গাংনীর ঐতিহ্যবাহী ফুটবল মাঠ এখন ইমারত নির্মানকারীদের দখলে। খেলার মাঠ না পেয়ে যুব সমাজ বিপথগামী।

 



                                                     ছবিঃ  আমিরুল ইসলাম অল্ডাম

গাংনীর ঐতিহ্যবাহী ফুটবল মাঠ এখন ইমারত নির্মানকারীদের দখলে। খেলার মাঠ না পেয়ে যুব সমাজ বিপথগামী।    

মেহেরপুর  জেলা প্রতিনিধি ঃ মেহেরপুরের গাংনী পৌরসভার খামখেয়ালীপনা ও দায়িত্বে অবহেলা এবং দীর্ঘদিন যাবত মাটি ভরাটের নামে পরিত্যক্ত থাকার কারনে গাংনীর একমাত্র ঐতিহ্যবাহী ফুটবল মাঠ এখন ইমারত নির্মাণ কারীদের দখলে চলে গেছে। ফলে খেলার মাঠে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত খেলোয়াড় বিশেষ করে যুব সমাজ বিপথগামী হয়ে পড়েছে। গাংনীর এই মাঠের এক পার্শ্বে যেন কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে শতবর্ষী সেই বটবৃক্ষ। এক সময়ের কৃতি খেলোয়াড়দের পদচারণায় মুখরিত হয়ে থাকতো এই ফুটবল মাঠ। সবুজ ঘাসের নরম স্পর্শে যেন প্রাণের স্পন্দন নাড়া দেয়। বিকেল হলেই হাজারো দর্শক খেলা দেখতে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম মহল্লা থেকে ছুটি আসতো। সেই প্রেক্ষিত আর নেই। কালের বিবর্তনে আজ সবই স্মৃতি। 

 গাংনী উপজেলা সদরে অবস্থিত একমাত্র খেলার মাঠ আজ শুধুই স্মুতি হয়ে আছে ক্রীড়ামোদী খোলোয়াড় ও দর্শকদের কাছে। যে মাঠে জাতীয় দিবসগুলো পালিত হতো বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে। গৌরবোজ্জ্বল সেই মাঠে প্রতিবছরই জমে উঠতো জমকালো ফুটবল টুর্নামেন্ট। দক্ষিণ এশিয়ার দ্রæততম মানব গাংনী উপজেলার সাহেবনগর গ্রামের কৃতি সন্তান মরহুম শাহ আলমের নামে  আয়োজিত হতো শাহ আলম টুর্নামেন্ট। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধৃ ফুটবল টুর্নামেন্টসহ নানা  আয়োজনে ফুটবল ভলিবল এমনকি আন্তঃস্কুল ক্রীড়া প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হতো এই ঐতিহ্যবাহী ফুটবল মাঠে। মাঠ না থাকার কারনে এখন আর  সেই খেলাধুলাও নেই। ফলে যুব সমাজকে তাদের শরীর ও স্বাস্থ্য গঠনে  খেলার মাঠে দেখা যাচ্ছে না।

 এই সেই ফুটবল মাঠ। যে মাঠে খেলাধূলার অনুশীলন করে জেলা তথা বিভাগীয় এমনকি জাতীয় পর্যায়ে শুধু পুরস্কার নয় রেকর্ড সৃষ্টি করেছে গাংনীর খেলোয়াড়রা।মাঠ কাঁপানো সেইসব খেলোয়াড়দের মধ্যে আমিরুল ইসলাম অল্ডাম, আজমাইন হোসেন, গোলাম মোস্তফা দুলাল, আসাদুল হক, তোতা, বাবলু, ইদ্রিস আলী, মন্টু, রবিউল ,আঃ মজিদ, ইয়ামিন আলী, মহব্বত আলীসহ সাবেক  খেলোয়াড়বৃন্দ  গভীর ক্ষোভ জানিয়ে জানান, যে ঐতিহ্যবাহী ও গেীরবোজ্জ্বল মাঠে আমাদের গাংনীর সুনাম জড়িয়ে রয়েছে। যে মাঠে হাজারো লক্ষ দর্শক মাঠের চারিপাশে দাঁড়িয়ে খেলা উপভোগ করতো সেই মাঠের এরকমদৈন্যদশা দেখে লজ্জা পেতে পেতে হয়। অবিলম্বে এই মাঠের ঐতিহ্য ফিরিয়ে এনে আবারও কিশোর তথা যুব সমাজ  মোবাইল ফোন এমনকি নেশাদ্রব্য ছেড়ে খেলায় ফিরে  আসবে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের। 

