স্টাফ রিপোর্টার : মাসের ব্যবধানে কমলেও বছরের ব্যবধানে চাল, ডাল, তেল, চিনি, আদা, পেঁয়াজ, রসুনসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বেশিই রয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বংলাদেশের (টিসিবি) প্রতিবেদনেই এই তথ্য উঠে এসেছে। মহামারি করোনাভাইরাস, রোজা ও ঈদের প্রভাবে রাজধানীর বাজারগুলোতে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছিল। তবে ঈদের পর চাহিদা কমায় সব ধরনের পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে। কিন্তু এরপরও বছরের ব্যবধানে এখনও প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেশিই আছে।
চাল: টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে নাজির ও মিনিকেট চালের দাম ৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ কমে ৫৪ থেকে ৬৪ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এই দাম ৯ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। মাসের ব্যবধানে মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা চালের দাম ৬ শতাংশ কমে ৪৪ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর মোটা চাল ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৬ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। তবে বছরের ব্যবধানে মোটা চাল ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের চাল দাম বছরের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে।
আটা-ময়দা: গত এক মাসে প্যাকেট আটার দাম ১৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। বছরের ব্যবধানে প্যাকেট আটার দাম কমেছে ৭ দশিকি ১৪ শতাংশ। প্যাকেট ময়দার দাম এক মাসে ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং বছরের ব্যবধানে ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ কমে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে খোলা আটা ও খোলা ময়দার দাম বছরের ব্যবধানে বেড়েছে। বছরের ব্যবধানে খোলা আটার দাম ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়ে ২৮ থেকে ৩২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। খোলা ময়দার দাম বছরের ব্যবধানে ৪ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। তবে মাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ কমেছে।
ভোজ্যতেল: ভোজ্যতেলের মধ্যে বছরের ব্যবধানে সব থেকে বেশি দাম বেড়েছে সুপার পাম অয়েলের। সুপার পাম অয়েলে ১৩ দশমিক ৯৭ শতংশ বেড়ে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে। খোলা পাম অয়েল ৮ শতাংশ বেড়ে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা হয়েছে। খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১১ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়ে ৮৮ থেকে ৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এক লিটার সয়াবিন তেলের বোতল ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকা হয়েছে। আর বোতলের ৫ লিটারের সয়াবিন তেল ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ বেড়ে ৪৬৫ থেকে ৫২০ টাকা হয়েছে। এর মধ্যে মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের ১ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ৫ লিটারের বোতলের সয়াবিন তেলের ২ শতাংশ দাম কমেছে। বাকিগুলোর দাম মাসের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। ডাল: গত এক বছরে বড় দানার মসুর ডালের দাম ৩০ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। মাঝারি দানার মসুর ডাল ৫৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেড়ে ৯৫ থেকে ১১০ টাকা এবং ছোট দানার মসুর ডাল ২১ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়ে কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। মুগ ডাল ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ বেড়ে ৯০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ৪৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ দাম বেড়ে আলুর কেজি ২৬ থেকে ৩০ টাকা হয়েছে। তবে ছোলার দাম ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং অ্যাংকরের দাম ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ কমেছে। বছরের ব্যবধানে প্রায় সব ধরনের ডালের দাম বাড়লেও গত এক মাসে আলু বাদে সবকটির দাম কমেছে। আলুর দাম মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। অপরদিকে বড় দানার মসুর ডাল ২১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, মাঝারি দানার মসুর ডাল ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ, ছোট দানার মসুর ডাল ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং ছোলার ১০ দশমিক ৩৪ শতাংশ দাম কমেছে।
চিনি: করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রভাবে ও রোজায় কয়েক দফা বাড়লেও গত এক মাসে একাধিক দফায় কমে চিনির দাম। চলতি মাসেও এক দফা দাম কমেছে চিনির। এতে মাসের ব্যবধানে ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ কমে চিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকার মধ্যে। তবে বছরের ব্যবধানে চিনার দাম ১৬ দশমিক ৮২ শতাংশ বেশিই রয়েছে।
মসলা: বছরের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের দাম ৪১ দশমিক ৬৭ শতাংশ, আমদানি করা পেঁয়াজের ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ, দেশি রসুনের ৪০ শতাংশ, দেশি শুকনা মরিচের ৪৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ, আমদানি করা শুকনা মরিচের ৫৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, আমদানি করা আদার ১৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ, জিরার ১০ শতাংশ, দারুচিনির ৩৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ, এলাচের ২৬ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং ধনের ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ দাম বেশিই রয়েছে। বিপরীতে আমদানি করা রসুনের ১২ শতাংশ, দেশি হলুদের ২৬ দশমিক ৩২ শতাংশ, আমদানি করা হলুদের ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ, লবঙ্গের ৪০ শতাংশ এবং তেজপাতার ১৬ দশমিক ১৩ শতাংশ দাম কমেছে। এদিকে মাসের ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজের ২ দশমিক ৩০ শতাংশ, আমদানি করা পেঁয়াজের ১৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, দেশি রসুনের ৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ, আমদানি করা রসুনের ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ, দেশি শুকনা মরিচের ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ, আমদানি করা শুকনা মরিচের ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, দেশি হলুদের ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ, দেশি আদার ৩৪ দশমিক ২১ শতাংশ, জিরার ২০ শতাংশ, লবঙ্গের ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ, এলাচের ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং তেজপাতার ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ দাম কমেছে।
মাছ ও মাংস: মাছের দাম মাসের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে। আগের মতো রুই মাছ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা এবং ইলিশ মাছ ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে বছরের ব্যবধানে রুই মাছের ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং ইলিশ মাছের ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ দাম বাড়তিই আছে। মাসের ব্যবধানে অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। গরুর মাংস ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাসের ব্যবধানে অপরিবর্তিত থাকলেও বছরের ব্যবধানে গরুর মাংসের ২ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং খাসির মাংসের ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ দাম বেশি। গত এক মাসে বয়লার মুরগির দাম ৫ শতাংশ কমার পরও বছরের ব্যবধানে ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি রয়েছে।