ছবি: সংগৃহীত
পাঞ্জশির উপত্যকায় আফগানদের প্রতিরোধ চলবে : এনআরএফ নেতা আহমেদ মাসুদ
kbdnews ডেস্ক: আফগানিস্তানের পার্বত্য প্রদেশ পাঞ্জশিরে তুমুল যুদ্ধে শতাধিক নিহত হয়েছেন। গত চারদিন ধরে তালেবানের চূড়ান্ত দখলের বিরুদ্ধে তুমুল যুদ্ধ চলছে আফগানিস্তানের পাঞ্জশির উপত্যকায়। এর ফলে ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে পাঞ্জশিরের ভাগ্য। পাঞ্জশির উপত্যকা তালেবান নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তবে তালেবান প্রতিরোধ বাহিনী এ দাবি অস্বীকার করে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
তালেবান প্রতিরোধের একজন নেতা আমরুল্লাহ সালেহ তার পালিয়ে যাওয়া দাবি অস্বীকার করে বলেন, পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক ছিল। তবে আফগানিস্তানে বিদ্রোহীদের দখলে থাকা শেষ প্রদেশ পাঞ্জশিরের তালেবানবিরোধী ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের (এনআরএফ) নেতা আহমেদ মাসুদ বলেছেন, আফগানিস্তানের মানুষ তাদের অধিকারের দাবিতে প্রতিরোধ ও লড়াই চালিয়ে যাবে।
আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান বাহিনীর দাবি, পাঞ্জশিরে ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফোর্সের (এনআরএফ) পতন হয়েছে এবং প্রদেশটি এখন তালেবান দখলে।
তালেবান বাহিনীর এক কমান্ডার এ সম্পর্কে তিনি বলেন, সর্বশক্তিমান আল্লাহর কৃপায় আমরা পুরো আফগানিস্তানে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। বিদ্রোহীরা পরাজিত হয়েছে এবং পাঞ্জশির এখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। অন্যদিকে, এনআরএফ জানিয়েছে-পাঞ্জশিরের দখল নিতে আসা সশস্ত্র তালেবান রক্ষীরা পিছু হটেছে এবং যারা এখনো রয়ে গেছে, তারা দ্রুত আত্মসমর্পণ করবে-এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
এনআরএফের মুখপাত্র আলি নাজারি বিবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজকে পাঞ্জশিরের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, পাঞ্জশিরের দখল নিতে আসা তালেবান বাহিনীর একটি অংশ ইতোমধ্যে পিছু হটেছে এবং কয়েকশ’ তালেবান রক্ষী আটকা পড়েছে। আটকা পড়া এই রক্ষীরা জানিয়েছে, তারা আত্মসমর্পণ করতে চায়। এই মুহূর্তে (পাঞ্জশিরে) এ বিষয়ক আলোচনা চলছে।
তবে আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফোর্সের অন্যতম নেতা আমরুল্লাহ সালেহ গত শুক্রবার এক ভিডিওবার্তায় জানিয়েছেন, পাঞ্জশির কঠিন সময় পার করছে এবং প্রদেশটিকে তালেবান বাহিনীর দখলমুক্ত রাখতে তারা লড়াই অব্যাহত রেখেছেন।
ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, পাঞ্জশির একটি কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে-এতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা তালেবান আগ্রাসনের মধ্যে আছি। যুদ্ধে দুই পক্ষেই হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। তালেবান বাহিনীকে পাকিস্তান মদদ দিচ্ছে-অভিযোগ করে ভিডিওবার্তায় আমরুল্লাহ সালেহ বলেন, তালেবান বা আল কায়েদার মিত্র এই সন্ত্রাসীগোষ্ঠীকে বরাবরের মতো এ বারও পাকিস্তান মদদ দিচ্ছে। আমরা আফগানিস্তানের পক্ষে আছি এবং (তালেবান বাহিনীর কাছে) আত্মসমর্পণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আফগানিস্তানের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পাঞ্জশির আয়তনে দেশটির ক্ষুদ্র প্রদেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে শুধু পাঞ্জশিরের দখল তালেবান নিতে পারেনি। আহমেদ মাসুদ, সাবেক আফগান সেনা ও স্থানীয় কয়েক হাজার মিলিশিয়া তালেবানের সঙ্গে লড়াই করছে। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লা সালেহ ও তার অনুগত বাহিনীও মাসুদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে।
