স্টাফ রিপোর্টার :পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান হত্যাকা-ে জড়িত এজাহারভুক্ত ৪ আসামিকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিবি’র যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন এক সাংবাদিক সম্মেলনে
এ তথ্য জানিয়েছেন।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলো_ মিজান শেখ, মেহেরুনেসা স্বর্ণা ওরফে আফরিন, সুরাইয়া আক্তার ওরফে কেয়া এবং ফারিয়া বিনতে মীম। সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৮ জুলাই সবুজবাগ এলাকার বাসা থেকে বনানী গিয়ে নিখোঁজ হন পুলিশের বিশেষ শাখার ইন্সপেক্টর মামুন ইমরান খান। পরদিন তার বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর মঙ্গলবার গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম রহমত উল্লাহ নামে মামুনের এক বন্ধুকে গ্রেফতার করে। তার দেয়া তথ্য মতে, ঐ দিনই গাজীপুরের কালীগঞ্জের উলুখোলা রাইদিয়া এলাকার রাস্তার পাশে নির্জন একটি বাঁশঝাড় থেকে তার পোড়া লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর রাজধানীর বনানীতে দায়ের করা হয় একটি হত্যা মামলা। ঐ মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পরদিন রহমত উল্লাহকে আদালতে সোপর্দ করে ৭ দিনের রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রহমত উল্লাহকে গ্রেফতারের পরই মামুন হত্যাকা-ের পুরো চিত্র জানতে পারে পুলিশ। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকা-ে জড়িত সবাইকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়। এরপর ধারাবাহিক অভিযানে একে একে হত্যাকা-ে অংশ নেয়া এবং লাশ গুমের সাথে জড়িত সবাইকে গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। ঘটনার পরপরই আসামিরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল।
সূত্র জানায়, ঘটনার পরপরই প্রথমে গ্রেফতার হওয়া রহমত উল্লাহর সূত্র ধরে যার জন্মদিনের কথা বলে মামুনকে বনানীর ২/৩ সড়কের ৫ নম্বর ভবনের এ-২ ফ্লাটে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কথিত সেই নারী মডেল আফরিনকে গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হয়। পরে ঐ বাসাটিতে যে দেহ ব্যবসা ও অশ্লীল ছবি তুলে প্রতারণার ফাঁদ বসিয়েছিল। সেই শেখ হৃদয় এবং তার স্ত্রী কথিত মডেল ও অভিনেত্রী সুরাইয়া আক্তার কেয়াকে আটক করা হয়। তাদের কাছে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একে একে আটক করা হয় মিজান, আতিক, রবিউল, ফারিয়া বিনতে মীম ও মাইশাকে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, বনানীর ঐ বাসাটি ভাড়া নেয়া হয়েছিল বিভিন্ন লোকজনের সাথে প্রতারণা করে অর্থ আদায় করার উদ্দেশ্যে। এ কারণে ঐ বাসায় কোনো ফার্নিচার ছিল না। এই চক্রটি সাধারণত কয়েক মাস ব্যবহারের পর অন্য কোনো এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে একই অপরাধ করে বেড়ায়। শেখ হৃদয় হলো এই গ্রুপের প্রধান। নজরুল ইসলাম রাজ নামে এক ব্যক্তি নিজের নামে বাসা ভাড়া নিয়ে শেখ হৃদয়কে দিয়ে এসব কাজ করাত।
হৃদয় তার স্ত্রী কথিত মডেল কেয়া, আফরিন ও আফরিনের বোন মাইশা ওরফে মীমকে ব্যবহার করত টোপ হিসেবে। বাসায় সব সময় দেখভাল করার জন্য নিয়োজিত ছিল দিদার। আর একটি শৃঙ্খলা বাহিনীর সাবেক তিন সদস্য আতিক, মিজান ও স্বপন নিয়মিত ঐ বাসায় যাতায়াত করত। এরা বিভিন্ন ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়ের কাজ করত। প্রতারণার অর্থ দুইভাগ করে এক ভাগ হৃদয়কে আর এক ভাগ ৩ জনের মধ্যে ভাগ করে নিত। হৃদয়ের অর্থ দেয়া হতো কথিত ৩ মডেলকে। এর আগেও এই বাসায় কয়েক ব্যক্তিকে ডেকে এনে তাদের অশ্লীল ছবি তুলে অর্থ আদায় করেছিল এই চক্রটি।
এদিকে জিজ্ঞাসাবাদে রহমত উল্লাহ দাবি করেছে, সংঘবদ্ধ চক্রটি তাকে টার্গেট করেছিল। কিন্তু তার সাথে মামুন ঐ বাসায় ঢোকায় তাদের ২ জনেরই ওপরই চড়াও হয়। একপর্যায়ে মারধরের কারণে মামুন মারা গেলে সে নিজে বাঁচাতে চক্রের সদস্যদের সাথে মিলে লাশ গুমে অংশ নেয়। পরে বস্তায় ভরে নিজের গাড়িতে করে লাশ গাজীপুরে নিয়ে যায়।