ছবি :বি এম রাকিব হাসান,
বি এম রাকিব হাসান,: খুলনা:করোনা ভাইরাস ও চীনের দেওয়া শর্তের কারণে টানা প্রায় ছয় মাসের বেশি সময় চীনে কাঁকড়া রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে একদিকে যেমন সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিক ড়্গতিতে পড়েছেন কাঁকড়া শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত খামারি ও ব্যবসায়ীরা।
চীনে কাঁকড়া রপ্তানির ড়্গেত্রে ঘেরের বর্ণনা, পানি, তাপমাত্রা, পরিবেশ, চাষির তথ্য, কাঁকড়ার মান যাচাই, স্বাস’্য সনদসহ বেশ কয়েকটি নতুন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। জটিল এ শর্ত মেনে কাঁকড়া রপ্তানি কঠিন হয়ে পড়েছে। খুলনা, বাগেরহাট ও সাতড়্গীরায় কাঁকড়া শিল্পের সঙ্গে সংশিস্নষ্ট প্রায় ৫ লাখ মানুষ।
বাংলাদেশে করোনা প্রাদুর্ভাব শুরম্নর সময় থেকে এসব মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। উপায় না পেয়ে বিভিন্ন পেশা বেছে নিচ্ছেন অনেকে। চীন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও হংকংসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়। যার মধ্যে ৯০ শতাংশ কাঁকড়া শুধু চীনেই রপ্তানি হয়। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় হওয়ায় খুলনাঞ্চল কাঁকড়া উৎপাদনের জন্য অত্যনত্ম সমৃদ্ধ। এখানকার উৎপাদিত শিলা কাঁকড়া সুস্বাদু হওয়ায় বিদেশে প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, রপ্তানি হওয়া কাঁকড়ার ৮০-৮৫ শতাংশই প্রাকৃতিক উৎস থেকে আহরণ করা। বাকিটা খামারে পরিচর্যা করে (ফ্যাটেনিং) রপ্তানি হয়।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান দিপু এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার তপন সরকার বাংলানিউজকে বলেন, করোনা ভাইরাস পরীড়্গাসহ ঘেরের বর্ণনা, পানি, তাপমাত্রা, পরিবেশ, চাষির তথ্য, কাঁকড়ার মান যাচাই, স্বাস’্য সনদসহ চীন প্রায় ১৮টি শর্ত দিয়েছে। যার অনেকগুলো পূরণ করা অনেক কষ্টকর। এসব শর্তের মধ্যে এমনও পরীড়্গা আছে যা করতে ৬ দিন সময় লাগে। কিন’ খামার থেকে এনে পরীড়্গা করাতে ৬ দিন ধরে কাঁকড়া রাখলে তা মরে যায়। বা মান নষ্ট হয়ে যায়।
সংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যনত্ম তিন মাসে দড়্গিণাঞ্চল থেকে কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে ১২৮.৫২ মেট্রিক টন। করোনার কারণে জানুয়ারি-মার্চে রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫.৯৬ মেট্রিক টন।
খুলনার পাইকগাছা কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি দেবব্রত দাস বলেন, এক সময় চিংড়ি মাছ ছিল দড়্গিণাঞ্চলের মানুষের অর্থনীতির চালিকাশক্তি। সময়ের ব্যবধানে সেই দিন এখন ফুরিয়ে গেছে। এখন চিংড়ির স’ান সর্বত্র দখল করেছে জলজ প্রাণী কাঁকড়া।
ভাইরাসজনিত কারণে চিংড়ির মড়ক, উৎপাদন খরচ বেশি ও বিদেশে দরপতনের কারণে চিংড়ি চাষিরা তাদের পেশার পরিবর্তন করেছেন। কম খরচে কম শ্রমে ব্যাপকহারে কাঁকড়া চাষ করছেন খুলনাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। কিন’ চীনে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কাঁকড়ার মূল্য বাবদ ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকা আটকা পড়েছে। লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। সব মিলিয়ে কাঁকড়া ব্যবসায়ী, চাষি ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন এমন মানুষরা হতাশায় ভুগছেন। অচলাবস’া কাটিয়ে উঠতে কাঁকড়া রপ্তানির জন্য নতুন আনত্মর্জাতিক বাজার খোঁজার দাবি করছেন তিনি।