স্টাফ রিপোর্টার: যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী ওরফে সম্রাটকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গতকাল রোববার ভোর ৫টার দিকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার সহযোগী আরমানকেও গ্রেফতার করে র্যাব। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দারা জানান, কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামের এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন সম্রাট। গভীর রাতে বাড়িটি ঘিরে রাখে র?্যাব। পরে সম্রাটকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। সম্প্রতি রাজধানীতে ক্লাবের আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে র্যাবের হাতে ধরা পড়েন সম্রাটের ডান হাত হিসেবে পরিচিত যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরপরই ধরা পড়েন রাজধানীর টেন্ডার কিং আরেক যুবলীগ নেতা জি কে শামীম। এ ২ জনই অবৈধ আয়ের ভাগ দিতেন সম্রাটকে। তারা গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাটের অবৈধ ক্যাসিনো সাম্রাজ্য নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছিলেন, অপেক্ষা করুন, যা ঘটবে দেখবেন। আপনারা অনেক কিছু বলছেন, আমরা যেটি বলছি ‘সম্রাট’ হোক আর যেই হোক, অপরাধ করলে তাকে আমরা আইনের আওতায় আনব। আমি এটি এখনও বলছি-সম্রাট বলে কথা নয়, যে কেউ আইনের আওতায় আসবে। আপনারা সময় হলেই দেখবেন।
২ অক্টোবর চলমান অভিযানের মধ্যে সম্রাটকে নিয়ে একটা ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। তিনি গ্রেফতার হয়েছেন নাকি বিদেশে চলে গেছেন? এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, আমি তো বলেছি ধৈর্য ধরুন, অপেক্ষা করুন, দেখতে পাবেন।
এর আগে ক্যাসিনোকা-ে অভিযুক্ত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান পরিচালনার পর থেকেই সম্রাট কোথায় অবস্থান করছেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। সম্প্রতি মতিঝিলের ইয়ংমেনস, ওয়ান্ডারার্স, মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়াচক্র ও বনানীর গোল্ডেন ঢাকা ক্লাবে র্যাব অভিযান চালিয়ে সেগুলো সিলগালা করে দেয়। এ অভিযানের ধারাবাহিকতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্লাব ও জুয়ার আসরে অভিযান চালায় পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় মোহামেডান, আরামবাগ, দিলকুশা, ওয়ান্ডারার্স, ভিক্টোরিয়া ও ফকিরেরপুল ইয়ংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো ছিল। এর মধ্যে ইয়ংমেনস ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। বাকি ৫টি ক্লাবে ক্যাসিনো চালাতেন সম্রাটের লোকজন। সম্রাট নিজে ক্যাসিনো দেখাশোনা না করলেও তার ক্যাসিনো চালাতেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের যে এলাকা থেকে সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়েছে সেই কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামটি সীমান্তের কাছাকাছি। ধারণা করা হচ্ছে, সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন তিনি। ক্যাসিনো সম্রাট খ্যাত যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের কার্যালয়ে একটি পিস্তল, বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ ও ২টি ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়া গেছে। এদিকে বন অধিদফতরের পরিদর্শক আবদুল্লাহ আস-সাদিক বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১২ অনুযায়ী অবৈধভাবে বন্যপ্রাণীর চামড়া সংরক্ষণ আইনবহির্ভূত ও শাস্তিযোগ্য। এ আইনের ৩৪-এর ‘খ’ ধারা অনুযায়ী শাস্তি সর্বোচ্চ ৬ মাস ও ১ লাখ টাকা জরিমানা। আটক সম্রাটের কার্যালয় থেকে ২টি ক্যাঙ্গারুর চামড়া পাওয়ায় বন অধিদফতরের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি। গতকাল রোববার দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে তালা ভেঙে সম্রাটের কার্যালয়ে ঢুকে অভিযান শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৬টা পর্যন্ত অভিযান চলে।
এদিকে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে সংগঠনটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ।