Kbdnews: মেহেরপুরে তুলার ফলন ভাল হওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। পর পর ৩ বছর তুলা চাষ করে ভাল ফল পাওয়ায় মেহেরপুরে এ বছরও বেড়েছে হাইব্রিড জাতের তুলা চাষ। অল্প পরিশ্রম, খরচ কম এছাড়া ভাল ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় চাষিদের মধ্যে তুলা চাষের আগ্রহ বেড়েছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এ বছর আড়াইশ’ হেক্টর জমিতে বেশি তুলা চাষ করেছেন চাষিরা।
তুলা উন্নয়ন অফিসের হিসেব মতে গত বছর তুলা চাষ হয়েছিল ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। তার আগের বছর হয়েছিল ২ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে। এবার জেলায় তুলা চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে। যা গত দু’বারের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ।
মেহেরপুরের সিন্দুরকৌটা গ্রামের তুলা চাষি রুহুল আমিন বলেন, প্রতি বছর আমি ২ থেকে ৩ বিঘা জমিতে তুলার চাষ করে থাকি। দেশি তুলার চেয়ে হাইব্রিড জাতের তুলায় ফলন বেশি ও রোগ-বালাই এবং খরচ কম। একই গ্রামের চাষি মহিবুল ইসলামের ৩ বিঘা, মারজুল হোসেনের ৩ বিঘা, জিয়ারুল ইসলামের ৪ বিঘা, আব্দুল খালেকের ৪ বিঘা, সামাদ আলীর আড়াই বিঘা, শহিদুল ইসলামের ৪ বিঘা জমিতে তুলার চাষ রয়েছে। এছাড়া একই গ্রামের শতাধিক চাষির তিনশ’ বিঘা জমিতে তুলার চাষ রয়েছে বলে তুলা উন্নয়ন বোডের্র বামুন্দী ইউনিট অফিস জানিয়েছে। এসব চাষিরা জানিয়েছেন, বিঘা প্রতি তুলার ফলন পাওয়া যাচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ মণ। তবে গত বছর আরো ভালো ফলন পাওয়া গিয়েছিল। এ বছরে প্রচন্ড শীত ও মাঝে মধ্যে শৈত্য প্রবাহ থাকায় তুলার বলের আকার অনেকটাই ছোট হয়েছে। তারপরেও বিঘা প্রতি ১৫/১৬ মণ ফলন আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মেহেরপুরের ধানখোলা ইউনিয়নের সানঘাট গ্রামের তুলা চাষি শান্ত বলেন, এ বছর আমার ৪ বিঘা জমিতে তুলা রয়েছে। বেশি ফলন হওয়ায় এলাকার চাষিরা রূপালি-১ উন্নত জাতের তুলা চাষ করেছে। প্রতিটি গাছই ভরে গেছে ফুল আর ফলে, ফুটেছে তুলাও। এখন চলছে সংগ্রহের কাজ। বীজ বপনের ১২০ দিন পর জমি থেকে তুলা সংগ্রহ করা যায়। এক বিঘা জমিতে তুলা চাষ করতে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। আর তুলা বিক্রি করে পাওয়া যায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।
মেহেরপুর নিশিপুর গ্রামের তুলা চাষি ফয়সাল জানান, তুলার উৎপাদন ভালো হয়েছে, কিন’ বীজের দাম আর একটু কমিয়ে তুলার দাম যদি বাড়ানো হতো তাহলে অনেকে তুলা চাষ করতে আগ্রহী হতো। তুলা চাষি সিদ্দিক জানান, তুলা চাষ লাভজনক কিন’ দাম সব সময় এক থাকে না কোনো বছর ২ হাজার আবার কোনো বছর ২ হাজার ৪শ’। যদি দাম একই থাকতো তাহলে তুলা চাষ আরো বেশি হতো। নওদা মটমুড়া গ্রামের তুলা চাষি আব্দুস সাত্তার জানান, আমি প্রতি বছরই তুলার চাষ করে থাকি। এ বছর ৭ বিঘা জমিতে তুলার চাষ করেছি। গত বছর প্রতি মণ তুলার দাম নির্ধারিত ছিল ২ হাজার ২৪০ টাকা। এ বছর তুলার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৪শ’ টাকা।
মেহেরপুর সদর উপজেলার ঝাউবাড়িয়া, কাথুলি, বুড়িপোতা, গোভিপুর, ঝাঁঝাঁ, বালির মাঠ, শুভরাজপুর, পাটকেলপোতা, বলিয়ারপুর, রাইপুর, মুজিবনগর উপজেলার মানিকগর, শিবপুর, মোনাখালি, দারিয়াপুর, গাংনী উপজেলার ধানখোলা, সানঘাট, এলাঙ্গী, আযান, শিশিরপাড়া, জুগিন্দা, বাঁশবাড়িয়া, গাঁড়াডোব, বাওট, মটমুড়া, কুমারীডাঙ্গা, কামারখালি, বাদিয়াপাড়া, তেরাইল, কাজীপুর, নওদাপাড়া, বালিয়াঘাট, দেবীপুর, করমদী, তেঁতুলবাড়িয়া, মটমুড়া, মহাম্মদপুর, আকুবপুর, হোগলবাড়িয়া, রাজাপুর, বানিয়াপুকুরসহ বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা তুলা চাষ করেছেন। তুলা উন্নয়ন বোডের্র কুষ্টিয়া অঞ্চল প্রধান সেন দেবাশীষ জানান, জেলায় উন্নত জাতের রূপালি-১ তুলার চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের চেয়ে আড়াইশ’ হেক্টর বেশি। তুলার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১০ হাজার মেট্রিকটন। দেশে তুলার চাহিদা ব্যাপক কিন’ উৎপাদন কম। ফলে চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে তুলা সংগ্রহ করতে হয়। কৃষকরা তুলা চাষ করে কীভাবে বেশি ফলনের পাশাপাশি লাভবান হবেন সেদিকে বিবেচনা করে কৃষকদের নানা ভাবে তুলা চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বিভিন্ন মাঠ দিবসের মাধ্যমে ক্ষতিকর তামাক চাষ বাদ দিয়ে তুলা চাষে ধাবিত করা যায় এ নিয়ে কাজ করছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।