বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরোঃ- বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদা ও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে খুলনায় আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস-২০২১ উদযাপিত হয়েছে। শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় আত্ম উৎসর্গকারী সকল সামরিক ও অসামরিক শান্তিকর্মী সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাদের অসামান্য অবদানকে স্মরণীয় করে রাখতে ২০০২ সাল থেকে প্রতি বছর ২৯ মে দিবসটি ‘আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।
শনিবার (২৯ মে) দিবসটি উদযাপন উপলক্ষ্যে করোনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে খুলনা সার্কিট হাউজে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
দিবসটির যথাযথ মর্যাদা ও তাৎপর্য বিবেচনায় সকালে এক বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়। র্যালিতে কমান্ডার খুলনা নেভাল এরিয়াসহ খুলনা ও যশোর অঞ্চলে কর্মরত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও অন্যান্য সদস্যবৃন্দ, বাংলাদেশ পুলিশ, জাতিসংঘের স্থানীয় প্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সদস্যবৃন্দসহ মোট ১৮০ জন অংশগ্রহণ করেন। র্যালিটি সকাল সাড়ে ৭টা টায় শিববাড়ী মোড় হতে শুরু হয়ে খুলনা সার্কিট হাউজে এসে শেষ হয়। পরে খুলনা সার্কিট হাউজ প্রাঙ্গনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সকল আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত এবং শান্তিরক্ষায় জীবন উৎসর্গকারী সদস্যদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন কমান্ডার খুলনা নেভাল এরিয়া রিয়ার এডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী।
তিনি তাঁর বক্তব্যে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর অগ্রযাত্রা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ১৫ জন সামরিক পর্যবেক্ষক নিয়ে জাতিসংঘ ইরান-ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক দল অংশ নেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী সর্বপ্রথম শান্তিরক্ষা মিশন শুরু করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী ১৯৮৯ সালে নামিবিয়া ইউনিটেগ(জাতিসংঘের ট্রানজিশন সহায়তা গ্রুপ) এ প্রথমবারের মত অংশ নিয়ে শান্তিরক্ষা মিশনে যাত্রা শুরু করে। আজ অবধি, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর মোট ১,৭৭,০০০ গর্বিত সদস্য বিশ্বের ৪০টি দেশে ৪৪টি মিশন সফলতার সাথে সম্পন্ন করেছে। একই সময়ে, বাংলাদেশ পুলিশের মোট ২০,৩১৬ গর্বিত সদস্য ২৩টি দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করে। বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতিসংঘের পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় এ মহান দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং বাংলাদেশ পুলিশের ১৫৩ জন কর্মকর্তা ও সদস্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
পরে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর এই অসামান্য সাফল্যের ভূয়সী প্রশংসা করেন। পরিবর্তিত বিশ্বের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সদস্যরা বিচক্ষণতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দেশের জন্য আরও সুনাম বয়ে আনবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সবশেষে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।