বি এম রাকিব হাসান, খুলনা ব্যুরো: বকেয়া পাওনার দাবিতে ফুঁসে উঠেছেন খুলনার পাটকল শ্রমিকরা। শিল্প ও বন্দর নগরী খুলনার পাটকল শ্রমিক সেক্টরে অসন্তোষ দানা বেঁধে উঠেছে। উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পাটকল সেক্টর। যে কোনো মুহূর্তে অনাকাঙ্খিত ঘটনার আশঙ্কা করছেন অনেকে।
খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ৮টি পাটকলের শ্রমিকরা বকেয়া মজুরির দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো কর্মবিতরতি পালন করছেন। গতকাল রোববার ভোর ৬টায় এসব পাটকলের শ্রমিকরা কাজে যোগদান না করে কর্মবিরতি শুরু করেছেন। এতে খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকলের মধ্যে ৮টিরই উৎপাদনের চাকা ঘুরছে না। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে বিক্ষোভ সমাবেশ করছেন। তাদের স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠছে শিল্পাঞ্চল। দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য রাজপথ-রেলপথ অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান আন্দোলনরত শ্রমিকরা।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্টার, প্লাটিনাম, দৌলতপুর, ক্রিসেন্ট, ইস্টার্ন, জে জে আই ও আলীম মোট ৭টি জুট মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। এদিন চলেছে কার্পেটিং এবং খালিশপুর জুট মিল। গত শনিবার থেকে কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা কাজে যোগদান করলেও খালিশপুর জুট মিলের কোনো শ্রমিক উৎপাদন কাজে যোগ দেননি।
শ্রমিকরা জানান, গত বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ৯টায় ৮ সপ্তাহের মজুরির দাবিতে প্লাটিনাম জুট মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। পরবর্তীতে সকাল ১০টায় একে একে ক্রিসেন্ট, দৌলতপুর ও স্টার জুট মিলের শ্রমিকরা তাদের মিলের উৎপাদন বন্ধ রেখে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ চারটি মিল বন্ধের সংবাদ পেয়ে দুপুর ২টার দিকে আটরা-গিলাতলা শিল্পাঞ্চলের ইস্টার্ন এবং যশোর অভয়নগরের জে জে আই জুট মিলের উৎপান বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। ওই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আলীম জুট মিলের শ্রমিকরা উৎপাদন বন্ধ করে দেন। আর শনিবার খালিশপুর জুট মিলের শ্রমিকরা উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন।
পাটকলগুলোর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা অঞ্চলের ৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলের মধ্যে ক্রিসেন্ট জুট মিলে প্রায় ৫ হাজার, প্লাটিনামে সাড়ে ৪ হাজার, স্টারে সাড়ে ৪ হাজার, দৌলতপুর জুট মিলে সাড়ে ৬শ’, ইস্টার্নে জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মো. বেল্লাল হোসেন মল্লিক বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। শ্রমিক-কর্মচারীরা বকেয়া মজুরি না পেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি জানান, শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধে মিল কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করছে। তার মিলের ৮ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া রয়েছে।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সাধারণ সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেন বলেন, মজুরি না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা। তাই তারা বাধ্য হয়ে মিলের উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বকেয়া পরিশোধের বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকরা কাজে যোগদান করবেন না।
বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) খুলনা অঞ্চলের লিয়াজো কর্মকর্তা গাজী শাহাদাত হোসেন বলেন, খামাকা শ্রমিকরা মিল বন্ধ করে একাকার করে ফেলেছেন। অন্য অঞ্চলের সব মিল চালু, কোনো সমস্যা নেই। এখানে কেউ কেউ ফায়দা নেওয়ার জন্য এ আন্দোলন করছেন। তিনি জানান, বেতনের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। দুইদিন অফিস বন্ধ ছিলো। ঊর্ধ্বতনদের বিষয়টি জানানো হয়েছে।