অর্থনীতি রিপোর্টার: করোনার মধ্যেও চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ছয় হাজার ২৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন কৃষকরা। যা মোট কৃষি ঋণের ১৪.২৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, আগের বছরে স্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্যে কৃষকরা চার হাজার ৩৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন। গত বছরের তুলনায় এবার কৃষরা ২ হাজার কোটি টাকা বেশি ফেরত দিয়েছেন। মহামারির কারণে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করার সুবিধা দেওয়া হলেও কৃষকরা সেই সুবিধা নিচ্ছে না। করোনার সময়ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, কৃষকরা ব্যাংক থেকে টাকা নিলে সেই টাকা ফেরত দেয়। এটা তাদের বৈশিষ্ট্য। এছাড়া ঋণের কিস্তি ফেরত না দিলে কোনও সমস্যা হবে না এমন খবর হয়তো অনেক কৃষক জানেনই না। ফলে কৃষকরা সমস্যার মধ্যে থাকলেও তাদের টাকা ফেরত দেওয়ার প্রবণতার কারণে আদায় বেড়েছে। আরেকটি কারণে ব্যাংকের কৃষি ঋণ আদায় বাড়তে পারে। সেটা হলো নতুন ঋণ দেওয়ার সময়ই কৃষকদেরকে আগের নেওয়া টাকা পরিশোধ করানো হয় বা কেটে রাখা হয়। এবার যেহেতু কৃষকদের মধ্যে বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, সেহেতু আদায়ও বেশি হয়েছে। তিনি বলেন, করোনাকালে যেসব কৃষক টাকা ফেরত দিচ্ছেন তাদেরকে বিশেষ প্রণোদনা দেওয়া উচিত। আর যেসব ব্যবসায়ী টাকা নিয়ে ফেরত দিতে চান না অথবা ফেরত দেওয়ার জন্য সময় চান তাদের কোনও প্রণোদনা দেওয়া উচিত নয়।
ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার মধ্যে কৃষিখাতের উৎপাদন ও সরবরাহ প্রক্রিয়া সচল থাকায় কৃষক সময় মতো কিস্তি ফেরত দিয়েছেন। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কৃষিখাতে ব্যাংকগুলোর পুঞ্জীভূত ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৪২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ চার হাজার ৯০৯ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ১১.১৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকগুলো কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ করেছে চার হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩২ শতাংশ বেশি। গতবছর একই সময়ে ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছিল তিন হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। প্রসঙ্গত, ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষকদের জন্য ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ রেখেছিল ব্যাংকগুলো। কিন্তু অর্থবছরে শেষে এ খাতের ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২২ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো
ঋণ বিতরণ করেছে এক হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ দিয়েছে দুই হাজার ৯০২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে তিন মাসে ঋণ বিতরণ করেছে চার হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ১৭.৮২ শতাংশ। এদিকে মহামারির সংকটে কৃষিখাতকে সর্বাত্মকভাবে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ প্রণোদনায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে। কৃষিখাতে স্বল্পসুদে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির জন্য আগামী একবছর সুদ ভর্তুকি দেবে সরকার।