নিজস্ব প্রতিবেদক : কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়ক। কুষ্টিয়াসহ এ অঞ্চলের মানুষকে এই মহাসড়ক ব্যবহার করে রাজধানী ঢাকা যেতে হয়। এছাড়া কুষ্টিয়ার দুটি উপজেলা কুমারখালী ও খোকসা এবং পাশ্ববর্তী রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলায় যেতে হলেও এই মহাসড়ক ব্যবহার করতে হয়। প্রতিদিন অতি গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়ক দিয়ে শত শত বাস-ট্রাকসহ অসংখ্য অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। অথচও গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কের গা ঘেঁষে অবৈধভাবে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এর একটি হচ্ছে মনির প্লাইউড ও পাটিক্যাল বোর্ড এবং কুষ্টিয়া ষ্ট্রিল প্রসেসিং ইন্ডাষ্ট্রিজ। জানা যায়, প্রতিষ্ঠান দুটি’র মালিক একজন ব্যক্তিই। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের জনৈক মনির হোসেন ওরফে মনির হচ্ছেন এই শিল্প প্রতিষ্ঠান দুটির মালিক। নাম মনির হোসেন হলেও বেশিরভাগ মানুষ তাকে ভাঙড়ী মনির বা মনির আয়রণ নামেই চেনেন। কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী মহাসড়কে যাওয়ার পথে ডানদিকে প্রথমে পড়বে কুষ্টিয়া ষ্ট্রিল প্রসেসিং ইন্ডাষ্ট্রিজ। এর পর কিছু দুর এগুলেই মনির প্লাইউড ও পাটিক্যাল বোর্ড নামক শিল্প প্রতিষ্ঠানটি চোখে পড়বে। কারখানা দুটি’র মালিক মনির কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের একেবারে পাশে এমনভাবে জায়গা দখল করে শিল্প প্রতিষ্ঠানদুটি গড়ে তুলেছেন যে দুর থেকে মনে হবে এটা মহাসড়কেরই অংশ। স’ানীয়রা জানান, এই দুটি শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে যখন মালামাল বোঝাই করা ট্রাক হঠাৎ করে মুখ বের করে মহাসড়কে উঠে আসে তখন এই মহাসড়ক দিয়ে চলাচলরত বাস-ট্রাকসহ যানবাহনের চালকদের চরম বেকায়দায় পড়তে হয়। প্রায়শই ছোট খাটো দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটে। মাটি ফেলে জায়গা ভরাট করে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে মনির একের পর এক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেও অজ্ঞাত কারণে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ দিন ধরে না দেখার ভান করে আসছে। যত্রতত্র এই শিল্প প্রতিষ্ঠান দুটির পাশে বিশাল বিশাল কাঠের স’পসহ মালামাল পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই শিল্প প্রতিষ্ঠান দুটির একেবারেই পাশে গড়ে উঠছে কুষ্টিয়াবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের মেডিকেল কলেজ, কুষ্টিয়া সিটি কলেজ, লাহিনী পাড়া নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং একটি মাদ্রাসা। এছাড়াও অবৈধভাবে গড়ে তোলা এই শিল্প প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে মারাত্মক পরিবেশ দুষণ ছড়ানোরও অভিযোগ রয়েছে। যোগাযোগ করা হলে কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে কোনদিন কেউ অভিযোগ করেনি। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে এ শিল্প প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে ব্যবস’া গ্রহণের কথা জানান তিনি। কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ মহাপরিচালক মোঃ হাসিবুজ্জামান বলেন, দুষণমুক্ত নগর স’াপনের জন্য আগে প্রয়োজন একটি নগর পরিকল্পনা। কিন’ দু:খজনক হলেও সত্য কুষ্টিয়াতে এ ধরণের কোন নগর পরিকল্পনা নেই। কুষ্টিয়া বিসিক শিল্পনগরীতে বরাদ্দ যোগ্য কোন জায়গা না থাকার কারণে যে যেখানে পাড়ছে এমনকি মহাসড়কের জায়গা দখল করেও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান যদি এসব জায়গায় কলকারখানা গড়ে তুললে চুপ করে বসে থাকে তাহলে আমাদের কি করার আছে।
সূত্র জানায় শিল্প-কল-কারখানা গড়ে তোলার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও পৌর এলাকার মধ্যে হলে পৌরসভার ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়া জেলা সার্কেলের সিনিয়র কেমিষ্ট মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, আমরা প্রতিবছর আমাদের খুলনা বিভাগীয় ল্যাবে দুষণের মাত্রা পরীক্ষা করার পর কল-কারখানার লাইসেন্স নবায়ন করে থাকি। তিনি বলেন, আবাসিক এলাকায় কল-কারখানা স’াপনের অনুমোদন দেওয়ার কোন বিধান নেই। এছাড়াও ছাড়া পুকুর, জলাশয়সহ আবাসিক এলাকায় যেখানে জনবসতি রয়েছে সেখানেই শিল্প কল-কারখানা স’াপনের কোন বিধান নেই। তিনি দাবি করেন পৌর কাউন্সিলর বা পৌর মেয়র অনাপত্তি দিলে তখন পরিবেশ অধিদপ্তরের আর কিছুই করার থাকে না। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোঃ মতিয়ার রহমান মজনু, পৌর এলাকার ভেতরে শিল্প-কল-কারখানা স’াপনের বিষয়ে অনেক কিছু দেখভাল করার নিয়ম থাকলেও আমরা নানা কারণে অনেক কিছু দেখেও না দেখার ভান করি। সূত্র জানায়, কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে মনির প্লাইউড ও পাটিক্যাল বোর্ড এবং কুষ্টিয়া ষ্ট্রিল প্রসেসিং ইন্ডাষ্ট্রিজ মালিক মনির এক সময় বাদাম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করত। পরবর্তীতে বাদাম বিক্রি ছেড়ে দিয়ে লোহা-লক্করও ভাঙড়ী বিক্রি করা শুরু করে। এক সময় চোরাই মালামালও সে ক্রয়-বিক্রয় করত। রেল লাইনের চোরাই স্লিপার কেনা-বেচা করত। এর পর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এই ভাঙড়ী ব্যবসা তাকে জিরো থেকে হিরো বানিয়ে দেয়। রাতারাতি আঙুল ফুলে কলা গাছ বনে যান মনির। কুষ্টিয়া শহরের বড় বাজার এলাকায় তার মনির আয়রণ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এনএস রোডে রয়েছে বহুতল ভবন মনির টাওয়ার, বড় বাজারেও তার বহুতল ভবন রয়েছে। শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে মিল্কী সুপার মার্কেটে একাধিক দোকানসহ ডাচ বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং ভাড়া দেওয়া রয়েছে। এছাড়াও নামে-বেনামে তার অঢেল-সহায় সম্পত্তির পাহাড় গড়ে তুলেছেন মনির।