অতীতে আহমেদ মাসুদের বাবা আহমেদ শাহ মাসুদ সোভিয়েত ও তালেবানের সঙ্গে লড়েছিলেন। সোভিয়েত কিংবা তালেবানের কেউই পাঞ্জশির দখল করতে পারেনি। তাকে বলা হতো পাঞ্জশিরের সিংহ। এবার তার ছেলে আহমেদ মাসুদ তালেবানের সঙ্গে লড়ছেন।
প্রদেশটিতে বসবাস করেন প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ। লড়াইয়ের ব্যাপকতা বাড়তে থাকায় তাদের অধিকাংশই বর্তমানে দুর্গম পার্বত্য এলাকাগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন।
আফগানিস্তানে বিদ্রোহীদের দখলে থাকা শেষ প্রদেশ পাঞ্জশিরের তালেবানবিরোধী ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের (এনআরএফ) নেতা আহমেদ মাসুদ বলেছেন, আফগানিস্তানের মানুষ তাদের অধিকারের দাবিতে প্রতিরোধ ও লড়াই চালিয়ে যাবে।
গতকাল শনিবার তিনি এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, আফগানরা তাদের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের দাবিতে লড়াই করছে এবং তারা কখনো হাল ছেড়ে দেবে না। প্রতিরোধ পাঞ্জশিরে সীমাবদ্ধ নেই। নারীদের যুক্ত হতে হবে, যারা তাদের অধিকারের দাবিতে লড়াই জারি রেখেছেন।
আহমেদ মাসুদ আরো লিখেছেন, ?এ পর্যন্ত দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করে আসা পাঞ্জশিরের যোদ্ধা অথবা অধিকারের দাবিতে আওয়াজ তোলা হেরাতে আমাদের উদ্যোগী বোনদের বিক্ষোভ এটাই দেখায় যে, জনগণ তাদের ন্যায়সঙ্গত দাবি থেকে সরে আসেনি এবং তারা তাদের এই প্রতিরোধ থেকে পিছপা হবে না। কোনো হুমকি তাদের পিছু হটাতে পারবে না। কট্টর ইসলামপন্থী তালেবান ক্ষমতায় আসার পর নারীদের অধিকারবঞ্চিত হওয়ার উদ্বেগের মধ্যে গত শুক্রবার রাজধানী কাবুলে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছেন নারীরা। এর আগে বৃহস্পতিবার আরেক প্রদেশ হেরাতেও বিক্ষোভ করেন একদল নারী।
আফগানিস্তানের পাঞ্জশের উপত্যকা একমাত্র এলাকা যেখানে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ নেই। গত ১৫ আগস্ট কাবুলে ঢোকার পর উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিতে তালেবান যোদ্ধারা এর চারপাশ ঘিরে ফেলে। তবে এখনো প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে মাসুদের নেতৃত্বাধীন এনআরএফ।
রাজধানী কাবুলের উত্তর-পূবে পাঞ্জশের আফগানিস্তানের সবচেয়ে ছোট একটি প্রদেশ। পাহাড়ঘেরা এই প্রদেশে দেড় থেকে দুই লাখের মতো মানুষের বাস। এলাকাটি বরাবরই তালেবানবিরোধী। এর বড় কারণ, উপত্যকাটি কিংবদন্তি যোদ্ধা আহমাদ শাহ মাসুদের ঘাঁটি। আহমেদ শাহ মাসুদ আশির দশকে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং নব্বইয়ের দশকে তালেবানের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তার ছেলে আহমেদ মাসুদ এখন তালেবানের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। আফগানদের তাতে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তিনি।
অপরদিকে, যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক বাহিনীর চলে যাওয়ার চারদিন পর ত্রাণ সহায়তা গ্রহণে কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুনরায় চালু করা হয়েছে। গতকাল শনিবার আফগানিস্তানে নিযুক্ত কাতারের রাষ্ট্রদূত কাবুল বিমানবন্দর পুনরায় চালুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন বলে খবর দিয়েছে আলজাজিরা।
রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ত্রাণ সহায়তা গ্রহণে কাবুল বিমানবন্দর পুনরায় চালু করতে সক্ষম হয়েছে প্রকৌশলীদের একটি দল। শিগগিরই বেসামরিক ফ্লাইট চলাচলের জন্য এটি প্রস্তুত করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
কাতারের এই রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আফগানিস্তান কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় কাবুল বিমানবন্দরের রানওয়ে মেরামত করা হয়েছে। গতকাল শনিবার ওই বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ দুটি ফ্লাইট কাবুল থেকে মাজার-ই-শরীফ এবং কান্দাহার শহরে পরিচালিত হয়েছে।