অনলাইনের মাধ্যমে ইলিশ বাসায় বাসায় পৌঁছে দিয়ে জমজমাট ব্যবসা করেছেন অনেকে। বহু বছর পর ইলিশের প্রাচুর্য দেখে ভাবতে ইচ্ছে করছে সত্যিই কী ফিরে আসছে রুপালি ইলিশের ঐতিহ্যের দিন! দুষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠা ইলিশের সরবরাহ এবার বেড়েছে। ইলিশের উৎপাদন বাড়িয়ে বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে বিশ্ব উদাহরণ।
গবেষকরা বলছেন, ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ প্রথম। মৎস্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ডফিশের গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। ইলিশ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের মোট ইলিশের ৮৬ শতাংশই উৎপাদিত হচ্ছে বাংলাদেশে। মাত্র চার বছর আগেও এই উৎপাদনের হার ছিল ৬৫ শতাংশ। বাংলাদেশের ইলিশের খ্যাতি তার অসাধারণ স্বাদ ও গন্ধের কারণে। তবে এর পুষ্টিগুণও যথেষ্ট। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, ইলিশে রয়েছে পর্যাপ্ত প্রোটিনের পাশাপাশি ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড যা রক্তের কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃৎপি-কে সুস্থ রাখে। ইলিশে রয়েছে শিশুদের মেধাবর্ধক উপাদান ডেকাসো হেক্সানয়েড এসিড। এছাড়াও রয়েছে আয়োডিন, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, নিয়াসিন, ট্রিপ্টোফ্যান, ভিটামিন বি-১২ ভিটামিন ডি, জিংক জাতীয় উপকারী খাদ্য উপাদান।
ইলিশ নিয়ে গ্রামবাংলায় ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ছড়া, কবিতা, শ্লোক, প্রবাদ, কথকতা, উপকথা। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ববাংলায় একটি ছড়া বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল- ‘ইলিশ মাছের তিরিশ কাঁটা, বোয়াল মাছের দাঁড়ি/ ইয়াহিয়া খান ভিক্ষা করে/ শেখ মুজিবের বাড়ি।’ জাতীয় মাছ ইলিশ বলে কথা। এক হিসাবে দেখা গেছে, মৌসুম ছাড়া এক জোড়া ইলিশ কিনতে প্রথম শ্রেণীর এক কর্মকর্তার বেতনের ১০ শতাংশ ব্যয় করতে হয়। স্বাদে-গন্ধে এর অতুলনীয় স্বাতন্ত্র্যের জন্যই বাঙালির রসনা-পার্বণে ঐতিহ্যের স্মারক হয়ে ঠাঁই নিয়েছে ইলিশ।
বাংলার মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের সংসারে এক মাসে এক হাজার টাকার বেশি মাছ কেনার সামর্থ্য কটি পরিবারের আছে। উৎপাদন বাড়লেও দিন দিন সাধারণের নাগালের বাইরে চলে গেছে বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশ।
ব্রিটিশ গবেষক হ্যামিল্টন বুকানন ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গোপসাগরে মাছ নিয়ে গবেষণার পর্যায়ে ইলিশকে হিলসা নামকরণ করেন। পরবর্তী সময়ে ফিশার ও বিয়ানিক নামের দুই গবেষক ইলিশকে ‘টেনুয়ানোসা’ ভুক্ত করেন। বিশ্বে পাঁচ প্রজাতির টেনুয়ানোসা পাওয়া যায়। যার মধ্যে তিন প্রজাতি বাংলাদেশে মেলে। ইলিশ (টি-ইলশা), চন্দনা ইলিশ (টি-টলি) ও গুর্তা ইলিশ (এইচ-কি-লি)। এর মধ্যে বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশ বিশ্বখ্যাত ইলিশ। মৎস্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ইলিশের ৬টি অভয়াশ্রম পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা করা হবে। ইলিশ অভয়াশ্রম সংলগ্ন ১৫৪টি ইউনিয়নের জেলেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১ হাজার ২৩২টি সভার আয়োজন করা হবে। এছাড়া ৬০টি নানা ধরনের কর্মশালার আয়োজন করা হবে। অভিযান পরিচালনার জন্য ১৯টি বোট কেনাসহ মা ইলিশ সংরক্ষণে ১৩ হাজার ৪০০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। জেলে পরিবারে বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ১৮ হাজার জেলেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।