Kbdnews ডেস্ক ঃইউক্রেন–রাশিয়া ইস্যুতে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে সংকটময় পরিস্থিতিতে ইউরোপ। সম্প্রতি রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের দুই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়ে সেখানে সেনা পাঠানোর ঘোষণা দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একতরফা এ ঘোষণায় সংকট যখন আরও ঘনীভূত হয়েছে, তখনই দেশটিতে হামলা শুরু করেছেন পুতিন। রাশিয়ার হামলার মুখে জরুরি অবস্থা ও কারফিউ জারি করেছে ইউক্রেন।
আগ্রাসন শুরুর পর এক দিনেই ইউক্রেনজুড়ে হামলার বিস্তৃতি ঘটিয়েছে
মস্কো। রাজধানী কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। প্রথম
দিনেই ৭৪টি সামরিক স্থাপনা ধ্বংসের দাবি করেছে মস্কো। রুশ সেনাদের দখলে গেছে
কিয়েভের উপকণ্ঠে অবস্থিত আন্তোনভ বিমানবন্দর ও চেরনোবিল পারমাণবিক
বিদ্যুৎকেন্দ্রও। দিনভর সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে দুই পক্ষেই। বেসামরিক লোকজনেরও
প্রাণহানি হয়েছে।
ইউক্রেনের দুই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্রের ঘোষণার পর এরই মধ্যে নানা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে রাশিয়া। হামলার পর প্রথম নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আনছে। এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার এই হামলার প্রভাব নানামুখী হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
রাশিয়ার হামলার মূল লক্ষ্য হতে পারে ইউক্রেন সরকারকে দ্রুত আত্মসমর্পণ করানো ও সেখানকার নির্বাচিত নেতাদের ‘নিষ্ক্রিয়’ করে দেওয়া। লক্ষ্য অর্জনে রুশ বাহিনী হামলা করতে পারে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, পার্লামেন্ট ভবন, মন্ত্রণালয়, গণমাধ্যম ও গণতন্ত্রপন্থী বিপ্লবের প্রতীক মেইডান নেজালেঝনোস্তিতে। ক্ষয়ক্ষতি কেমন হবে
ইউক্রেনে কামান, ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা হামলায় ৫০ হাজার মানুষের প্রাণহানি হতে পারে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধ দীর্ঘ মেয়াদে চললে এ সংখ্যা বাড়তে পারে। ইউরোপে চলমান শরণার্থী সংকটের মধ্যে এই সংঘাতে বাস্তুহারা হতে পারে লাখো মানুষ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়ার মতো ব্যপক মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাসায়নিক অস্ত্রের মাধ্যমে নৃশংসতা চালানোর বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ‘ভয়াবহ’ দুর্দশা দেখা দিতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ কর্মকর্তারা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পূর্ব ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে বেশি এলাকার দখল নিতে রাশিয়া সীমিত আকারে ও কম ঝুঁকি নিয়ে শুরু করা বর্তমান হামলা আরও কিছুদিন চালিয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি ইউক্রেনে রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্বাধীনতার ওপর জোর দেবে দেশটি। ২০০৮ সালে জর্জিয়ায় এমনটিই ঘটেছিল। আজভ সাগরে ইউক্রেনের মারিউপোল শহর ও কৃষ্ণসাগরে ওডেসা শহরে অবস্থিত প্রধান বন্দরগুলোও দখলে নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে রাশিয়া। এর মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালে জবরদখল করে নেওয়া ক্রিমিয়া থেকে ওই দুই শহরের মধ্যে একটা সংযোগ তৈরির চেষ্টা চালাতে
সোজা উত্তর, হ্যাঁ। ইউক্রেনের সেনাদের পরাস্ত করা সহজ হবে না। বেসামরিক লোকজনও যোগ দিতে পারেন লড়াইয়ে। ইউক্রেনের প্রতিরোধযোদ্ধাদের (রুশবিরোধী যোদ্ধা) অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সহায়তা করার সম্ভাবনা বাতিল করে দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য; যেমনটা হয়েছিল আফগানিস্তানে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দখলদারির অবসানে। ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার সদস্যদের অনুমান, দীর্ঘদিন ধরে সংঘাত চললে প্রাণহানি ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি বাড়বে। এমন দৃশ্যপটে রাশিয়ার অভ্যন্তরে পুতিনের বিরুদ্ধে চলে যেতে পারে জনমত।
পশ্চিমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হবে ও রাশিয়ার ছড়ির আগায় ঘুরবে—প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দুর্বল ও পরনির্ভরশীল এমনই একটি ইউক্রেন চান পুতিন। বেলারুশে এই অবস্থা চলছে। নির্বাচনে কারচুপি ও বিরোধীদের দমন করে তিনি কিয়েভে মস্কোপন্থী রাজনীতিকদের ক্ষমতায় বসাবেন বলেও ধারণা করা যাচ্ছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের বিশ্বাস, গ্রেপ্তার অথবা হত্যার জন্য চিহ্নিত করে ইউক্রেনে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের একটি তালিকা পাঠিয়েছে ক্রেমলিন।
মার্কিন সেনাবাহিনী এখনই ইউক্রেন যুদ্ধে নিজেদের জড়াবে না। তবে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর কয়েকটি সদস্যরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিতে পারে। এর মধ্যে থাকতে পারে মারণাস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সহায়তা এবং গোয়েন্দা তথ্যের বিনিময়। যদি যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হয়, আর বেসামরিক লোকজনের হতাহতের পরিমাণ বাড়ে, তবে হস্তক্ষেপ করতে পশ্চিমাদের ওপর চাপ দ্রুত বাড়বে।
ইউক্রেনে রুশ সমর্থনপুষ্ট বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত দুই অঞ্চলকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পরই রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে পশ্চিমারা।
হামলা শুরুর পর এখন আরও ব্যাপক পরিসরে
নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। এর মধ্যে থাকতে পারে রাশিয়ার ব্যাংক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান,
রপ্তানি বাণিজ্য, ঋণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের ওপর বিধিনিষেধ। এ ছাড়া কূটনৈতিকভাবে
রাশিয়াকে একঘরে করা হতে পারে। পুতিনের ব্যক্তিগত সম্পদ ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের লক্ষ্য
করেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। বৃহৎ পরিসরে প্রভাব কী হবে
ইউক্রেনে রুশ হামলার ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারে অস্থিতিশীলতা বাড়বে। ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে বাড়তে শুরু করেছে জ্বালানির দাম। ২০২০ সালে বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ গম রপ্তানিকারক দেশ ছিল ইউক্রেন। দেশটির খাদ্যশস্যের ওপর আফ্রিকা ও এশিয়ার অনেক দেশের নির্ভরশীলতা রয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার প্রভাব পড়বে এসব দেশের ওপরও।
এ ছাড়া পুতিনের প্রতি চীনের সমর্থনের কারণে পূর্ব–পশ্চিমের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আরও গভীর হতে পারে এবং রাশিয়া সীমান্তে ন্যাটোর সেনা মোতায়েন ইউরোপজুড়ে সংঘাতের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
দ্য গার্ডিয়ান, আল–জাজিরা ও বিবিসি