বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: খুলনার দৌলতপুর এবং খানজাহান আলী থানা এলাকার ফুলবাড়ীগেটে চলছে মেলার নামে রমরমা জুয়ার আসর। একই সঙ্গে অনুমোদনহীনভাবে চালু করা হয়েছে ‘চামেলী ও জোনাকী’ নামে লটারির টিকিট। প্রকাশ্যে খুলনা শহর ও শহরতলীতে মাইকিং করে বিক্রি হচ্ছে চামেলী ও জোনাকী লটারির টিকিট। পুরস্কারের লোভে পড়ে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার লটারি কিনছেন। গুটি কয়েকজন সামান্য পুরস্কার পেলেও প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা লুটে নিচ্ছে আয়োজকরা।
এদিকে, মেলা ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের শীর্ষ জুয়াড়ি, মাদকসেবী এবং চিহ্নিত ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের এসব মেলায় আনাগোনা হচ্ছে। ফলে যে কোন সময় আইন-শৃঙ্খলা পরিসি’তির অবনতির আশঙ্কা করছেন সচেতন নগরবাসী।
সূত্র জানায়, খুলনার দৌলতপুরের কল্পতরু মার্কেট মাঠে বিজয় মেলার নামে চলছে ‘জোনাকী’ র্যাফেল ড্র আর খানজাহান আলী থানাধীন ফুলবাড়ীগেট বালুর মাঠে স্কুল আঙ্গিনায় চলছে ‘চামেলী’ র্যাফেল ড্র। দু’টি মেলার লটারি টিকিট বিক্রি হচ্ছে নগরীতে মাইকিং করে। প্রতিদিন রাতেই ঘোষণা করা হয় পুরস্কার। আর পুরস্কারের আশায় সাধারণ মানুষগুলো হুমড়ি খেয়ে পড়ছে টিকিট কিনতে। অনেকেই টিকিট কিনতে টাকা সুদে নিচ্ছে। নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের মধ্যে দেখা যায় এ জুয়ায় অংশ নিতে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দৌলতপুর থানাধীন কেডিএর কল্পতরু মাঠে গত ২১ ডিসেম্বর থেকে বিজয় মেলা শুরু হয়েছে। সেখানে প্রতিদিন রাতে হাউজি, চরকা, গুটিসহ বিভিন্ন ধরনের জুয়ার আসর বসছে। এছাড়া রোববার থেকে শুরু হয়েছে জোনাকি র্যাফেল ড্র। ১০ টাকার বিনিময়ে লাখ টাকার পুরস্কার জেতার আশ্বাস দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই প্রতারক চক্র।
স’ানীয়রা জানান, সার্কাস ও মেলার জন্য অনুমতি নিয়ে গত ২১ ডিসেম্বর এই মেলা শুরু হয়। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ-কেএমপির পক্ষ থেকে ১৩টি শর্তে এই মেলার অনুমতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিলো মেলায় কোনো ধরনের হাউজি, জুয়া বা র্যাফেল ড্র চালানো যাবে না। মাদকদ্রব্যের বিষয়ে ছিলো কঠোর নিষেধাজ্ঞা। কিন’ বাস্তবে দেখা গেছে উল্টো চিত্র। একইভাবে গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে ফুলবাড়ীগেট বালুর মাঠে শুরু হয়েছে আরও একটি মেলা। সোনাডাঙ্গায় যে চক্রটি ‘তামান্না’ লটারি বিক্রি করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই চক্রটিই সেখানে ‘চামেলী’ নাম দিয়ে র্যাফেল ড্র’ বিক্রি করছে।
স’ানীয়রা জানান, প্রতিদিন শতাধিক ইজিবাইকে করে র্যাফেল ড্রয়ের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। জোনাকী লটারির টিকিটের মূল্য ১০ টাকা আর চামেলী ২০ টাকা মূল্যের লটারির টিকিট বিক্রির মাধ্যমে প্রতিদিন হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। টিকিট বিক্রির তুলনায় পুরস্কার দেওয়া হয় খুবই সামান্য।
খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) প্রধান প্রকৌশলী মোঃ সাবিরুল আলম বলেন, পুলিশের অনুমতি নিয়ে তাঁতবস্ত্র মেলার নামে কেডিএ’র কাছে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিল। কিছু শর্ত সাপেক্ষে মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে লটারি বা জুয়া চললে সেটা দেখার দায়িত্ব পুলিশের।
দৌলতপুর থানার ওসি মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, দৌলতপুর কেডিএ কল্পতরু মাঠে বিজয় মেলা করার জন্য কেএমপি’র নিকট থেকে অনুমতি নিয়েছে ২১ ডিসেম্বর। সেখানে সার্কাস হওয়ার কথা। তবে মাদক বা জুয়ার আসর বসছে কিনা তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
খানজাহান আলী থানার অফিসার ইনচার্জ লিয়াকত আলী বলেন, গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে বালুরমাঠে বিজয় মেলা শুরু হয়েছে। সেখানে লটারিও হচ্ছে। তবে এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন।