স্ত্রীর পরকীয়ার বলি রথীশ বালুতে পুঁতে রাখা লাশ উদ্ধার

 

স্ত্রীর পরকীয়ার বলি রথীশ

স্টাফ রিপোর্টার ও রংপুর প্রতিনিধি : রংপুরের জজ আদালতের বিশেষ পিপি রথীশ চন্দ্র ভৌমিক ওরফে বাবু সোনাকে ২৯ মার্চ রাতেই শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছেএ হত্যাকাণ্ডে জড়িত স্ত্রী দীপা ভৌমিক ও তার ‘কথিত প্রেমিক’ কামরুল ইসলাম জাফরী। হত্যার পর রাতে লাশটি বাড়িতে রাখা হয়। পরদিন সকালে আলমারিতে ভরে লাশটি নিয়ে গুম করা হয়। রংপুরে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ। গতকাল বুধবার দুপুর সোয়া ১২টায় রংপুর নগরীর স্টেশন এলাকায় র‌্যাব-১৩ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ বলেন, পারিবারিক কলহ, সন্দেহ ও পরকীয়া প্রেমে

লিপ্ত হয়ে স্ত্রী দীপা ভৌমিক তার স্বামী রথীশ চন্দ্রকে হত্যা করে। এই কাজে সহায়তা করেন তার কথিত প্রেমিক কামরুল মাস্টার।
র‌্যাবের ডিজি বলেন, গত ২৯ মার্চ বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১০টার শয়নকক্ষে রথিশ চন্দ্রকে ভাত ও দুধের সঙ্গে ১০টি ঘুমের বড়ি খাওয়ানো হয়। এ সময় তিনি অচেতন হলে স্ত্রী দীপা ভৌমিক ও তার প্রেমিক কামরুল ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করে। হত্যার পর তার লাশ শয়ন কক্ষেই রাখা হয়।

র‌্যাব ডিজি আরও বলেন, পরের দিন শুক্রবার কামরুল মাস্টার ভোর ৫টায় ঐ বাসা থেকে বের হয়ে যায়। পরবর্তীতে সকাল ৯টায় কামরুল একটি রিকশাভ্যান নিয়ে আসে। পরে তারা লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে একটি আলমারি পরিবর্তনের নাম করে সেখানে লাশ ভরে রংপুর নগরীর তাজহাটের মোল্লাপাড়ার নির্মাণাধীন বাড়িতে বালু খুঁড়ে পুঁতে রাখে। আলমারি বহন ও লাশ ভ্যানে তোলার কাজের জন্য তিন জনকে কামরুল মাস্টার আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন।

বেনজির আহমেদ বলেন, গত মঙ্গলবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রথীশ চন্দ্রের স্ত্রী দীপা ভৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে আসে র‌্যাব। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তিনি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাত ১১টায় তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকায় একটি নির্মাণাধীন ভবনের ভেতর থেকে মাটি খুঁড়ে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে রথীশের ছোট ভাই সুশান্ত ভৌমিককে ঘটনাস্থলে নেয়া হলে তিনি তার ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন।

তিনি আরও বলেন, বালু খোঁড়াখুঁড়ি ও লাশ লুকানোর সাথে জড়িত দুজনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন সবুজ ইসলাম ও রোকনুজ্জামান। তাদের বাড়ি তাজহাট মোল্লাপাড়া এলাকায়।

র‌্যাবের মহাপরিচালক বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা ২৬ মার্চ কামরুল মাস্টারের নির্দেশে ৩০০ টাকার বিনিময়ে মোল্লাপাড়ার নির্মাণাধীন ভবনের নিচে বালু খুঁড়ে রাখে। পরবর্তীতে ৩০ মার্চ শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে ঐ লাশ বালু দিয়ে গর্তে ঢেকে রাখে তারা। কামরুল মাস্টার তাদের শিক্ষক হওয়ায় তারা আদেশ পালন করেছে বলে জানায়। বেনজির আহমেদ বলেন, এই ঘটনায় রথীশের স্ত্রী দীপা ভৌমিক, তার কথিত প্রেমিক কামরুল এবং লাশ লুকিয়ে রাখার সঙ্গে জড়িত মোট চার জনকে এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় র‌্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, রংপুরের কাউনিয়ায় জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও এবং মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা মামলার সরকার পক্ষের প্রধান আইনজীবী, হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও জেলা আওয়ামী লীগ আইনবিষয়ক সম্পাদক এডভোকোটে রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা গত ৩০ মার্চ নিখোঁজ হোন। এরপর থেকে তার সন্ধানে রংপুরে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ আন্দোলনে নামে। এ ঘটনায় জামায়াত নেতাসহ গ্রেফতার করা হয় বেশ কয়েকজনকে। এরপর বের হয়ে আসে রথীশ চন্দ্র ভৌমিক বাবু হত্যাকাণ্ডের রহস্য।

 

Post a Comment

Previous Post Next Post