আমিআমিরুল ইসলাম অল্ডামল : উন্নত জাতের গ্যান্ডারী চাষ। খরচ কম, লাভ বেশী। গাংনীতে অর্থকরী ফসল হিসাবে গ্যান্ডারী আখ চাষে কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে। লাভজনক হলেও ধান চাষ ছেড়ে কৃষকরা বর্তমানে গ্যান্ডারী চাষে ঝুঁকে পড়েছে। গাংনী উপজেলায় সর্বত্র গ্যান্ডারী আখ চাষ দেখা না গেলেও বর্তমানে কমবেশী দেখা যা”েছ। অর্থকরী ফসল হিসাবে আখ চাষের গুরম্নত্ব কম নয়। দেশে তো বটেই বিদেশেও আখের রস ও চিনির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পাশাপাশি অন্যান্য ফসলের ন্যায় আখ চাষে বেশী লাভবান হ”েছ গাংনীর কৃষকরা। একসময় অসংখ্য আখের জমি গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে শোভা পেত ।বর্তমানে ইড়্গু ইন্সটিটিউট বা ইড়্গু গবেষণা কেন্দ্র অকার্যকর হওয়ায় এবং চাষীরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারনে চাষীরা আখ চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। একসময় কৃষকদের মধ্যে ধারণা ছিল ,গাংনী উপজেলার মাটি আবাদযোগ্য না বলে কেউ আগ্রহ দেখাতো না। কিন’ সে ধারণা ভেঙ্গে বর্তমানে গাংনীতে আধুনিক পদ্ধতি ও প্রযুক্তি ব্যবহারে গ্যান্ডারী আখ চাষের ব্যাপকতা বাড়তে শুরম্ন করেছে।
পাকিসত্মানী ২০৮জাতের গ্যান্ডারী চাষ করে সফলতার মুখ দেখা”েছ গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউপির অনত্মর্গত জুগিন্দা গ্রামের সফল চাষী নজরম্নল ইসলাম। গ্যান্ডারী চাষে সফলতার গল্প শুনতে জুগিন্দা গ্রামের চিৎলা ফার্ম সংলগ্ন মাঠে কথা হলো এরকম সফল চাষী নজরম্নল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, একজন ঠিকাদারের ইটভাঙ্গতে গাড়ি নিয়ে খুলনাতে গিয়েছিলাম। সেখানে পথের পার্শ্বে গ্যান্ডারী চাষ দেখতে পাই। তাদের সাথে আলাপ করে লাভজনক এই গ্যান্ডারী চাষে উদ্বুদ্ধ হই। সেখান থেকে ২০ হাজার টাকার বীজ সংগ্রহ করে বর্গাকৃত ২ বিঘা জমিতে চাষ শুরম্ন করি। আমি গত দু’বছর ধরে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি গ্যান্ডারী আখ চাষ করে আসছি। গ্যান্ডারী চাষে আমি লাভবান হয়েছি। গতবছর আমি আখের জমিতে সাথীফসল হিসাবে টমেটো সহ ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার আখ বিক্রি করেছি।সর্বসাকুল্যে খরচ হয়েছিল ৩ লাখ টাকা। এবছরও আমি বর্গাকৃত ২ বিঘা জমিতে গ্যান্ডারী চাষ করেছি। এবার সাথী ফসল হিসাবে গাঁজর ছিল। গাঁজর বিক্রি করে ৬৮ হাজার টাকা উপরন’ পেয়েছি। বর্তমানে আমি পরিচর্যা করে যা”িছ। আমার ২ বিঘা জমিতে ৩২ হাজারেরও বেশী আখ রয়েছ্ে।ইতোমধ্যে আখ ক্রেতারা প্রতিপিচ ২৩ টাকা হিসাবে ক্রয় করতে আগ্রহ দেথিয়েছে। তাতে
৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা হবে। আমি প্রতিপিচ ২৮/৩০ টাকা হলে বিক্রি করবো। দুই এক মাসের মধ্যে বাজার মূল্য ঠিক থাকলে আরও দাম বাড়লে ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বর্তমানে আমার দেখাদেখি অত্র এলাকার ৫ /৬ জন চাষী লাভজনক এই চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তিনি আরও জানান, আমাকে কখনও কৃষি অফিস থেকে কোনরকম পরামর্শ দেয়নি। কৃষি অফিসারের মাধ্যমে প্রশিড়্গন গ্রহন করে উন্নত প্রযুক্তিতে চাষ করলে আরও কৃষকরা লাভবান হতো। এই গ্যান্ডারী চাষ খুব লাভজনক। তাই আমার পরামর্শ, বেকার যুব সমাজের কাছে। তোমরা আখ চাষে এগিয়ে এলে তোমাদের বেকারত্ব কাটবে।
তিনি বলেন, বেলে দোঁয়াশ, পলি দোঁয়াশ ও উচু জমিতে গ্যান্ডারী আখ চাষ ভাল হয়। খরচ বিঘা প্রতি দেড় লাখ টাকার মত । গ্যান্ডারী আখ চাষে জৈব সার ও রাসায়নিক সার যেমন ,ইউরিয়া, ফসফেট, পটাশ ব্যবহার করতে হয়।খরচের মধ্যে লেবার খরচটাই বেশী। কারন সব সময়ই জমিতে আখের যত্নে লেবার নিয়োজিত রাখতে হয়। পোকা মাকড় তেমন ড়্গতি করে না। নিবীড় পরিচর্যার মাধ্যমে পোকা মাকড় ও রোগ বালাই দমন করা হয়। বাঁশের আঁড় করে তার টাঙ্গিয়ে আখ সোজা করে রাখতে হয়। ঝড় ঝাপটা না হলে বৈরী আবহাওয়া না হলে আখ ড়্গতি হয় না। তাই গ্যান্ডারী আবাদে ঝুঁকি কম। লাগানোর সময় ঠিকমত বালাইনাশক লিজেন্ট ব্যবহার না করলে ফলন কমে যায়। চাষের পর কীটনাশক হিসাবে ভিত্তাকু ও ক্যারাটে ব্যবহার করতে হয়।
পাকিসত্মানী ২০৮ জাতের গ্যান্ডারী, মিসরী দানা জাতের আখ চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা আগ্রহ দেখা”েছ।হাটে বাজারে গ্যান্ডারী ২০ থেকে ৫০ টাকা দামে বিক্রি হতে দেখা যায়। রস খুব সুস্বাদু। জন্ডিস ও ডায়াবেটিস রোগীরা বেশী বেশীরস পান করে থাকে। আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে গ্যান্ডারী চাষ লাভজনক হওয়ায় পর্যায়ক্রমে গ্যান্ডারী চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে নজরম্নল ইসলাম প্রত্যাশা করেন।