বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: তদবিরকারীদের নামের তালিকা’ টানিয়ে ব্যতিক্রম দৃষ্টান্ত স’াপন করেছে খুলনা সদর থানা। সদ্য টানানো এ তালিকায় স’ান পেয়েছে বেশ কয়েকজন তদবিরবাজের নাম। দেশের থানায় থানায় খুনি, সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, চোর-ডাকাত, ধর্ষক, নারী পাচারকারী, গ্রেফতারি পরোয়ানা ইত্যাদি অপরাধীদের তালিকা টানাতে দেখা যায়। কিন’ ‘তদবিরকারীদের নামের তালিকা’ সম্ভবত এটাই প্রথম।
সদ্য টানানো এ তালিকা নিয়ে স’ানীয় অনেকের মধ্যেই তৈরি হয়েছে কৌতুহল। বিশেষ করে ওই তালিকায় কাদের নাম রয়েছে, তা জানার চেষ্টা করছেন তারা। এরই মধ্যে জনৈক নারী তদবিরকারী থানায় গিয়ে তালিকা দেখে দ্রুত সটকে পড়েন বলেও একটি সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইদানিং এই থানায় এক শ্রেণির তদবিরকারকদের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছিল। তাই অতিষ্ঠ হয়েই পুলিশ এ ধরণের তালিকা টানাতে বাধ্য হয়েছেন বলে স’ানীয়রা জানিয়েছেন।
সামপ্রতিক মাদকের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে আটকদের ছাড়াতে তদবিরকারীদের উপদ্রব থেকে বাঁচতেই তালিকাটি টানানোর উদ্যোগ নেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবির। তিনি একান্ত নিজস্ব ভাবনা থেকেই তালিকাটি টানিয়েছেন। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে টানানো নতুন এ তালিকাটি দেখে অনেকেই তাকে বাহবা জানাচ্ছেন।
মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সাধারণ সম্পাদক হাসান আহমেদ মোল্লা ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন, ‘খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অফিসে নতুন এক তালিকা চোখে পড়ল। এই তালিকার নাম ‘তদবির কারীদের নামের তালিকা’। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে প্রশ্ন করলাম এই তালিকার বিষয়ে- এটা আবার কি। থানায় অনেক ধরণের তালিকা রয়েছে এই তালিকাটা নতুন দেখছি। তিনি বললেন, এই তালিকার খাতাটি নতুন খোলা হয়েছে। জানতে চাইলাম এই নতুন খাতায় কতজনের নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে, সাথে সাথেই তিনি বললেন ৫/৭ জনের নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে। কোন মহিলা তদবিরকারীর নাম আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ এসেছিল একজন মহিলা, সম্ভবত মহিলাটি ওই তালিকার দিকে তাকিয়ে দ্রুত থানা ত্যাগ করেন।’
খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবির বলেন, ‘যে কোন অপরাধীর বিষয়ে তদবির করলে তার নাম এ তালিকায় উঠানো হবে। তবে, বিশেষ করে মাদকের বিরুদ্ধে করা তদবিরকারীদের নাম অবশ্যই এ তালিকায় যুক্ত করা হবে। ইতিমধ্যেই তালিকায় কয়েকজনের নামও উঠানো হয়েছে। তদবিরকারীদের ক্যাটাগরি সম্পর্কে তিনি বলেন, থানায় রাজনীতিক, সাংবাদিক বা অন্যকোন পেশার মানুষের খুব একটা তদবির লক্ষ্য করা যায় না। এ ক্ষেত্রে এক শ্রেণির চিহ্নিত দালাল বা তদবিরবাজ রয়েছে। যাদের কাজই হচ্ছে তদবির করে অর্থ কামানো। মূলত: তাদের নামই তালিকায় উঠানো হচ্ছে।’
হুমায়ূন কবির আরও জানান, মূলত: তদবিরকে নিরুৎসাহিত এবং তদবিরকারীদের সতর্ক করতেই নিজস্ব ভাবনা থেকে এ ধরণের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এটি কেএমপি কর্তৃপক্ষের কোন সিদ্ধান্ত নয়। তবে, সকল থানায় এ ধরণের তালিকা থাকলে অপরাধীদের পক্ষে তদবিরের হার কমে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।
দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী মোস্তাক আহমেদ বলেন, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না থাকায় তার থানায় এ ধরণের কোন তালিকা বা চার্ট টানানো হয়নি। তবে, থানায় দালাল বা তদবিরকারীদের বিষয়ে তিনি সতর্ক রয়েছেন। এ ধরণের অনৈতিক কোন সুযোগ কাউকে দেওয়া হয় না।
এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া এন্ড কমিউনিটি পুলিশিং) সোনালী সেন জানান, খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজস্ব চিন্তা থেকেই উদ্যোগটি নিয়েছেন। এখানে নেগেটিভের তেমন কিছু দেখছেন না তিনি। বরং এ ধরণের তালিকা থাকলে মানুষ সাবধান হবে। তদবির করতে কেউ সাহস পাবে না। তালিকায় নাম থাকলে তদবির করতে গিয়ে কিছুটা হলেও বিব্রতবোধ করবে। এতে সুফল মিললে কেএমপির অন্যান্য থানায়ও এ ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
বি এম রাকিব হাসান
খুলনা ব্যুরো:
২৪-০৭-১৮