মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি ঃ মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার তেরাইল গ্রামে ক্রয়কৃত জমি দখল নিয়ে ছোট ভাইয়ের সাথে বড় ভাইয়ের দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলছে। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ পর্যন্ত হয়েছে। যে কারনে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে উভয়পক্ষের মামলা পরস্পর থানা কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। সামাজিকভাবে একাধিকবার জরিপ করে সীমানা নির্ধারণ করা হলেও এক পক্ষের মধ্যে অসন্তোষ বা না-রাজি বিরাজ করছে। উভয় পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ্য করা গেছে।
অভিযোগের বিবরণীতে জানা গেছে, উপজেলার তেরাইল গ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছেলে আনারুল ইসলাম তেরাইলের বাজারের অদূরে গাংনী-কুষ্টিয়া প্রধান সড়কের পাশে তেরাইল মৌজার ৪৬৯৪ নং দাগে মৃত রইছউদ্দীন এর নামে রেকর্ডকৃত ১৯ শতক জমির পৈত্রিক সূত্রে মালিক ৩ ছেলের মধ্যে আমিরুল ও আরজউল্লাহর নিকট থেকে বিভিন্ন সময় ৪ টি দলিল মূলে ১১.৬২৫ শতক জমি ক্রয় করেন।যার দলিল নং ৬৭৮৫ (তাং ০৬-০৭-১৯৯৬ ইং) জমির পরিমান ২.০০ শতক,দলিল নং ৮৫৭ (তাং-২৫-০১-১৯৯৭ ইং) জমির পরিমাণ .৬২৫ শতক, দলিল নং ৮৫৪ (তাং-০৫-০২-২০০৯ ইং) জমির পরিমাণ ৩.০০ শতক এবং দলিল নং ৭৬ (তাং-০৪-০১-২০১৭ ইং) জমির পরিমাণ ৬.০০ শতক সর্বমোট ১১.৬২৫ শতক।
অন্যদিকে তেরাইল গ্রামের মৃত আশরাফ আলীর ছোট ছেলে শরিফুল ইসলাম তেরাইল গ্রামের গাংনী-কুষ্টিয়া প্রধান সড়কের পাশে ৪১ নং তেরাইল মৌজার ১৮৪৬ খতিয়ানে ৪৬৯৪ নং হাল দাগে মৃত রইছউদ্দীন এর নামে রেকর্ডকৃত ১৯ শতক জমির পৈত্রিক সূত্রে মালিক ৩ ছেলের মধ্যে আমিরুল ও ফরজউল্লাহর নিকট থেকে বিভিন্ন সময় ৪ টি কবলা দলিল মূলে ৪.৩৭৫ শতক জমি ক্রয় করেন।যার দলিল নং ৮৫৭ (তাং ০৫-০১-১৯৯৭ ইং) জমির পরিমান .৬২৫ শতক,দলিল নং ১৯৭০ (তাং-২৩-০৩-২০০০ ইং) জমির পরিমাণ .৭৫০ শতক, দলিল নং ৫৬৯০ (তাং-১৭-০৬-২০০১ ইং) জমির পরিমাণ ২.২৫০ শতক এবং দলিল নং ৩৩৬ (তাং-০৯-০১-২০১৩ ইং) জমির পরিমাণ .৭৫০ শতক সর্বমোট ৪.৩৭৫ শতক। একইভাবে শরিফুল ইসলামের স্ত্রী আশুরা খাতুনও একই দাগে অর্থ্যাৎ ৪৬৯৪ দাগে আরজউল্লাহর নিকট থেকে ৩ শতক জমি ক্রয় করেন(যার দলিল নং ৮৫৪)। এছাড়াও আনারুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম ও আশুরা খাতুন পার্শ্ববর্তী ৪৬৯৩ ও ৪৫৯৫ দাগেও কবলা দলিল মূলে জমি ক্রয় করেন।
এই জমি বন্টনের ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে বিরোধ থাকায় আদালত ও নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করা হলে ২৬-০৮-২০১৮ ইং তারিখে আদালত ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় বামন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সালিশ মিমাংসা করা হয় এবং উভয়ের সম্মতিস্বাক্ষর গ্রহন করা হয়। যেখানে ইউপি চেয়ারম্যান শহিদূল ইসলাম, তেরাইল গ্রামের আজিজুল হক, মোঃ জামাত আলী, মহাতাব আলী জমি জরিপকারী রুহুল আমিন, আবুবকর ছিদ্দিক, মিজানুর রহমান নওশাদ আলী, আব্দুল মজিদ , গোলাম মওলা ও আবুল হাশেম উপস্থিত থেকে জমি পরিমাপ শেষে হাত নকশা করে দেয়া হয়।
এব্যাপারে অভিযোগকারী শরিফুল ইসলাম জানান, উক্ত জমি সুষ্ঠু বন্টনের জন্য সামাজিকভাবে , স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ও আদালতের শরণাপন্ন হয়েও আজ পর্যন্ত আমি সঠিক সমাধান পাইনি।তিনি জমির আদ্যপান্ত বুঝিয়ে বলেন, উক্ত জমি হাফেজ হালসানা চাকরান মূলে সিএস রেকর্ড এ ২৯৫০ দাগে (খতিয়ান নং-৭৬০) ২৭ শতক জমির মালিক ছিলেন। এ সময় পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশ সি এন্ড বি ডিপার্টমেন্ট ২৯৫০ দাগে ৩ খতিয়ানে ৮ শতক জমি অধিগ্রহন করে। পরবর্তীতে আবারও ১৯৬২ সালে এস এ রেকর্ড হলে কেস নং-১২৪/২ সন ১৯৬৩-৬৪ সালে সড়ক বিভাগ ৬ শতক জমি রইচউদ্দীনের নিকট থেকে ক্রয় (অ্যাকোয়ার)করেন। সবশেষে উক্ত দাগে জমি রয়েছে মাত্র ১৩ শতক। কিন্তু আর এস রেকর্ড অনুযায়ী উক্ত জমি ভ’ুল ক্রমে ১৯ শতক রেকর্ড হয়ে যায়। শর্ত সাপে্েক্ষ উক্ত জমির ক্রয় সূত্রে মালিক ৪ জন। সরকার (সড়ক বিভাগ), আনারুল,শরিফুল, ও আশুরা খাতুন। কিন্তু সমাজ পতিরা আমাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে শুধুমাত্র আনারুল ও শরিফুলের মধ্যে বন্টন করেছে। আমার স্ত্রী আশুরা খাতুন ও সরকারের ক্রয়কৃত জমি বন্টন করা হয়নি। সে কারনে আমি সুষ্ঠুু বিচার চাই। আমাকে মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে স্বাক্ষর করে নেয়া হয়েছে।শরিফুল ইসলামের দাবি জমির ৪ মালিকের উপিস্থিতিতে পরিমাপ হলে আমার কোন আপত্তি থাকবে না। একতরফা পরিমাপ আমি মেনে নেব না। অন্যদিকে ক্রয়কৃত জমির মালিক আনারুল ইসলাম জানান, এই জমি আমাদের পৈত্রিক সম্মত্তি নয়। আমি ক্রয়সুত্রে উক্ত জমির মালিক । একাধিকবার পরিমাপ করলেও আমার কোন আপত্তি নেই। আমার দলিল অনুযায়ী জমি বুঝে পেলেই মেনে নেব। উল্লেখ্য, উভয় পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে আগামী ১৬-১১-২২ ইং তারিখে সরেজমিনে জরিপকরার কথা রয়েছে।
আমিরুল ইসলাম অল্ডাম