ছবি :বি এম রাকিব হাসান, খুলনা
বি এম রাকিব হাসান, খুলনা:
জমি থাকলেও জলাবদ্ধ হওয়ায় খুলনার ‘২০ গ্রামের সাত হাজার’ কৃষককে অভাব-অনটনের মধ্যে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। জেলার তেরখাদা উপজেলার ভুতিয়ার বিলে স’ায়ী জলাবদ্ধতার কারণে ওই এলাকার কৃষক এই দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। জলাবদ্ধতার কারণে এবং জীবিকার অন্য উপায় না থাকায় অনেকে এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন। অনেকে পরিবর্তন করেছেন পেশা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম নিয়ে ভুতিয়ার বিল। এই বিলে জমির পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার হেক্টর। ১৫-২০ বছর ধরে বিলের অধিকাংশ জমি জলাবদ্ধতায় অনাবাদি রয়েছে। অধিকাংশ জমিতে চাষাবাদ না হওয়ায় সাড়ে সাত হাজার কৃষককে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
তবে গত দুই বছর শীতকালে ৬০০ হেক্টর জমিতে কিছু বোরো ধান চাষ ও সাচিয়াদহ ইউনিয়নের কড়রিয়া এলাকার পানির ওপর মৌসুমি সবজির চাষ হচ্ছে বলে তিনি জানান।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, যত দূর চোখ যায়, শুধু পানি। জন্মেছে কচুরিপানা, হোগলা, ঘাসসহ বিভিন্ন ধরনের আগাছা।
তেরখাদা উত্তরপাড়ার মতিয়ার রহমান বলেন, ১৫ বছরে ভুতিয়ার বিলের ওপর নিভর্রশীল কয়েকশ পরিবার জলাবদ্ধতার কারণে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। অনেকে আবার পেশা পরিবর্তন করেছে।
“চৌদ্দ পুরম্নষ ধরে আমরা কৃষিকাজ করে খাচ্ছি। কিন’ দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার কারণে আমাদের কৃষিকাজ ছেড়ে এখন অন্য কাজ করতে হচ্ছে।”
ওই এলাকার ষাটোর্ধ্ব মিজানুর ফকির বলেন, “পাঁচ বিঘা জমি থাকার পরও আমরা এখন অসহায়। হয়ত বিল আর কোনো দিন জলাবদ্ধতামুক্ত দেখে যেতে পারব না।”
একই গ্রামের মিরাজ শেখ জানান, তার আট বিঘা জমি অনাবাদি থাকায় তাদের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই আছে।
তিনি ড়্গোভ প্রকাশ করে বলেন, এত দিনে বিলটিকে কেউ জলাবদ্ধতামুক্ত করতে পারল না। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। কৃষকরা অনেকে দিনমজুরি করছেন, কেউ কেউ ভ্যান চালাচ্ছেন।
একসময় ভুতিয়ার বিলে আমন, ইরি ও আউশ চাষ হত বলে জানান হাড়িখালী গ্রামের কৃষক রহমত শেখ।
বল্ববদনা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে জমি জলাবদ্ধ থাকায় অনেক কষ্টে আছি। ছেলেমেয়ে নিয়ে খেয়ে-না-খেয়ে বেঁচে আছি। দুই ছেলে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় খাবার হোটেলে কাজ করছে।
বিলটিকে জলাবদ্ধতামুক্ত করার কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন তেরখাদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিমুল কুমার সাহা।