ডা. সাবরিনার মোবাইলে চাঞ্চল্যকর তথ্য " সাড়ে ১৫ হাজার ব্যক্তিকে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা ভুয়া রিপোর্ট

 

ডা. সাবরিনা

স্টাফ রিপোর্টার:  করোনাভাইরাসের পরীক্ষা নিয়ে রিপোর্ট জালিয়াতির মামলায় ৩ দিনের রিমান্ডে থাকা জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ও জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন ওরফে সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে জেকেজির বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রতারণার মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে জেকেজি হেলথ কেয়ারের চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনের বিষয়টি সরকারি এ চিকিৎসক সবসময় অস্বীকার করলেও তার মোবাইল ফোনে পাওয়া গেছে অসংখ্য এসএমএস, যেখানে তিনি নিজেকে জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীকে ডিবি কার্যালয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্ত কর্মকর্তারা।

dr sabnur
ডা. সাবরিনা চৌধুরীর মোবাইল ফোন

চেক করে এ ধরনের অনেক মেসেজ পেয়েছে পুলিশ। প্রতিটি মেসেজের শুরুতেই সাবরিনা নিজেকে জেকেজির চেয়ারম্যান পরিচয় দেন বলে, জিজ্ঞাসাবাদকারী ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) হারুন অর রশিদ জানিয়েছেন। তিনি জানান, ‘… আমি জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা বলছি। আমার প্রতিনিধি পাঠাচ্ছি। করোনা নমুনা সংগ্রহ করতে সব ধরনের সহযোগিতা চাই।’ ডা. সাবরিনা চৌধুরীর মোবাইল ফোন চেক করে এ ধরনের অনেক মেসেজ পেয়েছে পুলিশ। তিনি আরও জানান, সমপ্রতি জেকেজির ব্যাপারে বিশদ তদন্ত করতে গিয়েই উঠে আসে ডা. সাবরিনা ও তার প্রতারক স্বামী আরিফ চৌধুরীর নাম। এরপর গত রোববার ডা. সাবরিনাকে হৃদরোগ হাসপাতাল থেকে তার কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর তেজগাঁও থানার প্রতারণা মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়। মামলাটির তদন্তভার ডিবিকে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিন দিনের রিমান্ডে ডা. সাবরিনাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে ডা. সাবরিনা এরই মধ্যেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন। জেকেজির নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পেতে কারা কারা তাকে সহযোগিতা করেছে তাদের নাম বলেছেন। সরকার সমর্থক একটি চিকিৎসক সংগঠনের নেতার নামও তিনি বলেছেন। কিভাবে প্রতারণার ফাঁদ পেতে করোনা নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ দিতেন সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ন তথ্য দিয়েছেন। সূত্র জানায়, জেকেজির কোনো ট্রেড লাইসেন্স নেই। এরপরও কিভাবে প্রতিষ্ঠানটি করোনা নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পেল তার তদন্ত চলছে। সাবরিনার মোবাইল ফোন চেক করে সাতটি মেসেজ পাওয়া গেছে। প্রতিটি মেসেজে সাবরিনা বিভিন্ন মানুষকে ফোন করে জেকেজির চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করেছেন। তাকে সহযোগিতাকারী অনেক প্রভাবশালীর নাম জানা গেছে।

এর আগে, সরকারি চাকরির বিধিমালা লঙ্ঘন করে জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন প্রসঙ্গে হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের রেজিস্টার চিকিৎসক ডা. সাবরিনা দাবি করেছিলেন, অফিসিয়ালি তিনি জেকেজির চেয়ারম্যান নন। জেকেজির কর্মীরা তাকে মুখে মুখেই চেয়ারম্যান বলতেন। একই দাবি করেন তিনি পুলিশের কাছে। তদন্ত কর্মকর্তারা এরই মধ্যে প্রমাণ পেয়েছেন, জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে সব যোগাযোগ রক্ষা করতেন সাবরিনাই। সরকারের কাছ থেতে বিনা মূল্যে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি নিয়ে বুকিং বিডি ও হেলথকেয়ার নামে দুটি সাইটের মাধ্যমে টাকা নেয়া এবং নমুনা পরীক্ষা ছাড়াই ভুয়া সনদ প্রদান করেছে জেকেজি হেলথকেয়ার নামের প্রতিষ্ঠানটি।

ওই প্রতিষ্ঠানের সিইও স্বামী আরিফ চৌধুরীর সহায়তায় প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে ১৫ হাজার ৪৬০টি ভুয়া মেডিকেল রিপোর্ট প্রস্তুত ও সরবরাহ করে আট কোটি টাকা হাতিয়ে নেন ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধরী। জেকেজির বিরুদ্ধে মোট চারটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি প্রতারণার এবং আরেকটি থানায় হামলা, ভাঙচুর ও পুলিশের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগে করা হয়েছে। করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতিতে সাবরিনার স্বামী আরিফুলও বর্তমানে কারাগারে। গতকাল মঙ্গলবার তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হারুন-অর-রশীদ জানান, মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাই ডা. সাবরিনাকে গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এজন্য তাকে ডিবি কার্যালয়ে হস্তান্তর হয়েছে।

গত রোববার ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগীয় উপকমিশনারে (ডিসি) কার্যালয়ে ভুয়া সার্টিফিকেট দেয়াসহ নানা বিষয়ে ডা. সাবরিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এরইমধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলাও করেছে। সরকারি কর্মচারী বিধিমালা ভঙ্গের অভিযোগে গতকালই ডা. সাবরিনাকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। করোনার পরীক্ষার রিপোর্ট জালিয়াতির মামলায় গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ডা. সাবরিনাকে আদালতে নিয়ে ৪ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তেজগাঁও থানার তদন্ত কর্মকর্তা। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহিনুর রহমান ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে করোনা পরীক্ষা নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগে এক ভুক্তভোগীর করা মামলায় ডা. সাবরিনার স্বামী জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরীও গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন।

গত এপ্রিল মাস থেকে জেকেজি থেকে প্রায় ২৭ হাজার রোগীকে করোনার টেস্টের রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনা আইইডিসিআর-এর মাধ্যমে সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০ জনের নমুনা পরীক্ষা না করেই প্রতিষ্ঠানটির ল্যাপটপের মাধ্যমে ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করে রোগীদের দেয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জব্দ করা ল্যাপটপ থেকে এসবের প্রমানও পেয়েছে।

তেজগাঁও থানা পুলিশ জানিয়েছে, জেকেজির মাঠকর্মীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে বাংলাদেশি প্রত্যেক রোগীর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা করে নিতো। আর বিদেশি রোগীদের কাছ থেকে নিতো ১০০ ডলার করে।

 

dr sabnur

Post a Comment

Previous Post Next Post