স্টাফ রিপোর্টার : বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্যাতনের পরিকল্পনা হয় আগেই। ঘটনার একদিন আগেই এ নিয়ে বুয়েট ছাত্রলীগের সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপে খুনিদের কথোপকথন হয়। যেখানে আবরারকে পিটিয়ে হলছাড়া করার নির্দেশ দেয়া হয় বলে জানা গেছে। সেইসাথে ঘটনার একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায়ও উঠে এসেছে লোমহর্ষক সেই ঘটনায়। এদিকে ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহা ও মিজানকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে এরই মধ্যে দেখা গেছে আবরার হত্যায় খুনিদের তৎপরতা। তবে এই তৎপরতার একদিন আগেই ফেসবুকের সিক্রেট ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে আবরারকে নির্যাতনের নির্দেশ দেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন। গত ৫ অক্টোবর শনিবার দুপুর পৌনে ১টায় সিঙ্টিন ব্যাচকে মেনশন করে রবিন লেখেন : সেভেন্টিনের আবরার ফাহাদ। মেরে হল থেকে বের করে দিবি দ্রুত। ২ দিন টাইম দিলাম। পরদিন রোববার রাত ৭টা ৫২ মিনিট। সবাইকে হলের নিচে নামার নির্দেশ দেন মনিরুজ্জামান মনির। রাত ৮টা ১৩ মিনিটে আবরারকে নিজ কক্ষ থেকে ডেকে করিডোর দিয়ে দোতলার সিঁড়ির দিকে নিয়ে যান সাদাত, তানিম, বিল্লাহসহ কয়েকজন। এরপর রাত ১টা ২৬ মিনিটে ইফতি মোশাররফ সকাল ম্যাসেঞ্জারে লেখেন, মরে যাচ্ছে, মাইর বেশি হয়ে গেছে।
ভাইরাল হওয়া ওই ছবিতে দেখা যায়, রাত ১২টা ২৩ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে আশিকুল ইসলাম বিটু ২০১১ নম্বর রুমের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। এর প্রায় ৭ মিনিট পর তিনি বেরিয়ে যান। শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুমের ভেতরে ওই রাতে আসলে কী ঘটেছিল আবরারকে নির্যাতনের প্রস্তুতি ও নির্যাতনের পরের ঘটনার বর্ণনা দিলেন প্রত্যক্ষদর্শী বিটু।
বিটু বলেন, মনির জেমি আর তানিমকে ফোন দিয়ে বলে আবরারকে ডেকে আনো ২০১১ নম্বর রুমে। পরে দেখলাম ২ জন ওর দুটা ফোন ও ল্যাপটপ চেক করছে। কোথায় আবরার লাইক দেয় বা কমেন্ট করে অথবা কাদের সাথে ম্যাসেঞ্জারে কথা বলে এগুলো নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। এরপরে আমি রুম থেকে বের হয়ে যাই। পরে ১২-৩০-এর দিকে আমি আবার রুমে আসি আমার ল্যাপটপ ও বই নিতে। আমি রুমের ভেতরে ঢুকে দেখলাম যে আবরার একদম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আছে। সেখানে আবরারের ব্যাচেরও ৭-৮ জন ছিল। পরে রুম থেকে বের হয়ে সকালকে প্রশ্ন করি, এমন কিভাবে হলো তখন মুনির উত্তর দিলো বললো যে অনিক ভাই মাতাল অবস্থায় একটু বেশি মারছে। তখন ওখানে থাকা আমার জন্য সুরক্ষিত না ভেবে তখনই আমি ওখান থেকে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে আসি। কিন্তু আবরারকে নির্যাতনের খবর কেন কাউকে জানাননি, এমন প্রশ্নের কোনো সদত্তর ছিলো না বিটুর। তিনি বলেন, এমন অনেক সময়ই হলে হয়, তবে আবরার যে মারা গেছে তাও না। তখনো ওকে মেডিকেলে নিয়ে গেলে হয়তো বাঁচানো যেত। ঘটনার রাতে ২০১১ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহার উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মিলেছে সিক্রেট মেসেঞ্জার গ্রুপে সক্রিয় থাকারও তথ্য। নিজ রুমে এমন হত্যাকা-ের পর থেকেই ছিলেন আত্মগোপনে। তিনি বলেন, আমি ২০১১ রুমে থাকি বলেই আমার নাম সবার সাথে যুক্ত হয়েছে।