ফেনী ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলন কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার হুমকির মুখে ফসলি জমি ও বাড়ি-ঘর

 

রাজস্ব

ফেনী থেকে মফিজুর রহমান : মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদী। ভারত থেকে বয়ে আসা এ নদী যোগ হয়েছে বঙ্গোপসাগরের মোহনায়। এ তিনটি নদী থেকে ইজারা ছাড়াই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে করে একদিকে সরকার যেমন কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে আশপাশের ফসলি জমি ও ঘর-বাড়ি হুমকির মুখে পড়ছে।
সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের দেড়পাড়া এলাকায় মুহুরী নদীর বুকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। পাইপ দিয়ে তুলে পাশের একটি জমিতে জমা করা হচ্ছে। গত প্রায় বেশ কিছুদিন ধরে এখান থেকে দুটি ড্রেজারে বালু তোলা হয়। প্রতিদিন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ ফুট বালু তোলা হয় বলে কর্মরত শ্রমিকরা জানান। কোনো ইজারা না থাকলেও এ নদী থেকে দেদারছে বালু উত্তোলন করছেন উপজেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সামছুল হক ভূঞা রাশেদ ও সাধারণ সম্পাদক শামীম মজুমদার। এস.এম কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে বালু বিক্রি করা হয়। এস.এম কনস্ট্রাকশনের রশিদে থাকা মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ‘রং নাম্বার’ বলে সংযোগ কেটে দেয়া হয়। একইভাবে বালু উত্তোলন করা হয় সদর ইউপির উত্তর দৌলতপুর গ্রামে। জমি বিলীন হয়ে বৈদ্যুতিক খুঁটির ধারে পৌঁছেছে। ঐ গ্রামের বাসিন্দা ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানার এসআই জসিম উদ্দিন জানান, তিনি ১৪ শতাংশ নাল জমি খরিদ করেছেন। অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলনের কারনে আশপাশের জমি হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া উত্তর বরইয়া, জগতপুরে মুহুরী-কহুয়ার মোহনায় ও শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, মাঝে মাঝে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ড্রেজার মেশিন ধ্বংস কিংবা জব্দ করা হলেও দু’একদিন বিরতি দিয়ে ফের পুরোদমে শুরু হয় অবৈধ বালু উত্তোলন।

ফুলগাজী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবিনা ইয়াসমিন ফেনীর সময়কে জানান, উপজেলার মুহুরী নদীর ৪টি খ- স্পট বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেয়া হতো। ২০১৭ সাল থেকে ইজারা বন্ধ রয়েছে। জানা গেছে, পরশুরামে ৮টি বালুমহালের মধ্যে বিলোনীয়া সংলগ্ন মুহুরী নদীর স্থানটি ইজারা রয়েছে। আর কোনো বালুমহাল ইজারা দেয়া না হলেও মুহুরী নদীর বাউরখুমা, বাউরপাথর, সুবারবাজার, কহুয়া নদীর খ-ল কাপ্তান বাজার, সিলোনীয়া নদীর মির্জানগর ইউনিয়নের ডিএম সাহেব নগরের দুটি স্পট, নিজ কালিকাপুর, জয়ন্তীনগরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে একাধিক ড্রেজার মেশিনে বালু তোলা হচ্ছে। এসব স্পট থেকে ক্ষমতাসীন দলের নেতারাই বালু উত্তোলনে জড়িত বলে স্থানীয়রা জানান। পরশুরাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসিনা আক্তার ফেনীর সময়কে জানান, একটি ছাড়া আর কোনোটিতে বালুমহাল ইজারা নেই।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কুল প্রদীপক চাকমা ফেনীর সময়কে বলেন, বালু উত্তোলনের বিষয়টি তার জানা নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post