বিশ্বের সবার চোখ এখন শক্তিশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন

coroa

Kbdnews ডেস্ক:   বিশ্বের সবার চোখ এখন শক্তিশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন তার দিকে। স্পটলাইটে জো বাইডেন, যিনি হতে চলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট। পায়ে পায়ে মার্কিন ক্ষমতার অলিন্দ হোয়াইট হাউসের দিকে এগিয়েছেন তিনি। সবচেয়ে বয়স্ক মার্কিন প্রেসিডেন্টই শুধু হবেন না তিনি, হবেন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ভোটের অধিকারীও।
ক্ষমতাসীন কোনো প্রেসিডেন্টকে হারানোর রেকর্ড মার্কিন দেশে খুব বেশি নেই। অতীতে মাত্র পাঁচজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা পাননি। বাইডেন বহুল আলোচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে তাকে ৬ষ্ঠ জনে পরিণত করতে চলেছেন। যদিও প্রকাশিত ফল অনুযায়ী ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেন এগিয়ে আছেন ৫০ ইলেকটোরাল ভোটে। আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি এ পর্যন্ত পেয়েছেন ২৬৪ ভোট। আর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প পেয়েছেন ২১৪ ইলেকটোরাল ভোট। নির্বাচিত হতে মাত্র ৬ ভোট প্রয়োজন বাইডেনের। কিন্তু যে ছয়টি রাজ্যের ফল এখনো প্রকাশিত হয়নি।

বাইডেন জিততে চলেছেন এমন একটি পরিস্থিতে, যখন বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের তোপে পৃথিবীর শীর্ষ আক্রান্ত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শাসিত হচ্ছিল একজন রগচটা ও ‘আনপ্রেডিকটেবল’ প্রেসিডেন্টের শাসনে। অর্থনীতি বিপন্ন, সামাজিক বিভাজন তীব্র আর সাংস্কৃতিক অবিশ্বাসের মেরুকরণ আক্রান্ত করেছিল বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশটিকে। একটি আশাবাদ ও আস্থার প্রতীক হয়ে তখনই ঘটলো জো বাইডেনের নীরব উত্থান, যার জন্ম ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর পেনসিলভানিয়ার স্ক্রানটনে।

ব্যাটলগ্রাউন্ড জর্জিয়ায়ও ভোটের ব্যবধানে ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে গেছেন ডেমোক্র্যাটদলীয় প্রার্থী জো বাইডেন। ১৬ ইলেকটোরাল ভোটের রাজ্যটিতে জয়ী হলেই তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হবেন।

গতকাল শুক্রবার মার্কিন গণমাধ্যম বলছে, ভোট গণনা এখনো বাকি আছে। এর আগে ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই রাজ্যে পাঁচ শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পেসখানে ভোট গণনা শুরু হলে প্রথম দিকে ট্রাম্পের থেকে পিছিয়ে ছিলেন বাইডেন। কিন্তু শেষের দিকে এসে ৯১৭ ভোটে এগিয়ে গেছেন।

এ রাজ্যে ভোট পড়েছে ৪৯ লাখ ৫৮ হাজার ১৯১টি। তার মধ্যে ৯৯ শতাংশ ভোট ইতোমধ্যে গণনা করা হয়েছে। শতাংশের হিসাবে দুজনেই এখন পর্যন্ত পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ করে ভোট। প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য একজন প্রার্থীকে ৫৩৮ ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ২৭০টি পেতে হবে। বাইডেন ইতোমধ্যে ২৬৪টি পেয়ে এগিয়ে আছেন তার প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে।

উইসকনসিন ও মিশিগানে বিজয়ের মাধ্যমে হোয়াইট হাউসে যাওয়ার পথ সহজ করে নেন সাবেক এ ভাইস প্রেসিডেন্ট। গত বুধবার রাতভর চেষ্টার পর উসকনসিনের ভোট গণনা শেষ করেন কর্মকর্তারা। রাজ্যটির ১০ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট রয়েছে।

যদিও ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই অনেকটা আজগুবি কায়দায় নিজের বিজয় ঘোষণা করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে বসে দেশটির গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বারবার সমালোচনা করে যাচ্ছিলেন তিনি।

নির্বাচনের ফল তার কাছ থেকে চুরি করে নেয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন ট্রাম্প। যদিও নিজের এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করতে পারেননি এই রিপাবলিকান। নির্বাচন কর্মকর্তাদের সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, তারা আমার কাছ থেকে নির্বাচন চুরি করে নিচ্ছেন। এদিকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা শুক্রবার থেকে সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিরাপত্তা জোরদার করবে বলে খবর প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, গতকাল শুক্রবার জো বাইডেন ভাষণ দিতে পারেন, এমন তথ্য গোয়েন্দা সংস্থাকে জানিয়েছেন বাইডেনের এজেন্টরা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসের মুখপাত্র ক্যাথরিন মিলহোয়ান এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেছেন, তার সংস্থা শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা সম্পর্কে মন্তব্য করে না। এ বিষয়ে জো বাইডেনের সহযোগীরাও কথা বলতে রাজি হননি।

