আমিরুল ইসলাম অল্ডাম ,মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধি : মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় ব্যাপক তামাকের চাষ হয়।এখন দিন দিন এ চাষের জমির আয়তন বাড়ছে। ররবিস্তৃত হচ্ছে ভৌগলিক এলাকা।অভিযোগ রয়েছে, তামাক বিরোধী সচেতনতার জন্য উদ্বুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় যুক্ত সংশ্লিষ্টরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করছেন না। তাই প্রচলিত শস্য উৎপাদনে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে না।
অপরদিকে তামাক উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করছে, কৃষি বিষয়ক পরামর্শ দিচ্ছে, তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে।
মেহেরপুর এমন একটি জেলা যেখানে তামাকের চাষ বাড়ছে দিন দিন।স্বাভাবিক ভাবে এলাকার নারী-পুরুষ শিশু তামাক চাষ ছাড়াও তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে সম্পৃক্ত হচ্ছে। তাই তাদের নানা স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, আজ থেকে ৪০ বছর আগে গাংনী উপজেলার ভোমরদহ এবং পরে একই উপজেলার হিন্দা এলাকায় দুয়েকটি স্থানে তামাকের আবাদ করতে দেখা যেত।এরপর থেকে ক্রমে ঐসব এলাকাসহ আশপাশে তামাকের আবাদ বাড়তে থাকে।বিভিন্ন তামাক কোম্পানির প্রত্যক্ষ তত্ত¡াবধান ও আর্থিক সহায়তায় মেহেরপুর সদর, গাংনী, মুজিবনগর উপজেলায় এখন বিস্তৃত এলাকায় তামাকের আবাদ হচ্ছে।
গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের তামাক চাষী রেজাউল হক জানান, বিভিন্ন উপজেলায় ধান, পাট, গম, মরিচ, আলু, পেয়াজ, কপিসহ সব ধরনের শস্য ও সবজির উৎপাদন হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন ফসলে উৎপাদন খরচের চেয়ে বেশী লাভ হয় না। তাই বেশি মুনাফার সুযোগ থাকায় বাধ্য হয়ে তামাক চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন সাধারণ কৃষকরা।
তাছাড়া তামাক কোম্পানিগুলো কৃষকদের তামাক চাষে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণসহ বিনামূল্যে তামাকের বীজ,সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে সার, কীটনাশক ও নগদ অর্থ প্রদান করছে।শুধু তাই নয়, তামাক কোম্পানিগুলোর নিয়োগ করা সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রতিনিয়ত মাঠে গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন।বাজারে তামাকের চাহিদা থাকায় বিক্রিতেও কোনো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে না কৃষকদের।
কৃষকদের অভিযোগ,কৃষি বিভাগের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কৃষকদের কৃষি বিষয়ক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে না।তাই লোকসানের মুখে পড়ে নানা প্রচলিত শস্য চাষ হ্রাস পাচ্ছে এবং তামাকের চাষ বাড়ছে।
কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান,তারা বারবার চেষ্টা করেও কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের দেখা পান না। প্রয়োজনীয় পরামর্শও সাহায্য না পেয়েই বিভিন্ন ফসল আবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা।এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো।
গাংনী উপজেলার ভোমরদহ গ্রামের তামাক চাষি আক্কাস আলী জানান, অন্যান্য ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার কারণে তারা তামাক চাষ করছেন।এলাকার অন্যরা তামাক চাষ করে লাভবান হয়েছে দেখে তিনিও তামাক চাষ শুরু করেছেন।
গাংনী সরকারী ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম বলেন,মেহেরপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দিন দিন তামাক চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে।তামাক চাষের ব্যাপারে যারা কৃষকদের নিরুৎসাহিত করার কথা তাদের দেখা পাওয়া যায় না।
অপরদিকে সিগারেট কোম্পানিগুলো বেশি লাভের প্রলোভন দেখিয়ে তামাক চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছে বলে তিনি জানান,।তিনি মনে করেন, কৃষি কর্মকর্তাদের উচিত চাষিদের কাছে গিয়ে তাদের তামাক চাষের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন করা।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাক্তার রাশেদুল হাসান শাওন .বলেন, তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণে জড়িতরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।এছাড়া ক্রনিক ব্রংকাইটিস, ক্রনিক অ্যাজমাসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে।
গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার জন্য আমাদের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।যারা তামাক চাষাবাদ করছেন তারা নিজেদের উদ্যোগেই করছেন।তিনি আরও বলেন,এবার প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে তামাকের আবাদ করা হয়েছে ।
আমিরুল ইসলাম অল্ডাম