কঠোর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে পারে রাজপথে
গোল টেবিলের বৈঠকে লোকসানের ৬টি কারণ উল্লেখ
বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: খুলনাঞ্চলের পাটকল সেক্টর সংশ্লিষ্টরা ভাল নেই। শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি ও বেতন বকেয়ার পরিমান ৩৭ কোটি টাকা। অভাব অনটনে দিনাতিপাত করছেন তারা। আর মিল কর্তৃপক্ষ বলছেন আর্থিক সংকটের কারণে বেতন দিতে পারছিনা। অপরদিকে পাটকলগুলোর শ্রমিক নেতা, নাগরিক নেতা, মানবাধিকার ও স’ানীয় রাজনৈতিক নেতারা এক গোল টেবিলে রাষ্ট্রায়াত পাটকলগুলো লোকসানের পেছনে ৬টি কারণ উল্লেখ করেছেন।
গোলটেবিলে আলোচিত কারনগুলো হচ্ছে পাটকল প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে মেশিনগুলো বিএমআরই না করা, মৌসুমী পাট (কাঁচা মাল) ক্রয় না করা, পণ্য উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি, নতুন বাজার সৃষ্টি না হওয়ায় উৎপাদিত পণ্য মজুত থাকা, পাট শিল্পের ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত না হওয়া, মিলের যন্ত্রাংশ ও পাট ক্রয়ে দূর্নীতি।
এদিকে, শিল্প ও বন্দর নগরী খুলনার পাটকল শ্রমিক সেক্টরে শ্রমিক অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠেছে। যে কোন মুহুর্তে কঠোর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়তে পারে রাজপথে। জনদুর্ভোগের অশনি সংকেতে শংকিত হয়ে পড়ছে আমজনতা। উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পাটকল সেক্টর। বকেয়া পাওনার দাবীতে ফুসে উঠেছে খুলনার ৯ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারীরা।
খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের ৪ থেকে ৭ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে। আর কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ৮ থেকে ৪ মাসের বেতন বকেয়া। সব মিলিয়ে শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ৩৭ কোটি টাকা ৪৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা বকেয়া পড়েছে। এর মধ্যে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ ৩০ কোটি ৭৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা এবং কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বেতন বাবদ ৬ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মোঃ সোহরাব হোসেন বলেন, ঈদুল আযহার পূর্বে আংশিক দিলেও এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের কোন মজুরি পরিশোধ করা হয়নি। ফলে আর্থিক কষ্টে ভুগছে শ্রমিকরা। মিলের উৎপাদিত কিছু পণ্য বিক্রি হলেও তা শ্রমিকদের না দিয়ে পাটক্রয় খাতে ব্যয় করা হচ্ছে। সরকার ডিসেম্বর পর্যন্ত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করবে বলে শুনেছি। তবে কবে নাগাদ পরিশোধ করবে তা জানতে পারিনি।
এদিকে পাটকল শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ৮ বছরে পাট শিল্পে সরকারের দেয়া উন্নয়নের বুলি ফাঁকা আওয়াজে রুপান্তরিত হয়েছে। খুলনাঞ্চল দেশের অন্যতম পাট শিল্পের সূতিকাগার হিসেবে স্বাধীনতার পর থেকে চিহ্নিত। শুধু এই অঞ্চলেই নয় পাট শিল্প রক্ষায় গোটা দেশে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অগ্রযাত্রার রোড ম্যাপ ছিল অদূরদর্শীতায় ভরপুর। যে কারণে সরকারী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারী পাটকলগুলোও লোকসানী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে খুলনাঞ্চলে বেশকিছু ব্যক্তি মালিকানাধীন পাটকল গড়ে উঠলেও দেশের বিভিন্ন স’ানের ১২টি পাটকল ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধের পথে রয়েছে আরও অন্তত ১২টি পাটকল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ‘সোনালী আঁশ’ খ্যাত পাটকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পাটকলগুলো অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেন।
সূত্রমতে, মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্ধ পাটকল চালু এবং রুগ্ন শিল্পকে চাঙ্গা করতে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা ও প্রকল্প হাতে নেয়। এটি এ অঞ্চলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিও ছিল। দু’টি পাটকল চালু করলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দূরদর্শীতার অভাবে তা সঠিক সময় আলোর মুখ দেখতে পারেনি। গত ৮ বছর প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের চেয়ে আশার আলোয় গাধার সামনে মুলা ঝুলিয়ে রাখার মত করে রাখা হয়েছে। এই শিল্পে অগ্রগতির চেয়ে অনেকক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের উদসীনতায় অবনতিই হয়েছে বেশি। ফলে এই শিল্পের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা পড়েছে চরম বিপাকে।
অবশ্য ব্যক্তি মালিকানাধীন পাটকলের সাথে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা কমে যাওয়া, চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি এবং সরকারের দেয়া সাবসিডির পরিমাণ কমিয়ে দেয়ায় দেশের বেসরকারী পাটকলগুলোতে দৈন্যদশা চলছে।
প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক আবুল কাসেম বলেন, চলতি সপ্তাহ নিয়ে ৮ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া পড়তে যাচ্ছে। ঈদের পূর্বে আংশিক মজুরি প্রদান করলেও ঈদের পর আর কোন মজুরি পরিশোধ করা হয়নি। সরকার উন্নয়নের কথা বললেও শ্রমিকদের এখন নাই নাই ভাব। শ্রমিকরা দুর্বিসহ অবস’ায় রয়েছে। এ অবস’ার পরিত্রাণ চাই।
জেজে আই জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, আর্থিক সমস্যার কারণে শ্রমিকদের নিয়মিত মজুরি পরিশোধে হিমসিম খেতে হচ্ছে। মিলে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি না হওয়ায় এ সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে পাট ব্যবসায়ীরা প্রায় ২০ কোটি টাকা পাবে। তাদের পাওনা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। বিশ্ববাজারে পাটপণ্যের দর কমেছে।