আজ ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালের আজকের এই দেশের বিভিন্ন স্থান হানাদারমুক্ত হয়েছিল।
সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর।
সিরাজগঞ্জ : আজ সিরাজগঞ্জ মুক্ত দিবস। তিন দিন জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসিকতার সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধ করে। এতে শহিদ হন ইঞ্জিনিয়ার আহসান হাবিব, সুলতান মাহমুদ ও মকবুল হোসেন কালু। মুক্তিযোদ্ধাদের ঐ আক্রমণে টিকতে না পেরে ১৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী রেলযোগে ঈশ্বরদীর অভিমুখে পালিয়ে যায়। ১৪ ডিসেম্বর ভোরে হাজার হাজার জনতা ও বিজয়ী মুক্তিবাহিনী জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে সিরাজগঞ্জ শহর দখল করে নেয় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার মাটিতে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সিরাজগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে আজ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে।জয়পুরহাট : ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদারদের হটিয়ে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে শত শত মুক্তিযোদ্ধা ভোরের আকাশ রাঙিয়ে ওঠার আগেই শীতের কুয়াশা ছিন্নভিন্ন করে ঝাঁকে ঝাঁকে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে ও উল্লাসের মধ্যে দিয়ে জয়পুরহাটের ডাকবাংলোতে প্রবেশ করে। হানাদার পাকিস্তানি সৈন্য বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার আলবদররা তখন পালিয়ে বগুড়া ও ঘোড়াঘাটের দিকে ছুটে যায় জীবন বাঁচাতে। স্থানীয় জেলা প্রশাসন জয়পুরহাট হানাদারমুক্ত দিবস পালন উপলক্ষ্যে পাগলদেওয়ান ও কড়ই কাদিরপুর বদ্ধভূমিতে পুষ্প্যস্তবক অর্পণ ও আলোচনাসভার আয়োজন করেছে।
সুজানগর (পাবনা) : ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনারা তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর এবং আলশামসদের সহায়তায় উপজেলার নাজিরগঞ্জ, সাতবাড়ীয়া, নারুহাটি, ভবানীপুর বান্নাইপাড়া, তাঁতীবন্দ এবং সুজানগর থানা এলাকায় খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগসহ
ব্যাপক লুটপাট চালায়। একপর্যায়ে ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি সুজানগরের মুক্তিকামী নির্বিক মানুষ তত্কালীন সুজানগর পুলিশ স্টেশন এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ণ হন। দীর্ঘ তিন দিন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের একপর্যায়ে ১৪ ডিসেম্বর হানাদার বাহিনী পরাজিত হলে সুজানগর হানাদারমুক্ত হয়।
চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) : মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে দক্ষিণ চট্টগ্রামের উপশহর দোহাজারী হানাদারমুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা দোহাজারী উচ্চ বিদ্যালয়ে অবস্থানরত হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে এলাকাকে মুক্ত করেন। যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার জাফর আলী হিরুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দোহাজারীতে প্রথম লালসবুজের পতাকা উত্তোলন করেন। তাই দিনটি দোহাজারীবাসীর জন্য একটি স্মরণীয় দিন। দিবসটি উপলক্ষ্যে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) : দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে হানাদারমুক্ত হয় মোরেলগঞ্জ উপজেলা। মোরেলগঞ্জ ছাত্রলীগের তত্কালীন সভাপতি ডা. মোসলেম উদ্দিনের নেতৃত্বে ১১ জনের একটি দল মোরেলগঞ্জকে
হানাদারমুক্ত করে।
তত্কালীন মুজিব বাহিনীর প্রধান ডা. মোসলেম উদ্দিন জানান, ১৩ ডিসেম্বর মধ্যরাতে তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা মোংলা থেকে মোরেলগঞ্জে আসেন। প্রথমে তারা টাউন স্কুল মাঠে অবস্থান নিয়ে ভোর রাত ৪টার দিকে একে একে কয়েকটি রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ করেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মুক্তিকামী জনতা ফুঁসে উঠলে রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা জীবন বাঁচাতে নৌকায় করে পানগুছি নদী পাড়ি দিয়ে পালিয়ে যায়। হানাদারমুক্ত হয় মোরেলগঞ্জ।
পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) : ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাঁচবিবির আকাশে স্বগৌরবে উড়িয়ে দিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত বিজয় পতাকা। পাঁচবিবি হয়েছিল হানাদারমুক্ত।