বাজার । ছবি: সংগৃহীত
নিত্যপণ্যের চড়া দামে ভোক্তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার, নয়াবাজার বৃহস্পতিবার ঘুরে ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ এসব বাজারে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৪০-২৫০ টাকায়। প্রতিকেজি দেশি নতুন পেঁয়াজ (মুড়িকাটা) বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়। মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০-২১০ টাকায়।
মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৬০ টাকা কেজি। এছাড়া চীন থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। আর পেঁয়াজ পাতা বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ টাকা।সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত এক মাসে দেশি পেঁয়াজ ৯৫ দশমিক ৯২ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজ ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে।
এদিন বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছে ৪৮-৫০ টাকা, যা দাম বৃদ্ধির আগে বিক্রি হয়েছিল ৪২-৪৪ টাকা কেজি। নাজিরশাল বিক্রি হয়েছে ৫৫-৫৮ টাকায়, যা আগে ৪৪-৪৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। বিআর-২৮ বিক্রি হয়েছে ৩৮-৪০ টাকায়, যা দাম বাড়ার আগে বিক্রি হয়েছে ৩৪-৩৫ টাকা কেজি।এছাড়া মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা চাল বিক্রি হয়েছে ৩৮ টাকায়, যা আগে প্রতিকেজি ৩২-৩৩ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
টিসিবির তথ্যমতে- বাজারে গত এক মাসে মোটা চাল ৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। আর সরু চাল ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে।অন্যদিকে খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ৮৫-৯০ টাকায়, যা দাম এক মাস আগে ছিল ৭৮-৮০ টাকা। পাম অয়েল লিটারে ৫ টাকা বেড়ে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টিসিবি বলছে, এক মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর পাম অয়েল ৮ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান kbdnews.comকে বলেন, বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের একাধিক সংস্থা থাকলেও সেগুলো তেমনভাবে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না। যার কারণে বাজারে একাধিক নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। তাদের মনিটরিং কার্যক্রম এখন পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ। যার কারণে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার টিসিবির দৈনিক বাজার মূল্যতালিকায় দেখা গেছে, গত এক মাস ধরে মসুরের ডাল সর্বোচ্চ ৪ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। আটা ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ময়দা ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হয়েছে ১৬০-১৮০ টাকায়, যা এক মাস ধরে ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। শুকনা মরিচ বিক্রি হয়েছে ৩২০ টাকা কেজি, যা ১৬ দশমিক ১৮ শতাংশ বেশ দরে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ বাড়লেও দাম ঊর্ধ্বমুখী। বাজারে প্রতিকেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৬০-৮০ টাকায়। করলা প্রতিকেজি ১২০ টাকা, আধাপাকা টমেটোর কেজি ১২০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৮০ টাকা, শিম ৬০-৮০ টাকা, ফুলকপি ৩০-৬০ টাকা, পাতাকপি ৪০-৬০ টাকা, নতুন আলুর কেজি ৮০-১০০ টাকা, ধনেপাতা ১৮০-২০০ টাকা, মুলার কেজি ৬০ টাকা, গাজর ৮০-১০০ টাকা, শালগম ৭০-৮০ টাকা, সবুজ বরবটি ৬০ টাকা, লাল বরবটি ৯০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি পিস লাউ বিক্রি হয়েছে ৬০-৮০ টাকায়, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা কেজি, ঢেঁড়স ৬০ টাকা কেজি, কচুর লতি ৬০ টাকা ও ধুন্দল ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
কারওয়ান বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. হাসান বলেন, বাজারে প্রত্যেকটি পণ্যের দাম বেড়েছে। কোনো কিছুতেই হাত দেয়া যাচ্ছে না। এমনভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। নিত্যপণ্যের দামে লাগাম টানতে পারছে না সরকার। বাজার মনিটরিংও চোখে পড়ছে না। সবাই যেন গা ছেড়ে দিয়ে কাজ করছে। এতে বিক্রেতারাও সুযোগ বুঝে বেশি দামে বিক্রি করছে। তাই আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের ভোগান্তি বাড়ছেই।নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. কিবরিয়া বলেন, এক কেজি সবজি তাও ৬০ টাকার নিচে মিলছে না। পেঁয়াজের দাম বেশি তাই পাতাসহ ছোট পেঁয়াজ ১০টা ৭০ টাকায় কিনলাম। এছাড়া ভোজ্যতেলসহ একাধিক নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। কিন্তু আয় আগের মতোই আছে।তিনি বলেন, সংসার চালাতে এখন কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।