জাকির হোসেন ব্যাপারী। ছবি: সংগৃহীত
২০০৫ সালে বয়স ছিলো ২১ বছর। ওই বছরই প্রথম বিয়ে করেন জাকির হোসেন ব্যাপারী। এরপর থেকে প্রতিবছরে কয়েকটি করে বিয়ে করেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজেকে লন্ডনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী হিসেবে পরিচয় দেওয়া জাকির হোসেন ব্যাপারীর গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার দুর্গাপুর।
তেজগাঁও থানার পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জাকির বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন সময় নিজেকে অবিবাহিত এবং সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। তাদের মধ্যে অনেককে তিনি বিভিন্ন সময় বিয়ে করেন। বিয়ের পর জাকির নববধূর বাসায় থাকতেন এবং কৌশলে তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন। এসব বিয়ের খবর তিনি কোনো স্ত্রীকে জানতে দিতেন না। সবারই ব্যক্তিগত ভিডিও ধারণ করতেন। কেউ প্রতিবাদ করলে ওই সব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখাতেন। প্রতারণার ফাঁদ পেতে তরুণীদের সর্বস্ব লুটে নিতে জাকিরের রয়েছে এক সিন্ডিকেট চক্র। সংঘবদ্ধ ওই চক্রে রয়েছে নকল কাজী ও মৌলভি। এ ছাড়া চক্রের কিছু নারী-পুরুষ নিজের মা-বাবা ও ভাইবোন বানিয়ে জাকির তরুণীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেন। এভাবে বিয়ের নামে গত দুই বছরে জাকির ২২ ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী নারীকে ধর্ষণ করেছেন। সম্প্রতি ফেসবুকে বিয়ের নামে আরেকটি প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন জাকির। অবশ্য এবার তিনি নিজেই ফাঁদে পড়েন, আগেভাগেই প্রতারণার শিকার নারী বুঝে ফেলেন জাকিরের উদ্দেশ্য।ওই তরুণী জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে গত ৩১ অক্টোবর জাকিরের সঙ্গে তার পরিচয়। এর পর ভুলিয়ে-ভালিয়ে তার সঙ্গে জাকির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। গত ৭ নভেম্বর নিজস্ব সিন্ডিকেটের হুজুর ডেকে তাকে বিয়েও করেন। নানা বিপদ বা সমস্যার কথা বলে জাকির ওই তরুণীর কাছ থেকে ইতোমধ্যেই প্রায় ৪৫ হাজার টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন। ভুক্তভোগী তরুণীদের মাধ্যমে পাওয়া গেছে জাকিরের তিনটি বিয়ের কাবিনসহ তার প্রতারণায় ব্যবহৃত অসংখ্য ছবি, ফেসবুকের চ্যাটবক্সে কথোপকথনের স্ক্রিনশট ও ভিডিও ক্লিপ।তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম অর রশিদ তালুকদার বলেন, জাকির হোসেন ব্যাপারী একজন প্রতারক। তার বিয়ে করা এক স্ত্রীসহ একটি চক্র আছে। তিনি প্রতি বছর বিয়ে করেন। তারপর শ্বশুর বাড়ি থেকে নানা কায়দায় অর্থ হাতিয়ে নেয়। এটাই তার মূল ব্যবসা। ব্যক্তিগত বিষয় হবার কারণে তার এখন পর্যন্ত বিয়ের সংখ্যাটা আমরা বলতেছি না। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ২৮৬টি বিয়ের প্রসঙ্গে তিনি আমাদের ‘কিছু কম’ করেছেন বলে জানান।’
তিনি আরো বলেন, মিরপুরের এক নারী জাকিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করে। সেই প্রেক্ষিতে আমরা তাকে গ্রেপ্তার করে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়েছিলাম। রিমান্ড শেষে আজকে দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।