বি এম রাকিব হাসান : সুন্দরবনে হরিণ শিকারে যাওয়ার সময় ফাঁদ ও ৩টি ট্রলারসহ ৬০ রাসমেলার যাত্রীকে আটক করেছে বন বিভাগ।
মঙ্গলবার ভোরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের জয়মনি এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
বনবিভাগ জানায়, আটকদের কাছ থেকে হরিণ শিকারের ফাঁদ, দা, কুড়াল ও চুলাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে বনরক্ষীরা। আটককৃতদের সবার বাড়ি রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, প্রতিবছরই রাসমেলাকে কেন্দ্র করে হরিণ শিকারিরা তৎপর হয়ে থাকে। শিকারিরা রাসমেলার যাত্রী ছদ্দবেশ ধারণ করে। এবারও তাই হচ্ছে। রাসমেলা উপলক্ষে কয়েকজন হরিণ শিকারের জন্য সংঘবদ্ধ হয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই সুন্দরবনে যাচ্ছে, এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জয়মনি এলাকায় অভিযান চালায় বন রক্ষীরা। এ সময় তিনটি ট্রলারকে চ্যালেঞ্জ করলে তারা দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তাদের তাড়া করে ট্রলার জব্দ করা হয়। ট্রলারে তল্লাশি করে হরিণ শিকারের ফাঁদ, দা, কুড়াল, চুলাসহ ৬০ জন শিকারিকে আটক করা হয়। তারা রাসমেলার যাত্রী হিসেবেই যাচ্ছিলো। আটকদের সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস’া প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এ বন কর্মকর্তা।
রাসমেলায় যেতে বন বিভাগের
আটটি নিরাপদ রুট নির্ধারণ
খুলনা ব্যুরো: প্রতি বছরের মতো এবারও রাস পূর্ণিমা উপলক্ষে আগামী ১০ থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী সুন্দরবনের দুবলারচরে ঐতিহ্যবাহী ‘রাস পূর্ণিমা পুণ্যস্নান’ অনুষ্ঠিত হবে। পুণ্যস্নানে নিরাপদে যাতায়াতের জন্য দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জন্য সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ আটটি পথ নির্ধারণ করেছে। এ সকল পথে বন বিভাগ, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর টহল দল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।
অনুমোদিত আটটি পথ হলো: বুড়িগোয়ালিনী, কোবাদক থেকে বাটুলানদী-বলনদী-পাটকোষ্টা খাল হয়ে হংসরাজ নদী হয়ে দুবলারচর। কদমতলা হতে ইছামতি নদী, দোবেকী হয়ে আড়পাঙ্গাসিয়া-কাগাদোবেকী হয়ে দুবলার চর। কৈখালী স্টেশন হয়ে মাদার গাং, খোপড়াখালী ভারানী, দোবেকী হয়ে আড়পাঙ্গাসিয়া-কাগাদোবেকী হয়ে দুবলার চর। কয়রা, কাশিয়াবাদ, খাসিটানা, বজবজা হয়ে আড়-য়া শিবসা-শিবসা নদী-মরজাত হয়ে দুবলার চর। নলিয়ান স্টেশন হয়ে শিবসা-মরজাত নদী হয়ে দুবলার চর। ঢাংমারী অথবা চাঁদপাই স্টেশন-তিনকোনা দ্বীপ হয়ে দুবলার চর। বগী-বলেশ্বর-সুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলার চর হয়ে দুবলার চর এবং শরণখোলা স্টেশন-সুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলার চর হয়ে দুবলার চর।
দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের ১০ থেকে ১২ নভেম্বর এ তিন দিনের জন্য অনুমতি প্রদান করা হবে এবং প্রবেশের সময় এন্ট্রি পথে নির্দিষ্ট ফি প্রদান করতে হবে। যাত্রীরা নির্ধারিত রুটের পছন্দমতো একটি মাত্র পথ ব্যবহারের সুযোগ পাবেন এবং দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবেন। বনবিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া অন্য কোথাও নৌকা, লঞ্চ বা ট্রলার থামানো যাবে না। প্রতিটি ট্রলারের গায়ে রং দিয়ে বিএলসি অথবা সিরিয়াল নম্বর লিখতে হবে। রাস পূর্ণিমায় আগত পুণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট হতে প্রাপ্ত সনদপত্র সাথে রাখতে হবে। পরিবেশ দূষণ করে এমন বস্তু, শব্দযন্ত্র বাজানো, পটকা ও বাজি ফোটানো, বিস্ফোরক দ্রব্য, দেশীয় যে কোন অস্ত্র এবং আগ্নেয়াস্ত্র বহন থেকে যাত্রীদের বিরত থাকতে হবে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে অবস’ানকালীন সবসময় টোকেন ও টিকেট নিজের সঙ্গে রাখতে হবে। প্রতিটি লঞ্চ, নৌকা ও ট্রলার-কে মেলা প্রাঙ্গণে কন্ট্রোলরুমে আবশ্যিকভাবে রিপোর্ট করতে হবে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ সকল তথ্য জানিয়েছেন।