বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি বরাদ্দকৃত সুযোগ সুবিধা থেকে। খাতা কলমে বরাদ্দ প্রাপ্তির কথা থাকলেও বাস্তবে কোন উপকরণ পায়নি এমন অভিযোগ করেছেন অনেক কৃষক।
এদিকে কৃষকদের সাথে একমত পোষন করেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, আমাদেরও জানানো হয় না অনেক তথ্য’।
কচুয়া উপজেলা কৃষি অফিসে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৪ টি প্রকল্পে প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শণী খামারের জন্য ১৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। এর মধ্যে ৫‘শ ৭০ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ ও ৭৫টি প্রদর্শণী করার কথা ছিল। এগুলোর সঠিক বাস্তবায়ণ না করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও অফিস সহকারি যোগসাযগে টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ কৃষক ও উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের।
কচুয়া উপজেলার বাধাল ইউনিয়নের শাখারীকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গিয়ে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি সাইনবোর্ড দেখা যায়। সাইনবোর্ডে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সবজি ও ফল বাগান প্রদর্শণী, ফসলঃ সবজি ও ফল লেখা দেখা যায়। কিন’ সাইনবোর্ডের পিছনে দেখা যায় আলুর চাষ হয়েছে। এ প্রদর্শণীর কৃষক বিবেক দাস জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শে আমি এখানে ফল ও সবজি চাষের জন্য জমি প্রস’ত করি। তারপর তারা আমাকে একটি সাইনবোর্ড দেয়। পরে আমি সংশ্লিষ্ট আরও উপকরণের জন্য যোগাযোগ করি, কৃষি অফিস বিভিন্ন অজুহাতে সময় ক্ষেপন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে বলেন আপনার যে ফসল করলে ভাল হয় সেই ফসল করেন। পরে আমি নিজ অর্থায়নে এখানে আলু চাষ করি।
ধোপাখালি ইউনিয়নের সানপুকুরিয়া গ্রামের উথান হালদার বলেন, আমার স্ত্রী অনন্যা হালদারের নামে একটি বসত বাড়িতে সবজি চাষ এর জন্য একটি প্রদশর্ণী খামারের জন্য জমি প্রস’ত করতে বলে। সেই অনুযায়ী আমি জমি প্রস’ত করি। কিন’ আমার স্ত্রীর অনুকূলে কোন উপকরণ বা টাকা পয়সা আমরা পাইনি।
কচুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের টেংরাখালি সোহাগ শিকদারের বসত বাড়িতে সবজি চাষের জন্য উপ-করণ দিবে বলে জমি প্রস’ত করতে বলে কিন’ কোন উপকরণ কৃষি অফিস থেকে দেয়নি।
রাড়ীপাড়া গ্রামের হায়দার আলী, যশোরদি গ্রামের আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ অনেকে বলেন, আমি, বোরো চাষের প্রদর্শনী খামার করেছিলাম, কিন’ সেখানে বরাদ্দের থেকে অনেক কম সার পেয়েছি। নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাদের সার প্রদানের কথা থাকলেও, অফিসের স্লিপ নিয়ে বিভিন্ন সারের ডিলারের কাছে গিয়ে আমাদের সার আনতে হয়।
খেসারি চাষী রুস্তম আলী মোল্লা ও তপন হালদার বলেন, খেসারি চাষ বিষয়ে আমাদের প্রশিক্ষণে বলা হয়েছে, এক একর জমিতে খেসারি চাষ প্রদর্শণী খামারে ৪ বছরে এক লক্ষ টাকার উপকরণ প্রদান করা হবে। কিন’ চাষের শুরুতে মাত্র ২০ কেজি খেসারি ডাল, দুইশ টাকা মূল্যের একটি ঐষধ ও নগদ দুই হাজার টাকা দিয়েই শেষ করেছে।
বাধাল ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সজল হালদার বলেন, অফিসের নির্দেশ মোতাবেক আমি বিবেক দাসকে জমি প্রস’ত করতে বলি এবং তাকে প্রদর্শণীর সাইনবোর্ডও প্রদান করি। তাকে কোন উপকরণ দিতে পারিনি। যার ফলে সে নিজ অর্থায়নে আলু চাষ করছেন।
এদিকে উপজেলা কৃষি অফিসের রেজিষ্ট্রারে কৃষকদের প্রদর্শণী খামারের উপকরণ ও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের তালিকা থাকলেও বাস্তবে অনেক কৃষক পায়নি। রেজিষ্ট্রার অনুযায়ী আন্ধারমানিক এলাকার উজ্জল কুমার বিশ্বাস, শ্যামলী রাণী হালদার, সাধনা রানী হালদার, নমিতা রাণী শিকদার, দুলালী রাণী গাইন, মিনতি রানী শিকদার টেংরাখালীর সোহাগ শিকদারসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা কোন উপকরণ পায়নি বলে জানান। ভুয়া কৃষক সাজিয়ে টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগও করেছেন কয়েকজন কর্মকর্তা।
এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পে কৃষকদের প্রশিক্ষণে কাঙ্খিত সংখ্যক কৃষক অংশ না নিলেও সম্পূর্ণ টাকা উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। প্রশিক্ষণে নিম্ন মানের উপকরণ ব্যবহার, নিম্ন মানের খাবার সরবরাহ ও শিডিউলের থেকে কম সংখ্যক ক্লাস গ্রহণেরমতও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে টাকা আত্মসাতের ঘটনাও ঘটেছে এ অফিসে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বলেন, আমরা সরাসরি কৃষকদের সাথে কাজ করি। কিন’ কোন প্রকল্পে কৃষকদের জন্য কি বরাদ্দ তা আমাদের জানানো হয় না। জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমাদেরকে সাত-পাচ বুঝিয়ে দেয়। টাকা আত্মসাত ও ভুয়া ভাউচার করে টাকা আত্মসাতের কথাও বলেন এ কর্মকর্তা