ছবি:আমিরুল ইসলাম অল্ডাম
মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি ঃ মেহেরপুর সদর, মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৫০ ভাগ গবাদিপশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে লাম্পিস্কিন রোগের প্রকোপ বাড়ায় অধিকাংশ কৃষক ও খামারীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম ও আব্দুর রহমান জানান,আমাদের এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ীতে এই লাম্পিস্কিন রোগে গরু আক্রান্ত হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছে কৃষক ও খামারীরা।এই মুহুর্তে প্রাণিসম্পদ রক্ষায় সরকারের জরুরী ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
মুজিবনগর উপজেলার ভবের পাড়া গ্রামের সমর বিশ্বাস জানান,অত্র এলাকায় এরোগ ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে আমার গরু আক্রান্ত হয়েছে। আমার গরুটি স্থানীয় ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা নেওয়া হয়েছে সুস্থ্য হতে সময় লাগবে।
গাংনী উপজেলার বালিয়াঘাট গ্রামের পুকুরপাড়ার মৃত সামছদ্দিনের ছেলে সুলতান আলী জানান,লাম্পিস্কিন রোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল বুধবার সকালে আমার একটি বাছুর মারা গেছে যার বাজার মল্যে প্রায় ৮০ হাজার টাকা।এছাড়াও আরো দুটি গরু এরোগে আক্রান্ত হয়েছে।
বালিয়াঘাট গ্রামের গরু পালন কারী সাজাহান বলেন,বর্তমানে আমাদের গ্রামের বেশির ভাগ খামারী ও কৃষকের গরু এরোগে আক্রান্ত হয়েছে। সাহারবাটি গ্রামের গরু পালন কারী আমিরুল ইসলাম জানান, আমার গাভী গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গাভীর দুধ খাওয়ায় বর্তমানে বাছুর ও আক্রান্ত হয়েছে। স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে গাংনী হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
গাংনী উপজেলার পলাশিপাড়া গ্রামের খামারি মজিরুল ইসলাম জানান, আমার গরুর গায়ে গুটি দেখা দিলে আমি ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করি। তিনি আক্রান্ত গরুটি অন্য গরু থেকে আলাদা রাখার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। এরোগের ধরণঃ গরুর গায়ে প্রথমে গুটি বসন্ত রোগের মত দেখা যায়। এবং গরুর গায়ে ঘা এর মত গুটি- গুটি দেখা যাচ্ছে। পরবর্তীতে এটি ফেটে রক্ত বের হচ্ছে । এই রোগের চিকিৎসা না পেয়ে প্রথম দিকে আমাদের এলাকার অনেক গরু মারা গেছে।
উপজেলার গোপালনগর গ্রামের কৃষক নাসির ও শামিম জানান,আমার দুইটা বাছুর গরু এরোগে আক্রান্ত হয়েছে আমি এনজিও থেকে ১ লক্ষ টাকা লোন নিয়ে গরু দুটি ক্রয় করেছিলাম দুইমাসের মাথায় এরোগে আক্রান্ত হয়েছে।গরুটি মারা গেলে আমার পক্ষে লোনের টাকা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এব্যাপারে গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ মোঃ আরিফুল ইসলাম জানান, গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ (পশু) হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ টা গরু এরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।গাংনী উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে সরকারী ভাবে সুস্থ্য গরুকে টিকা দেওয়ার কর্মসূচি চলছে ।এ জেলায় লাম্পিস্কিন রোগ মহামারি আকার ধারণ করেছে। এছাড়াও, অনেক বাছুর –গরু আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। লাম্পিস্কিন রোগে মৃত্যুহার কম হলেও ঝুঁকি বাড়াচ্ছে দুগ্ধ ও চামড়া শিল্পে।
উপজেলায় দুধ উৎপাদনকারী খামারগুলোতে এ রোগের প্রভাব পড়ছে। দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক ও খামারিরা। বর্তমানে পার্শ্ববতী দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশে লাম্পিস্কিন আক্রান্ত গরু আসছে। এতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।তিনি আরও বলেন, খুব সাধারণ চিকিৎসায় গবাদি পশুর এই রোগ সারানো সম্ভব।
এব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তের কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ সাইদুর রহমান জানান,মশা ও মাছির মাধ্যমে ভাইরাসজনিত রোগটি জেলায় সম্প্রসারিত হচ্ছে।জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে মেহেরপুর জেলায় প্রায় ৩০ হাজার গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।দেশে প্রতি বছর ভুটান, নেপাল, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে গরু আমদানি করা হয়।কিন্তু আমদানিকারী ব্যবসায়ীরা কী ধরনের গরু আমদানি করছে? গরুর শরীরে প্রাণঘাতী ভাইরাস আছে কিনা? পরীক্ষা না করে বাজারে বিক্রয়ের কারনে রোগটি জেলায় সম্প্রসারিত হয়েছে।লাম্পিস্কিন ডিজিজের চিকিৎসায় প্রাথমিকভাবে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম গুলোতে সরকারীভাবে সুস্থ্য গরুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।
তবে ৫০ ভাগ গরু এ রোগে আক্রান্তে কারণে জেলায় ভ্যাকসিনেরও যথেষ্ট অভাব আছে। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে অ্যান্টিপাইরেটিক ও অ্যান্টিহিস্টামিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। নডিউল বা গুটি ফেটে গেলে বা সেকেন্ডারি ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন দমন করার জন্য ক্ষতস্থানে পভিসেপ অথবা ভায়োডিন দিয়ে ড্রেসিং করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।