kbdnews ডেস্ক: আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখলের এক মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়েছে। গত ১৫ আগস্ট তালেবান দেশটিতে তাদের দখলদারিত্ব কায়েম করে। আর এর মধ্য দিয়ে পতন ঘটে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সরকারের। অবশ্য এর আগে সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের থাকা সেনা প্রত্যাহারের কাজ সম্পন্ন হয়। ফলে ফের ক্ষমতার মসনদে আসতে সক্ষম হয় তালেবান। তাই নতুন সরকারের (অন্তর্বর্তী) অধীনে কেমন আছে আফগানিস্তান ঘুরে-ফিরে সে প্রশ্ন এসে যায়।
একেকটা যুদ্ধের ক্ষত দেশটির অর্থনীতিকে একেবারে তলানিতে নিয়ে গেছে। এর ওপর নতুন করে ক্ষমতার পালাবদল যে দেশটিকে ভালো কোনো খবর দিতে পারবে না সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, তালেবান ক্ষমতা দখল করলেও এই গোষ্ঠীর নিজেদের মধ্যে এখন বিভিন্ন অন্তর্দ্বন্দ্বের খবর বেরিয়ে আসছে। যদিও দলটির পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো খবরের কথা অস্বীকার করা হয়েছে।
তালেবান দাবি করেছে, তাদের মধ্যে সমমনা গ্রুপগুলোর মধ্যে পরিবারের চেয়েও ভালো সম্পর্ক রয়েছে। বিষয়গুলো যদি সত্যিকার অর্থে তেমনই হয় তাহলে তা অবশ্যই সাধুবাদ দেওয়ার দাবি রাখে। কিন্তু তা যদি বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে তাহলে তা অবশ্যই নতুন করে কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলবে। সমপ্রতি তালেবানের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও তাদের নতুন সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী মোল্লা বারাদার তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছিল বলে খবর বেরিয়েছিল। যদিও বিষয়টি তালেবানের পক্ষ থেকে অস্বীকার করা হয়েছে। তালেবান মুখপাত্র সুলাইল শাহিন তখন বলেছিলেন, মোল্লা আবদুল গনি বারাদার একটি ভয়েস ম্যাসেজে এ ধরনের খবর প্রত্যাখ্যান করেছেন। তালেবান একটি ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করেছে, যাতে আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কান্দাহারে এক বৈঠকে বারাদারকে দেখা গেছে। মূলত হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রধান সিরাজুদ্দিন হাক্কানির সমর্থকদের মধ্যে এই বিরোধ বলে জানা গেছে। পাক সীমান্তবর্তী আফগান এলাকাগুলোতে তাদের শক্ত অবস্থান রয়েছে। যা হোক, তালেবানের মধ্যে কিংবা তালেবান নেতৃত্বের মধ্যে কোনো বিরোধ থাকলেও দেশটির অর্থনৈতিক অবস্থা যে একেবারে নড়বড়ে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে এখন নগদ অর্থের সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। যে কারণে ক্রমেই গভীর সংকটে পড়ছে দেশটি। ব্যবসায়ীদের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাণিজ্য এখন মারাত্মকভাবে হরাস পেয়েছে। কারণ আমদানিকারকরা বিদেশ থেকে পণ্য আনার ব্যয় পরিশোধ করতে পারছেন না। দেশটির হেইরাত বন্দরের কাস্টমসের প্রধান মৌলভী সায়েদ বলেছেন, পণ্য আমদানিতে উৎসাহিত করতে শুল্ক হার কমিয়ে দেওয়া হলেও কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। বেশির ভাগ লোকজনই বলছেন, চিরচেনা পথগুলো আগের মতো থাকলেও ব্যবসা আর আগের মতো নেই।
মানুষের চলাফেরায়ও এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে। দূর থেকে স্বাভাবিক জীবন-যাপন মনে হলেও আসলে একটা ভয় তাদেরকে কুরে কুরে খাচ্ছে। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এখানকার মানুষগুলোর অর্থনৈতিক দৈন্যদশা। যদিও যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে বিদেশি সাহায্যের কথা বলা হচ্ছে। তবে তা কতটা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছবে সে প্রশ্ন থেকেই যায়। এ ছাড়া প্রতিটা পরতে পরতে নতুন নতুন নিয়মের যাঁতাকলে পড়তে হচ্ছে তাদের। নারীদের ক্ষেত্রেও বিপরীত আচরণ করতে দেখা যাচ্ছে।