(মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা :
ধলাই নদীতে বিষ ঢেলে মাছ শিকার নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত রবিবার এই নদীতে আবারও বিষ ঢেলে মাছ শিকার করা হয়। এভাবে মাছ শিকারের ফলে সব ধরনের জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে বিষ ঢেলে কিংবা পাম্প দিয়ে পানি শুকিয়ে মাছ ধরা হয়। বর্ষা মৌসুমে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, বাঁশের খাটি (আড়াআড়ি বেড়া) ও কুচা দিয়ে মাছসহ জলজ প্রাণীর বংশ বিনাশ করা হচ্ছে।সরেজমিনে দেখা যায়, মাছ শিকারের জন্য রবিবার ধলাই নদীর উজানে দুষ্কৃতকারীরা বিষ ঢেলে দেয়। বিষ গড়িয়ে যেতে যেতে নদীতে ছোটবড় নানা প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠতে থাকে। উপজেলার উত্তর আলেপুর, কুমড়াকাপন গ্রাম এলাকায় শিশু-কিশোর ও স্থানীয়রা মাছ ধরতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। মৃগেল, পোটা মাছসহ ছোটবড় নানা প্রজাতির মাছ ভেসে ওঠে। ইতিপূর্বে ধলাই ও লাঘাটা নদীতে কয়েক দফা বিষ ঢেলে মাছ শিকার করা হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ রয়েছে। কমলগঞ্জের হাওর ও নদীরক্ষা আঞ্চলিক কমিটির সদস্য সচিব ও পতনউষার ইউপি সদস্য তোয়াবুর রহমান তবারক, প্রাক্তন ইউপি সদস্য আব্দুল করিম, কৃষক মানিক মিয়া, শিক্ষক ফেরদৌস খান, শমশেরনগরের কৃষক মোবাশ্বির আলীসহ স্থানীয় সচেতন মহল জানান, ধলাই, লাঘাটা নদী ও পলক নদে ঘনঘন বিষ ঢেলে মাছ শিকার করা হচ্ছে। মাছ শিকারের জন্য বাঁশের বেড়া (খাটি), কারেন্ট জাল ও নানা অপরিকল্পিত কার্যক্রমে ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে মাছ, ব্যাং, সাপ, কুচিয়াসহ জলজ প্রাণী। এতে জলজ জীববৈচিত্র্যসহ পরিবেশেরও মারাত্মক ক্ষতি বয়ে আনছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, উজানের পাহাড়ি এলাকা থেকে আসা পলক নদ, দেওছড়া, সুনছড়া, জপলাছড়া, লাউয়াছড়া, ডালুয়াছড়াসহ অসংখ্য ছড়া ও খাল রয়েছে। কেওলার হাওর, ছাইয়াখালী
কমলগঞ্জ উপজেলা
মত্স্য কর্মকর্তা মো. শহিদুর রহমান বলেন, ধলাই নদীতে কে বা কারা বিষ ঢেলে মাছ
শিকার করছে। সেখানে আমাদের একার পক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। তাছাড়া নদী,
খাল, বিলে বিষ প্রয়োগ, বাঁশের খাটি ও কারেন্ট জালের বিষয়ে অভিযান চালাতে
ভ্রাম্যমাণ আদালত ছাড়া কোনো শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয় না। কাজের ঝামেলায় সব সময়
ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে হাওর, মকাবিলসহ বেশ কয়েকটি বিল, জলাশয় থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় এবং
বৃষ্টিপাতের ফলে উজানের পাহাড়ি ঢল নেমে পলিবালি জমে নদী, খাল, ছড়া, বিল ও হাওরের
তলদেশ ভরাট হয়ে পড়ছে। হ্রাস পাচ্ছে নদী ও খালের প্রশস্ততাও। অসাধু মাছ শিকারিদের
কারণে এসব নদী, খাল ও জলাশয়ে দেশীয় মাছের প্রজনন বিনষ্ট হচ্ছে এবং মাছের আকাল দেখা
দিচ্ছে।
পতনউষার ইউপি চেয়ারম্যান অলি
আহমদ খান বলেন, লাঘাটা নদী, পলক নদ, খিন্নিছড়াসহ একাধিক নদীখাল, ছড়ায় একটি মহল মাছ
শিকারের জন্য বাঁশের খাটি (বেড়া), বাঁধ দিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে
আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা না গেলে নদী ও জলাশয় থেকে মাছের অস্তিত্ব বিনষ্ট হয়ে পড়বে।
যাওয়াও সম্ভব হয় না। তবে এসব বিষয়ে সবাইকে সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। এ
ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত
উদ্দীন বলেন, এসব অপরাধের সঙ্গে কারা সম্পৃক্ত তার সন্ধান বের করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে
হবে। যদি কোনোভাবে কেউ তথ্য জানাতে পারেন তাহলে গোপনীয়তা বজায় রেখে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা
গ্রহণ করা হবে।