গাংনীর বিশিষ্ট খেলোয়াড় অল্ডাম, আজমাইন, তোতাসহ অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, আমাদের গাংনীন জন্য দুর্ভাগ্য। স্বাধীনতার পর থেকে এযাবত যতজন গাংনীর উন্নয়নে জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব, সুন্দর মাঠ নিমাণ তথা বিনোদনের মাধ্যম হিসাবে খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন কোনটিই করার মত মানসিকতা কারোর মধ্যে আমরা দেখতে পাইনি। যে কার খেলাধুলার উন্নয়নে কোন ভূমিকা  রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নেননি।  এটা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য।          

     আকাশ সংস্কৃতির যুগে কিশোর ও যুব সমাজকে গ্রাস করেছে মোবাইল ফোন আর মাদক। মাদকের ছোবলে পড়ে যুব সমাজ আজ বিপথগামী হয়ে পড়েছে।খেলার মাঠ না পেয়ে সারাক্ষণ বাড়িতে  বসে পড়ার টেবিলে মন বসছে না।  ফলে উপায়ন্তর না পেয়ে  স্কুল কলেজ পড়–য়া শ্ক্ষিার্থীরা  তাদের সময় কাটাচ্ছে মোবাইল ফোনের নষ্টালজিতে।  অনেকেই সঙ্গ দোষে হয়ে পড়েছে মাদকাসক্ত।     

এসব ভেবে প্রাক্তণ খেলোয়াড়দের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। কতবার , কতদিন আবেদন নিবেদন , অনুরোধ করেও মাঠ সংস্কারের নামে মাটি ভরাট করা হবে বলে প্রতিশ্রæতি দেয়া হলেও অদ্যাবধি তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। মাঠের চারিপাশে বাড়ি ঘর নির্মিত হওয়ার কারনে সামান্য বৃষ্টি হলেই মাঠে হাটু পানি জমে মাঠ খেলার অযোগ্য হয়ে পড়ে।  এরই প্রেক্ষিতে গাংনী  ফুটবল মাঠের সত্ত¡াধিকারী গাংনী স্কুল এন্ড কলেজের প্রধান শ্ক্ষিক মহোদয় আফজাল হোসেনের নিকট একাধিকবার ধর্না দিয়েও কোন কাজ হয়নি। এক পর্যায়ে গাংনী পৌর মেয়রের নিকট আবেদন নিবেদন করে যদিওবা মাটি ভরাটের প্রকল্প হাতে নেয়া হলো।  বছর ধরে মাঠের আংশিক জায়গায় মাটির স্তুপ করে রাখা হলেও  মাটি ভরাট কবে নাগাদ শেষ হবে বলতে পারছেন না কেউ। কাজের গতি এতটাই মন্থর যে প্রায় বছর খানেক সময় ধরেও মাটি ভরাটের কাজের সমাপ্তি আজও চোখে পড়েনি।

    বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গাংনী পৌর সভায় ইতোমধ্যে পয়ঃনিস্কাশনের ক্ষেত্রে ড্রেন নির্মান কাজ চলছে। সেই প্রকল্প  অর্থ্যাৎ ড্রেনের মাটি নিয়ে ফুটবল মাঠ ভরাট করা হচ্ছে। আলাদাভাবে এই মাঠ ভরাটের জন্য কোন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়নি।  ড্রেনের কাজ বন্ধ হেতু ফুটবল মাঠে মাটি ভরাটের  কাজও বন্ধ রয়েছে।  কবে নাগাদ এই মাটি ভরাটের কাজ শেষ হবে তা বলতে পারেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। 

তবে আশ্বস্ত করে মেয়র আহম্মেদ আলী জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বর মাঠের জাতীয় দিবসের কুচকাওয়াজ , ডিস্েরপ্ল  ও খেলা ধুলা এই মাঠেই  করার  চেষ্টা করা হচ্ছে। 

     

 



Post a Comment

Previous Post Next Post