ঋণগ্রহীতা। ‘ঋণ শ্রেণীকরণ’ শিরোনামে এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা গত শুক্রবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে।
গত বছর ঋণ শোধ না করলেও কেউ খেলাপি হননি। এ বছর শিথিলতার বিষয়টি ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ওপর ছেড়ে দেওয়ায় খেলাপি ঋণ ব্যাপকভাবে বাড়ে। এরকম পরিস্থিতিতে নতুন সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি বছর গ্রাহকের মোট ঋণের কিস্তির ২৫ শতাংশ আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করলেও তাকে আর খেলাপি করা যাবে না।জানা গেছে, করোনা মহামারি শুরুর পর ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে গ্রাহকদের ঋণ খেলাপি না করার বিশেষ সুবিধা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমে গত বছরের জুন পর্যন্ত এ সুবিধা ছিল। পরে দুই দফা সময় বাড়িয়ে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তা করা হয়। চলতি বছর আগের মতো ঢালাও সুবিধা না থাকলেও ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ঋণ পরিশোধে বিভিন্ন শিথিলতা আনা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, চলমান, তলবি এবং মেয়াদি প্রকৃতির ঋণ-বিনিয়োগ পরিশোধ বা সমন্বয়ের ক্ষেত্রে চলতি বছরের মার্চ মাসের কিস্তি ৩০ জুনের মধ্যে পরিশোধ বা সমন্বয় করলে ঐ ঋণ বিরূপমানে শ্রেণীকরণ করা যাবে না। পরে এ নির্দেশনার সময় ও সুযোগ আরো বাড়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।গত ২৭ জুন নতুন নির্দেশনায় বলা হয়, চলতি বছরের জুন মাসের ঋণের কিস্তির ন্যূনতম ২০ শতাংশ ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এ বছরের ৩১ আগস্টের মধ্যে পরিশোধ করলে ঐ সময়ে ঋণ বিরূপমানে শ্রেণীকরণ করা যাবে না। কিন্তু তার পরও বাড়তে তাকে খেলাপি ঋণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ১০ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা বেড়ে ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে ফের জারি করা নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তির ন্যূনতম ২৫ শতাংশ ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে আগামী ৩১ ডিসেম্বর মধ্যে পরিশোধ করলে ঐ ঋণ বিরূপমানে শ্রেণীকরণ বা খেলাপি করা যাবে না। অর্থাত্ ঋণের কিস্তি ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০০ টাকা হলে ২৫ টাকা পরিশোধ করলেই নিয়মিত গ্রাহক হয়ে যাবে।
কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের নেতিবাচক প্রভাব প্রলম্বিত হয়েছে। এ সময়ে চলমান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতিশীলতা বজায় রাখা এবং বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহের গতিধারা স্বাভাবিক রাখার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও রফতানি বাণিজ্য সমুন্নত রাখা দরকার।
এ লক্ষ্যে আগের প্রজ্ঞাপনে দেওয়া সুবিধার আওতায় ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তির ন্যূনতম ২৫ শতাংশ ডিসেম্বর মাসের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করলে তা বিরূপমানে শ্রেণীকরণ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তির অবশিষ্টাংশ বিদ্যমান মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ করতে হবে।এতে আরো বলা হয়েছে, আগের নির্দেশনা অনুযায়ী ঋণের বিপরীতে ইতিমধ্যে আদায়কৃত অর্থ এ প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনা পরিপালনের ক্ষেত্রেও আদায় হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের ওপর আরোপিত সুদ আয় খাতে স্থানান্তরকরণ এবং উক্ত ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে।