স্টাফ রিপোর্টার: আজ মঙ্গলবার ‘জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২তম জন্মবার্ষিকী। কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের জাতীয় কবি, বাংলা সাহিত্যের এক অবিসংবাদিত কিংবদন্তী।’ জাতীয় পর্যায়ে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছর ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও এ বছর করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন অনুষ্ঠান হচ্ছে না। তবে এ উপলক্ষে গতকাল সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপি ‘আমিই নজরুল আর্ন্তজাতিক নজরুল উৎসব’। নজরুলের সাম্যবাদ নিয়ে এ আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সংগঠন’মুক্ত আসর’। উৎসবে বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও পর্তুগাল থেকে ৩২ জন নজরুল গবেষক, লেখক ও নজরুল সংগীত শিল্পী অংশগ্রহণ করছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ছাড়াও বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশন ও রেডিও কবির জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে। ‘পারিবারিক সীমাহীন দুঃখ-দুর্দশার মধ্যেও তিনি নির্বাক হওয়া পর্যন্ত সাহিত্যচর্চায় ব্রতী ছিলেন। কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, সুরকার, সঙ্গীতজ্ঞ, সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী নজরুল ছিলেন বহুমুখী বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী। তার ক্ষুরধার লেখনীতে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে বিপ্লবের মন্ত্র উচ্চারিত হয়। বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কারাগারে নির্যাতন সহ্য করতেও দ্বিধা করেননি। তার কবিতা ও গানে মানবতা এবং সাম্যের বাণী বিধৃত হয়েছে। তার কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার, সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। তাই নজরুল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী এবং একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। তাকে বলা হয় জাগরণের কবি এবং উপমহাদেশের স্বাধীনতার প্রথম বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তিনি আমাদের জাতীয় কবি। তার কবিতা ও গান আমাদের মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।’ ‘তার চল চল চল গানটি রণসঙ্গীত হিসেবে পেয়ে আমরা গর্বিত। আমরা বিশ্বাস করিূ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ঔপনিবেশিক শৃঙ্খল ছিন্ন করে দেশ থেকে অন্যায় অবিচার ও অত্যাচার নির্মূল করতে তার লেখনীর আবেদন চিরদিন নির্যাতিত মানুষকে প্রেরণা যোগাবে। পাশাপাশি সঙ্গীতে তার মানব প্রেম, প্রকৃতি প্রেম এবং সৃষ্টিকর্তার প্রতি আত্মনিবেদিত ভক্তিমূলক গানের আবেদন চিরকালীন ও চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বাণী প্রদান করেছেন । প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় জাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ কবি নজরুল শুধু একজন কবি, সাহিত্যিক বা সংগীতজ্ঞই নন, তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির রাজনৈতিক মুক্তি-সংগ্রামের অকুতোভয় সৈনিক। অসামান্য ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিলো সমাজের শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন। তাঁর সাহিত্যকর্মে উচ্চারিত হয়েছে পরাধীনতা, সামপ্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সংগ্রামের বাণী।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় কবির জীবনাদর্শ একই দর্শনের ধারাবাহিক রুপ। তিনিও দেশের জন্য, জাতির জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করেছেন এবং দীর্ঘদিনের জন্য কারাবরণ পর্যন্ত করেছেন। মহান মানবতাবাদী কবি নজরুলের সংগ্রামশীল জীবন এবং তাঁর অবিনাশী রচনাবলী জাতির জন্য অন্তহীন প্রেরণার উৎস।
কবি নজরুলের সাহিত্য ও সংগীত শোষণ, বঞ্চনা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে মুক্তিরও দীক্ষা স্বরূপ। তাঁর ক্ষুরধার লেখনীর স্ফুলিঙ্গ যেমন ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিলো, তেমনি তাঁর বাণী ও সুরের অমিয় ঝর্ণাধারা সিঞ্চিত করেছে বাঙালির হৃদয়কে। তিনি প্রকৃতই প্রেমের এবং অসামপ্রদায়িক চেতনার কবি। ধর্ম-বর্ণের উর্ধে মানবতার জয়গান গেয়েছেন, নারীর অধিকারকে করেছেন সমুন্নত। তিনিই প্রথম বাঙালি কবি যিনি ব্রিটিশ অধীনতা থেকে ভারতকে মুক্ত করার জন্য স্বরাজের পরিবর্তে পরিপূর্ণ স্বাধীনতার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছিলেন। সকল জাতি, ধর্ম ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সাহসের প্রতীক। কবি নজরুল তাঁর প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে এদেশের মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে অনুপ্রাণিত ও উদ্দীপ্ত করেছিলেন। তাঁর গান ও কবিতা সব সময় যে কোনো স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। নজরুল সাহিত্যের বিচিত্রমুখী সৃষ্টিশীলতা আমাদের জাতীয় জীবনে এখনো প্রাসঙ্গিক।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবি নজরুলকে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে আনা হয়। পরে তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। নজরুল যে অসামপ্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতেন তারই প্রতিফলন আমরা পাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সংগ্রাম ও কর্মে। বিদ্রোহী কবির জীবনাদর্শ অনুসরণ করে একটি অসামপ্রদায়িক, বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ, সুখী-সমৃদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।