স্টাফ রিপোর্টার : করোনা দুর্যোগেও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো (এনজিও) সাধারণ মানুষ থেকে কিস্তি আদায়ে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়। বরং কোনো কোনো এনজিও জোরপূর্বক কিস্তি আদায় করছে। এনজিওর কিস্তি দিতে গিয়ে অনেকে সহায় সম্বল হারাচ্ছে। যদিও নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি গত ২৩ মার্চ ৬ মাসের জন্য এনজিও ঋণের কিস্তি শিথিল করেছে। জুন পর্যন্ত ঋণগ্রহীতা কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে তাকে খেলাপি বা বিরূপমানে শ্রেণিকরণ করা যাবে না। অথরিটির ওই নির্দেশের পরও সারাদেশে ছোট বড় অনেক এনজিও ঋণের কিস্তি আদায় করে যাচ্ছে। অথচ করোনা দুর্যোগে সরকার সারাদেশে ৩ কোটি মানুষকে ত্রাণ সহযোগিতা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এনজিওগুলো ওই মানুষের কাছ থেকেই জোরপূর্বক কিস্তি আদায় করছে। যাকে ভুক্তভোগীদের অনেকেই অমানবিক মনে করেছে। ভুক্তভোগী এবং মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি
অথরিটি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রাণঘাতী করোনায় মানুষ ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছে। কাজকর্ম বন্ধ। খাবার জোগাড় করতেই অনেকে হিমশিম খাচ্ছে। এমন অবস্থায় ঋণের কিস্তি ওসব মানুষের জীবনকে আরো বেসামাল করে তুলছে। কারণ এমন পরিস্থিতিতেও দেশের বিভিন্ন স্থানে এনজিওগুলো গরিব ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে ঋণের কিস্তি আদায় করছে। এনজিওগুলোর ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তির টাকা আদায় মানে সাধারণ মানুষের জীবনে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’। করোনা ভাইরাসে মানবিক বিপর্যয়ের পরিস্থিতিতে মানুষ এখন চরমভাবে বিপন্ন। আর বিপন্ন মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে এনজিওগুলো উল্টো আরো জুলুম তৈরি করছে।
সূত্র জানায়, উন্নয়ন ও মানবিক সেবা এবং কল্যাণের নাম ভাঙ্গিয়ে গড়ে ওঠা এনজিওগুলোর মাঠকর্মীরা নীতি, নৈতিকতা ও বিবেক বিসর্জন দিয়ে কিস্তি আদায়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বিশ্ব ও বাংলাদেশব্যাপী চরম আতঙ্কের করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে দীর্ঘ মেয়াদে সরকারি ছুটি চলছে। করোনা পরিস্থিতিতে সরকারি পর্যায়ে নানা ধরনের সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ঋণ মওকুফ, বকেয়া ও কিস্তি আদায়ের সময় বাড়ানো, বিলম্বের জন্য জরিমানা বাতিল ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, গরিব মানুষকে ৬ মাসের খাবার ও অর্থ সহায়তা ছাড়াও আরো অনেক সহায়তার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এনজিওগুলো বিপদাপন্ন মানুষের কাছ থেকে কিস্তি আদায় করা গ্রহণযোগ্য নয় বলেই অনেকে মনে করেন। সূত্র আরো জানায়, দেশে করোনা মহামারী দেখা দেয়ার পরই মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি একটি সার্কুলার জারি করে। ওই সার্কুলারে বলা হয়, বর্তমানে করোনা ভাইরাসজনিত কারণে বিশ্ব বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দেশের সার্বিক অর্থনীতির এ নেতিবাচক প্রভাবের ফলে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের ঋণগ্রহীতাদের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি বিধিমালা, ২০১০-এর বিধি ৪৪ অনুসরণে ১ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে ঋণের শ্রেণীমান যা ছিল। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ওই ঋণ তার চেয়ে বিরূপমানে শ্রেণীকরণ করা যাবে না।
এদিকে এনজিওগুলোর কিস্তি আদায় প্রসঙ্গে ফেডারেশন অব এনজিওস ইন বাংলাদেশের (এসএনবি) ও ব্যুরো বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালন সভাপতি মো. জাকির হোসেন Kbdnewsকে জানান, ঋণের কিস্তি আদায় সব এনজিও আগামী ৩১ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছে। এই সময়ের মধ্যে কোন এনজিও ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে কিস্তি আদায় করতে পারবে না। যদি কেউ করে থাকে তাহলে তা অথরিটির বাইরে গিয়ে করছে। আঞ্চলিক কিছু ছোট এনজিও ঋণের কিস্তি আদায় করতে পারে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক অথরিটি থেকে যেসব এনজিও লাইসেন্সপ্রাপ্ত তারা কেউ কিস্তি আদায় করছে না। সারাদেশে প্রায় ৭শ’ এনজিও রয়েছে। তার মধ্যে ১৫ থেকে ২০টি এনজিও বড়। মূলত বড় এনজিওগুলোয় গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখে। ধনী মানুষের জন্য ব্যাংক খোলা আছে। কিন্তু গরিব মানুষের জন্য মাইক্রো ফাইন্যান্স ইনস্টিটিউট (এমএফআই) খোলা থাকলে করোনা পরিস্থিতিতে গরিব মানুষ সুবিধা পেত। তাদের হাতে কিছু টাকা থাকতো। অনেক ঋণগ্রহীতা মোবাইল বা ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে কিস্তি পরিশোধ করতে চান। কিন্তু সাধারণ ছুটির কারণে তারা তা করতে পারছে না। আবার অনেকে তাদের সঞ্চয়ের টাকাও তুলে নিতে চান- কিন্তু অফিস বন্ধ থাকার কারণে সে কাজটিও তারা করতে পারছে না। অফিস খুলে গেলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। সব মিলে একটা বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে অফিস খুলে গেলে এই সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে।