স্টাফ রিপোর্টার : রাস্তাঘাট, ঝোপঝাড় এমনকি ডাস্টবিনে পরিত্যক্ত অবস্থায় মাঝে মাঝেই মিলছে নবজাতক। কিন্তু কোনো সূত্র না থাকায় একটি ঘটনারও কূলকিনারা করা যায়নি। পুলিশ বলছে, জাতীয়ভাবে ডিএনএ ব্যাংক করা গেলে সহজেই পরিচয় জানা যাবে। সমাজবিজ্ঞানী ও আইনজীবীদের মতে, যে সংস্থাগুলো শিশুদের লালন-পালন করে, কথিত বাবা-মার উচিত শিশুকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে না দিয়ে সরাসরি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা।
অল্প ক’দিন আগের কথা। হেমন্তের শেষ বিকেল পেরিয়ে হিমেল সন্ধ্যার আগে আগে রাজধানীর কুড়িল সড়কে নেমে আসে বর্বরতার রাত। কে বা কারা কাপড়ের ব্যাগের ভেতর রেখে যায় ফুটফুটে এক ছেলে সন্তান। সেদিন ওই সড়কে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট সমরেশ ম-ল।
ট্রাফিক সার্জেন্ট সমরেশ ম-ল বলেন, ‘আমি যখন দেখছি ব্যাগের ভেতরে তখন আমার পুরা শরীর একটা ঝাঁকি মেরে উঠেছে। ভালো-মন্দ বিচার করার আর চিন্তা হয়নি। তখন আমার একটাই চিন্তা হচ্ছিল বাচ্চাটা কতক্ষণ না খেয়ে আছে, হাসপাতাল নিতে হবে আগে তারপর বাঁচাইতে হবে।’
ব্যাগ খুলতেই কেঁদে ওঠে নবজাতক। একইভাবে শাহবাগ ফুটপাতে বাস কাউন্টারের বক্সের ভেতর থেকে পাওয়া যায় নবজাতক। ঢাকা মেডিকেলে ক’মাস আগে কুকুরের মুখে দেখা যায় আরো একটি নবজাতক। তার ক্ষীণ কান্নার আওয়াজে ছুটে আসেন ক্যান্টিনের কর্মচারীরা।
একজন কর্মচারী বলেন, ‘কুকুর ওইদিক থেকে বাচ্চাটা নিয়ে আসে।’
এভাবে কেবল অক্টোবরেই রাজধানীতেই উদ্ধার করা হয় ৪ নবজাতক। এর মধ্যে দুটি জীবিত আর দুটি ছিল মৃত। গোয়েন্দা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলছেন, যদি দেশের সকল নাগরিকের ডিএনএ ব্যাংক তৈরি করা সম্ভব হয় তবে ফেলে যাওয়া শিশুটি কার তা সহজেই জানা সম্ভব।
ডিএমপি গোয়েন্দা (উত্তর) বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, এখন যে কেউ একটা অপরাধ করে যাচ্ছে যে আমি তো কিছু রেখে গেলাম না। কিন্তু তখন তো তার এই জিনিস মনে পড়বে আমার তো এই জিনিস ওখানে রাখা আছে। চাইলে আজ হোক বা ১০ বছর পরে হোক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ কারণে আমাকে ধরতে পারে। নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করা আইনজীবী বলছেন, কথিত এসব বাবা-মা রাস্তায় ফেলে না দিয়ে শিশুটিকে সঠিক উপায়ে দত্তকও দিতে পারেন।
বাংলাদেশ আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী বলেন, ‘যে সমস্ত সংগঠনরা কাজ করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে এবং সেখানে শিশুদের জন্ম হওয়া ও ভলান্টিয়ারি দিয়ে দিতে পারে।’ সাধারণত অনৈতিক সম্পর্কের ফসল এসব শিশু। কিন্তু উচ্চবিত্তের ক্ষেত্রে গর্ভপাতের উদাহরণ থাকলেও নিম্নবিত্ত এবং ভবঘুরে মানুষদের সেই সতর্কতা নেই। সাধারণত কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে পরিবার অভিযোগ নিয়ে হাজির হয় পুলিশের কাছে। কিন্তু যখন পরিবারই নিজ সন্তানকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়, তখন অভিযোগ করার কেউ থাকে না। কিন্তু বাস্তব হলেও সত্যি যে এসব নবজাতকের কোনো দোষ নেই। জন্মই যেন তার একমাত্র দোষ। আর জন্মের পরই চলে মৃত্যুর আয়োজন।
সমাজে মানুষের নৈতিক অবক্ষয়ের ফলে ধর্ষণ বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। প্রতিদিন এ বিষয়ে অসংখ্য সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। সমাজে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে এসব ঘটনায়। নারী-শিশুদের নিরাপত্তায় সরকার ও জনগণ সজাগ ভূমিকা পালন করতে উদ্যোগী হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়ে উঠেছে ধর্ষণ নিয়ন্ত্রণে ও বন্ধে। আইন করা হয়েছে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-। একই সাথে সমাজে নর-নারীর মধ্যে অবাধ মিলন ও যৌনাচার বিস্তার ঘটছে। এটি সমাজের অন্তর্লীন প্রবাহের মধ্যে নর-নারীর ভালোবাসা ও মিলন ঘটছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। এই গোপন যৌনাচারের ফসল ওইসব শিশু। গর্ভবতী নারী, তরুণী বিবাহবহির্ভূত মিলনের ফসল ওইসব শিশুকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে হত্যা করে। গর্ভপাত ঘটিয়ে নিজেদের সম্মান ও লজ্জা গোপনে রাখে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবৈধ সন্তানকে গোপনে লোকচক্ষুর অন্তরালে ফেলে দেয় বিভিন্ন স্থানে। এসব ঘটনা সমাজে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বলে মনে করেন সমাজ বিজ্ঞানী ও সমাজ সচেতন ব্যক্তিরা।