বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি আজ বৃহস্পতিবার পা রাখলো ৪৫ বছরে। দলটির ৪৪তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আজ। ১৯৭৮ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদীদের ’যূথবদ্ধ শক্তিমঞ্চ’ হিসাবে এই দল গঠন করেন। প্রতিষ্ঠার পর সাড়ে চার দশকের মধ্যে গত এক যুগের বেশী সময় ধরে সবচেয়ে প্রতিকুল সময় পার করছে দলটি। দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ হওয়ার পর থেকে দলের অবস্থা অনেকটা নাজুক হয়ে পড়ে। তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্ত সাপেক্ষ মুক্তি পেলেও অসুস্থতা ও বিধিনিষেধের বেড়াজালে এখনো সক্রিয় হতে পারেন নি।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব লাভ করেন লন্ডনে বসবাসরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি দলকে গনতান্ত্রিক পন্থায় পুনর্গঠিত করে সর্বস্তরে শক্তিশালী ও আন্দোলনমুখী করার উদ্যোগ নেন। তার প্রচেস্টায় দলকে তৃনমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত ঢেলে সাজানোর কাজ চলছে পুরোদমে। সেই সঙ্গে তার নেতৃত্বে তৃনমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত মিছিল সমাবেশ আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি ১১ টি অঙ্গসংগঠনের পুনর্গঠন প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সিনিয়র নেতা সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিরলস প্রচেস্টা ও দিক-নির্দেশনায় দলের সর্বস্তরে গতিশীলতা ফিরেছে। তারেক রহমান প্রতিদিনই বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে স্কাইপেসহ ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করছেন,দিক-নির্দেশনা-আদেশ-নির্দেশ দিচ্ছেন। প্রতি সপ্তাহে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ফোরাম স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক হচ্ছে। সেখানে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি ও দলীয় বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত ও প্রস্তাবনা গৃহীত হচ্ছে। দলের নেতারা বলছেন,দুই ইস্যু নিয়ে তৈরী হয়েছে বিএনপির আন্দোলনের ’রোডম্যাপ’। হটাতে হলে শুধু বিএনপির ঐক্য নয়,জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। যুগপতভাবে রাস্তায় নামা ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। আমরা বৃহত ঐক্য প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন,ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সফল নেতৃত্বে দলের ঐক্য অটুট ও সুদৃঢ় হয়েছে। দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আমাদের অঙ্গীকার হবে আন্দোলনের মাধ্যমে হারানো ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা এবং বাক-ব্যবেগম খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি,তারেক রহমানের নিরাপদ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সরকারকে বাধ্য করতে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলা। এই লক্ষ্য কার্যকরের জন্য আওয়ামী সরকার বিরোধী দলগুলোতে থাকা সমমনাদের নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের রোডম্যাপ প্রনয়নের চেস্টা চলছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্তি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও জনগণের মানবিক মর্যাদা সুরক্ষা করা। আর দলের পুনর্গঠন সম্পন্ন করে দলকে সর্বস্তরে শক্তিশালী করা। দেশের জনগন আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত
তিনি বলেন,বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চক্রান্তমূলক মিথ্যা মামলায় ফরমায়েসী রায় দিয়ে তাঁকে ২৫ মাস অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। এখনো নানা শর্তে তিনি বন্দি। গুরুতর অসুস্থ হলেও তাকে উন্নত চিকিতসার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। দলের অগণিত নেতাকর্মীকে পোশাকি-অপোশাকি ঘাতকের গুলিতে প্রাণ দিতে হয়েছে। প্রতিদিন মিছিল সমাবেশ এমনকি নেতাদের বাসাবাড়িতে হামলঅ হচ্ছে। ৩৫ লক্ষ নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় জর্জরিত। ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। তবুও থেমে থাকেনি বিএনপি’র অগ্রযাত্রা। বর্তমানে গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মৌলিক অধিকার হরণের মাধ্যমে রাজনীতির পথকেই সংকুচিত করে দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত যে,১৯৭৮ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর ফেলে আসা ৪৪ টি বছরে সংঘাত-বিক্ষোভ,জনপ্রিয়তা আর চড়াই-উৎরাইয়ের পথপরিক্রমায় বিএনপি আজ দেশের অন্যতম শীর্ষ রাজনৈতিক দল। প্রতিষ্ঠার পর উন্নয়ন-উৎপাদনের আধুনিক রাজনীতিকে মূল প্রতিপাদ্য করে ১৯ দফা কর্মসূচির আলোকে মোটে পাঁচ মাসের মাথায় ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ২০০টি আসন লাভ করে। এ দলের সমর্থকরা বিশ্বাস করেন, তার আত্মপরিচয় সে কেবল ‘বাঙালী নয়’, ‘বাংলাদেশী’।