মেহেরপুরে প্রযুক্তিগত শিক্ষা লাভে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব কোনই কাজে আসছে না।
kbdnews/ আমিরুল ইসলাম অল্ডাম ঃ মেহেরপুরের গাংনীতে আধুনিক ও প্রযুক্তিগত শিক্ষা (আইসিটি) লাভে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব কোনই কাজে আসছে না। শিক্ষার মান উন্নয়ন তথা আধুনিক প্রযুক্তিগত উন্নয়নে শিক্ষার পরিবেশ ও আনন্দঘন পরিবেশে শিক্ষা গ্রহণের নিমিত্তে সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে ডিজিটাল ল্যাব দিলেও তা পড়ে রয়েছে অযন্ত অবহেলায়। ফলে সরকারের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে না। কোটি কোটি টাকার কম্পিউটার , ল্যাপটপ নষ্ট হচ্ছে। অথচ ২০১৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় প্রতি মাসেই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের ট্রেনিং কক্ষে ব্যান বেইজ ডিভিশনের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হ্েচ্ছ।
এ নিয়ে উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার (ব্যানবেইজ ডিভিশন) জিএম ইসরাফীল ইসলাম জানান, প্রতিটা বিদ্যালয়ের ৯০ শতাংশ শিক্ষক ইতোমধ্যেই প্রশিক্ষণ গ্রহন করেছেন। গাংনী উপজেলায় ১ হাজার ৫৩০ জন শিক্ষকের মধ্যে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২১২ জন শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়েছে। প্রশিক্ষণ দিতেও সরকারের কমবেশী ১ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। তিনি আরও জানান, শিক্ষকদের ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ দিতে সরকারের খরচ হয় ১ লাখ৭৪ হাজার টাকা এবং ৬ দিনের প্রশিক্ষণে খরচ হয় ৭৯ হাজার টাকা। কিন্তু লাভের মুলে হচ্ছে না কিছুই।
কারন খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, গাংনী উপজেলার বেশীরভাগ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হলেও শুধুমাত্র জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তাদের কার্যক্রম শতভাগ চালু না থাকলেও ল্যাবটি মোটামুটি চালু রয়েছে। পক্ষান্তরে উপজেলার কোন বিদ্যালয়ের ডিজিটাল ল্যাব চালু পাওয়া যায়নি। গাংনী উপজেলার গাংনী পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ,গাংনী পাইলট সরকারী বালিকা বিদ্যালয়, জোড়পুকুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জোতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়,গাড়াডোব,রাইপুর,সাহেবনগর,ধানখোলা,ধলা,মাথাভাঙ্গা(কাজীপুর),আড়পাড়া, মিকুশিসসহ প্রায় ৪০ টিরও বেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবসহ অন্যান্য ল্যাব প্রদান করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশীরভাগ জায়গায় সরেজমিনে গিয়ে ডিজিটাল ল্যাবের কার্যক্রম চোখে পড়েনি। এব্যাপারে প্রধান শিক্ষকগন সংশ্লিষ্ট কম্পিউটার শিক্ষকদের ঘাড়ে দায় চাপাতে চাইছেন। বলছেন, করোনা পরিস্থিতির কারনে দীর্ঘদিন ল্যাব বন্ধ থাকায় বেশীরভাগ যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে। অনেক কম্পিউটার ডেস্কটপ অকেজো হয়ে পড়েছে। এসব অযুহাতের সত্যতা খুজতে ল্যাবের মধ্যে ঢুকে দেখা গেছে, বছরের পর বছর ঐ রুমটি খোলায় হয়নি। যে কারনে ঘরের মধ্যে পোকা মাকড় আর মাকড়সা বাঁসা বেঁধেছে।ধূলাবালি আর নোংরায় রুমে প্রবেশ করতেই ভয় লাগছে।আবার অনেক স্কুলে ল্যাবএর রুমটি পাওয়া যায়নি। কারন জানতে চাইলে জোড়পুকুরিয়া জোতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশিদা খাতুন জানান, মাঠের মধ্যে স্কুল। এখানে নিরাপত্তার অভাব। সে কারনে আমরা কম্পিউটারগুলি বাড়ীতে রেখেছি। জানা গেছে,অনেক কম্পিউটার প্রধান শিক্ষকের ছেলে-মেয়ে ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ছেলে মেয়ে ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে।বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সূত্রে জানা গেছে, তাদের বিদ্যালয়ে কোন মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের সাহায্যে ক্লাস নেয়া হয়নি।
ল্যাব বন্ধ এবং প্রজেক্টরের মাধ্যমে দু’একটি স্কুল ছাড়া বেশীরভাগ স্কুলে কোন রকম ক্লাস হচ্ছে না।এমন প্রশ্নের জবাবে গাংনী উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার (আইসিটি ডিভিশন) আব্দুর রকিব জানান, উপজেলায় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব দেয়া হয়েছিল ১০ টি ,বর্তমানে এবছর আরও ১৪ টি ল্যাব দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সংস্থা যেমন বিসিসি, আইএলসি ও সুপার ল্যাব কর্তৃক আরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাব দেয়া হয়েছে।শিক্ষকদের ্এ বিষয়ে আন্তরিকতার অভাব। ইচ্ছা করেই প্রশিক্ষিত শিক্ষক বৃন্দ কম্পিউটার ব্যবহার বা প্রজেক্টরের সাহায্য ক্লাস নিতে অনিহা দেখান। এ ব্যাপারে আমাদের কিছুই করার থাকেনা। আমার অফিসে লোকবল কম তাই ঠিকমত মনিটরিং করতে পারিন্।া অন্যদিকে ব্যবহার না করার ফলে কম্পিউটারের ডিভাইসগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
এছাড়াও প্রধান শিক্ষকগন জানান, আমাদের ইন্টারনেট বিল এবং কম্পিউটার মেরামত বাবদ কোন টাকা পয়সা না দিলে আমরা চালাবো কিভাবে?
এব্যাপারে শিক্ষা গবেষকগণ ও সচেতন অভিভাবকদের দাবি ,আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে সরকারের গৃহীত কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। নইলে শুধু শুধু কোটি কোটি টাকা নষ্ট করে লাভ কি?