চট্টগ্রাম বুরো: চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে জেএমবির একটি আস্তানায় (ভাড়া করা সেমিপাকা বাড়ি) সশস্ত্র অভিযান চালিয়েছে র্যাব। অভিযানে জঙ্গী ও র্যাব সদস্যদের সঙ্গে গুলি বিনিময় হয়েছে। র্যাবের জোরালো অভিযানের মুখে শেষ পর্যন্ত জঙ্গীরা টিকতে পারেনি। আস্তানা অভ্যন্তরে প্রচন্ড বিস্ফোরণের পর অভিযানে অংশগ্রহণকারী র্যাব সদস্যরা দুটি ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধার করেন। দুই জঙ্গীই পুরুষ এদের পরিচয় জানা যায়নি। র্যাব আস্তানার অভ্যন্তর থেকে কিছু অস্ত্রশস্ত্র ও হ্যান্ডগ্রেনেড উদ্ধার করেছে। র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই আস্তানায় জঙ্গী সদস্যরা চট্টগ্রাম আদালতে হামলাসহ বিভিন্ন স্থানে নাশকতার চক্রান্ত করছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে র্যাব আস্তানায় অভিযান চালায়।
র্যাবের জনসংযোগ বিভাগের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান দুপুরে ঘটনাস্থলে
গণমাধ্যম কর্মীদের ব্রিফিংকালে জানান, মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জে একটি ‘জঙ্গী আস্তানা’ ঘিরে র্যাবের অভিযানে অজ্ঞাতনামা দুটি ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে এ অভিযান শুরু হলে ব্যাপক গোলাগুলি ও কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়। এ সময় চট্টগ্রাম মহাসড়কে সবধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শুক্রবার সকাল নয়টায় ঢাকা থেকে বোমা ডিসপোজাল ইউনিট এসে আস্তানায় ঢুকে ছিন্নভিন্ন মরদেহ ও বোমা উদ্ধার করে। পরে এগুলো একটি নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে একসঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়।
কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বেলা পৌনে বারোটার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, বাড়িটিতে দুটি মরদেহ পাওয়া গেছে। ছিন্নভিন্ন মরদেহের পরিচয় মেলেনি। আস্তানা থেকে উদ্ধার হয়েছে একটি একে-২২ রাইফেল, পাঁচটি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড, তিনটি পিস্তল ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম। যেসব অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে তেমন অস্ত্র ঢাকায় হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার পর পাওয়া গিয়েছিল। তিনি জানান, চট্টগ্রাম আদালত ভবনে শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটানোর টার্গেট নিয়ে মীরসরাইয়ের এই বাড়িতে আস্তানা গড়ে নব্য জেএমবির একটি গ্রুপ।
র্যাব-৭ এর ফেনী ক্যাম্প অধিনায়ক শাফায়াত জামিল ফাহিম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা আস্তানাটি শুক্রবার ভোর রাতে ঘিরে ফেলি। তখন ভবনের ভেতর থেকে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়। আমরাও গুলি চালাই। এক পর্যায়ে কয়েকটি বিস্ফোরণও ঘটে। ‘চৌধুরী ম্যানশন’ নামে ওই বাড়িতে জঙ্গীদের অবস্থানের খবর ছিল র্যাবের কাছে। রাতে র্যাব সদস্যরা ওই বাড়ি ঘিরে ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই তা প্রমাণিত হয় ভেতর থেকে গুলি আসার মধ্য দিয়ে। তখন র্যাব দূরে সরে যায়। তারপর দীর্ঘক্ষণ গোলাগুলি চলে। ভোর চারটা নাগাদ জঙ্গীরা বড় ধরনের একটি বিস্ফোরণ ঘটায়।
এ র্যাব কর্মকর্তা জানান, বাড়িটিতে মোট পাঁচটি কক্ষ রয়েছে। বড় বিস্ফোরণটি ঘটার আগে তাদের আমরা আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা তা গ্রহণ করেনি। বড় ওই বিস্ফোরণের পর ঘরের ভেতর থেকে তাদের আর কোন সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। বেলা বারোটা পর্যন্ত প্রায় ৬ ঘণ্টা অভিযান পরিচালনার পর বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
র্যাব জানায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঠিক পাশে জোরারগঞ্জ থানার উত্তর সোনাপাহাড় গ্রামের চৌধুরী ম্যানশনের এই একতলা বাড়িতে এক নারী জঙ্গীসহ জেএমবির চার সদস্য অবস্থান করছে বলে তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। অভিযানে গোলাগুলির কারণে রাত সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ভোরের দিকে ওই বাড়িতে কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটনার পর গোলাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। পরে নিয়ন্ত্রিত যানবাহন চলাচল শুরু হয়। জঙ্গীরা একটি নাশকতার চক্রান্ত করছে, এমন খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতে জোরারগঞ্জের ওই বাড়ি চিহ্নিত করে ঘিরে ফেলা হয়। জঙ্গীরা টের পেয়ে ঘরের ভেতর থেকে গুলিবর্ষণ এবং কয়েকটি আইইডির বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে আরও কিছুক্ষণ গোলাগুলি চলতে থাকে। ভোরের দিকে ভেতরে কয়েকটি বিস্ফোরণের পর আর কোন শব্দ শোনা যায় না। ঘরটির টিনের চাল উড়ে গেছে। র্যাবের কাছে গোয়েন্দা তথ্যে এখানে চার জঙ্গী ছিল। এদের মধ্যে ছিল এক নারী জঙ্গীও। তবে অভিযানের পর নিশ্চিত হওয়া যায় যে, নারীসহ বাকি ২ জন আগেই অন্যত্র চলে গেছে।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মিমতানুর রহমান জানান, বাড়ির মালিক জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াই বাড়িটি ভাড়া দিয়েছিল। সে জন্য মালিক ও কেয়ারটেকারকে আটক করা হয়েছে। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ভাড়া নেয়। তবে বাড়িটি ভাড়া দেয়ার সময় কেয়ারটেকার ও বাড়ির মালিক জঙ্গীদের কাছ থেকে কোন জাতীয় পরিচয়পত্র নেয়নি। ফলে ভুয়া পরিচয়ে বাড়িটি সহজেই ভাড়া নেয় জঙ্গীরা।