বারী উদ্দিন আহমেদ বাবর, কুমিল্লা প্রতিনিধি: নবজাতকের দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করার পর প্রসূূতির জরায়ু কেটে েফেলেছেন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের ডাক্তাররা। গত রোববার (১৮ মার্চ) এ ঘটনা ঘটলেও আজ শনিবার (২৪ মার্চ) দুপুরে এ খবর জানাজানি হয়। এতে সাধারণের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
জুলেখা বেগম নামের এক প্রসূূতি মা এক সপ্তাহ ধরে তার সন্তান ও শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হারিয়ে হাসপাতালের বিছানায় দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করছেন। শনিবার সকালে এ খবর জানাজানি হয়।
এ ঘটনায় হাসপাতালসহ বিভিন্ন মহলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের দাবি, ওই প্রসূূতির জীবন রক্ষার্থেই অপারেশন করে নবজাতকের মাথা বিচ্ছিন্ন করে বের করা হয়েছে এবং জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে।
জানা যায়, জেলার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর গ্রামের সফিক কাজীর স্ত্রী জুলেখা বেগমের (৩০) প্রসব বেদনা নিয়ে গত ১৭ মার্চ রাতে কুমেক হাসপাতালে ভর্তি হন। পরেরদিন রবিবার দুপুরে অপারেশন থিয়েটারে হাসপাতালের গাইনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. করুনা রানী কর্মকারের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের চিকিৎসক দল ওই অপারেশন করেন। এসময় ডা. নাসরিন আক্তার পপি, ডা. জানিবুল হক, ডা. দিলরুবা শারমিন ও ডা. আয়েশা আফরোজসহ অন্যান্যরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রসূূতির স্বামী সফিক কাজী জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর প্রসব বেদনায় ছটফট করলেও ডাক্তাররা আমার স্ত্রীকে সিজারের কোন উদ্যোগ নেয়নি। পরদিন ১৮ মার্চ দুপুরে জুলেখার সিজার করা হয়। এ সময় তার নবজাতক ছেলের মাথা বিচ্ছিন্ন এবং তার স্ত্রীর জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি আরো জানান, ওইদিন হাসপাতালের একজন দারোয়ান এসে তার কাছে মৃত নবজাতককে মাটি চাপা দেয়ার জন্য ৫শ’ টাকা চায়। পরে তিনি ৩শ’ টাকা দিলে ওই দারোয়ান হাসপাতালের বারান্দা দিয়ে নবজাতকের মৃতদেহ মাটিচাপা দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পান তার সন্তানের মাথা কেটে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। এসময় তিনি মোবাইলে নবজাতকের ছবি তুলে রাখেন। এরপর দারোয়ান হাসপাতালের অদূরে নিয়ে নবজাতককে মাটিচাপা দেয়।
শনিবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে জুলেখা বেগমের কাছে জানতে চাইলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ডাক্তাররা আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। হাসপাতালে আসার পরও আমার পেটে সন্তান নড়াচড়া করছিল। আমি সিজারের কথা বললেও তারা (ডাক্তার) রাতে সিজার করেনি। ডাক্তার আমার জরায়ুপথে পেটের ভেতর হাত দিয়ে টানাটানি করে আমার সন্তান নষ্ট করে ফেলেছে।
একটি সেমিনারে অংশ নিতে বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস’ান করায় প্রসূতি বিভাগের প্রধান ডা. করুনা রানী কর্মকারের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে অপারেশনে অংশ নেয়া হাসপাতালের ডা. নাসরিন আক্তার পপি ও ডা. দিলরুবা শারমিন সাংবাদিকদের জানান, প্রসূতির গর্ভের সন্তান মৃত ও অস্বাভাবিক অবস’ায় ছিল। কিন’ শিশুটির হাত-পা জরায়ু মুখ দিয়ে বের হয়ে চলে আসায় বাধ্য হয়ে অপারেশনের মাধ্যমে মৃত শিশুর দেহ ও মাথা বিচ্ছিন্ন করে আলাদাভাবে বের করা হয়েছে। এসময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় আমরা জরায়ুটি কেটে ফেলি। এতে ডাক্তারদের কোন অবহেলা ছিল না বলেও তারা দাবি করেন।
এ বিষয়ে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মতিউর রহমান জানান, প্রসূতির জীবন রক্ষার্থে ডাক্তাররা অপারেশন করে গর্ভের সন্তান দুই খন্ডে বের করে আনেন। এক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ সঠিক কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।