জো বাইডেন ও তার নির্বাচনী প্রচারণার দল ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের একটি কনভেনশন সেন্টারে অবস্থান করছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এখনো জয়-পরাজয়ের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও গন্তব্যের খুব কাছেই পৌঁছে গেছেন ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী জো বাইডেন। ফল ঘোষণার বাকি থাকা পাঁচ অঙ্গরাজ্যের চারটিতে ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও নেভাদায় এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ার মধ্যে নেভাদা, পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, জর্জিয়া ও আলাস্কার ভোটের ফলাফল এখনো মেলেনি। এগুলোতে এখনো ভোট গণনা চলছে।

এর মধ্যে পেনসিলভানিয়ায় ২০টি, নর্থ ক্যারোলাইনায় ১৫টি, জর্জিয়ায় ১৬টি, আলাস্কায় তিনটি ও নেভাদায় ছয়টি মহামূল্যবান ইলেকটোরাল ভোট আছে। নেভাদায় জয় পেলে আকাঙ্ক্ষিত ছয়টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোটই হতে পারে বাইডেনের হোয়াইট হাউসে যাওয়ার চাবিকাঠি।

অন্যদিকে, আবারো প্রেসিডেন্ট হতে হলে ট্রাম্পকে নেভাদাসহ পাঁচটি অঙ্গরাজ্যের সবকটি ইলেকটোরাল ভোটই পেতে হবে।

শিক্ষাজীবনে ডেলাওয়ারে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান পড়েন বাইডেন। তার রয়েছে সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ডিগ্রিও। জো বাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীনই বিয়ে করেন নিলিয়া হান্টারকে ১৯৬৬ সালে। তাদের তিন সন্তান, জোসেফ বাইডেন, রবার্ট হান্টার ও নাওমি ক্রিস্টিনা।

ব্যক্তিগত যে তীব্র বেদনা বাইডেনের রয়েছে, তাহলো বিয়ের মাত্র ৬ বছরের মাথায় ১৯৭২ সালে স্ত্রীকে হারানো। ক্রিসমাস ট্রি আনতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার। দুর্ঘটনায় মারা যান তার মেয়ে নাওমিও। ২০১৫ সালে তার বড় ছেলের মৃত্যু হয় ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে। জীবনের একটি বড় সময় তিনি স্বজন হারানোর শোকে ডুবে ছিলেন। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর ১৯৭৩ সালে বাইডেন বিয়ে করেন জিল ট্রেসিকে। তাদের সংসারে রয়েছে এক মেয়ে, অ্যাশলে বেস্নজার।

পারিবারিক বিষাদ অতিক্রম করে অতি সন্তর্পণে রাজনীতির শীর্ষে আরোহণ করেছেন বাইডেন। রাজনীতি তার মনে ও কাজে মিশেছিল যৌবনেই। শিক্ষাজীবনের শেষেই রাজনীতিতে সক্রিয় হন তিনি। ১৯৭০ সালে ডেলাওয়ারের নিউ ক্যাসল কাউন্টির কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হন জো বাইডেন। মাত্র ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় তার। মাত্র ৩০ বছর বয়সে বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী পঞ্চম সিনেটর। ডেলাওয়ার থেকে মোট ছয়বার সিনেটর নির্বাচিত হন তিনি। সিনেটের বিচার কমিটিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা আইনসহ যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি আইন প্রণয়নে পালন করেন দায়িত্ববান ভূমিকা। ২০০৭ সালে বারাক ওবামার সঙ্গে রানিং মেট হিসেবে রাজনীতির সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যান জো বাইডেন। তিনি ছিলেন বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৬ সালে ডেমোক্রেট দলের মনোনয়ন পাওয়ার সুযোগ ছিল তারই। কিন্তু তখন সরে দাঁড়ান তিনি। হিলারি ক্লিনটন নির্বাচন করে হারেন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালে সেই নির্বাচনেই অবতীর্ণ হলেন বাইডেন একই প্রার্থীর বিরুদ্ধে এবং ট্রাম্পকে হারিয়ে করলেন বাজিমাৎ।

কেমন মানুষ বাইডেন, তা জানার জন্য মুখিয়ে আছে সারা বিশ্ব। বিশ্বের এক নম্বর দেশের এক নম্বর মানুষটির বিষয়ে জানার আগ্রহ স্বাভাবিক। ‘আমেরিকান স্বার্থের প্রতীক’ বলা হয় তাকে। বাইডেন পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক আমেরিকান সিনেট কমিটিতে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। সিনেটের এই কমিটির সভাপতি হিসেবে ২০১২ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের ইরাক যুদ্ধে যাবার বিষয়টিকে অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল তারই ওপর। ইরাক যুদ্ধেও বাইডেনের সমর্থন ছিল জোরালো। তবে তিনি পরে মার্কিন সেনাদের বিদেশে অবস্থানের বিরোধিতা করতে শুরু করেন। আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী বৃদ্ধির বিরুদ্ধেও ছিলেন তিনি। সর্বোপরি, তিনি মার্কিন স্বার্থের একজন রক্ষক হবেন, তা বলাই বাহুল্য।

Post a Comment

Previous Post Next Post