানা আক্তার প্রমুখ। যদিও এদের অনেকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক
কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে যুব মহিলা লীগের নতুন নেতৃত্ব
পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক নেত্রীরা। সেক্ষেত্রে নতুন মুখ আসতে
পারে সংগঠনটিতে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, দীর্ঘদিন ধরেই যুব মহিলা লীগের
বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সদ্য
বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নুর পাপিয়া গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত উপযুক্ত
কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যুব মহিলা লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর দুই জন সদস্য
জানান, ‘নাজমা আপা ও অপুদি যখন দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন বয়স আমাদের চেয়ে অনেক কম
ছিল। তখন নেত্রী (শেখ হাসিনা) তাদের দায়িত্ব দিয়েছিলেন, আমরা এতদিন সংগঠন করেও
দায়িত্ব পেলাম না! আমাদের মধ্যে অনেকেই সংগঠন সুন্দরভাবে পরিচালনা করার যোগ্যতা
আছে, কিন্তু কেন বারবার উনাদের দিচ্ছেন। ২০ বছর ধরে উনারাই নেতৃত্বে, তাহলে অন্যরা
কীভাবে সংগঠন করব? সংগঠনকে গতিশীল করতে নেতৃত্বে পরিবর্তন আনতে হবে।’
যুব মহিলা লীগ গঠনের সময় ৩৫ বছর বয়সে দায়িত্বে আসেন সভাপতি নাজমা
আক্তার, অপু উকিলের বয়স ছিল ৩১ বছর। সেই হিসেবে বর্তমানে নাজমার বয়স ৫৫ আর অপুর
বয়স ৫১ বছর। এ ছাড়া সংগঠনের সহসভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে বেশির ভাগেরই
বয়স পঞ্চাশের ওপরে। ১২১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অন্তত এক-পঞ্চমাংশ নেত্রীর বয়স এমন।
এছাড়া কমিটির অন্তত ১৭ জন এখন রাজনীতির বাইরে। দলীয় কোনো অনুষ্ঠানেও তাদের দেখা
যায় না। ছাত্রলীগ থেকে বিদায় নেওয়ার পর যুব মহিলা লীগ করতে আসা নারীরা নেতৃত্বের
জটে আটকে পড়েছেন। বয়স বাড়লেও তাদের নেতৃত্বে পরিবর্তন হচ্ছে না।