Kbdnews ডেস্ক : পুলিশের ঊর্ধ্বতন বিভিন্ন পর্যায় থেকে সদস্যদের অপরাধ ঠেকাতে কড়া হুঁশিয়ারি দেয়া রয়েছে। পাশাপাশি অপরাধী পুলিশ সদস্যদের শাস্তির আওতায়ও নেয়া হচ্ছে। তারপরও থামছে না অপরাধ। পুরনো অভিযোগ ঘুষ, দুর্নীতির বাইরে গিয়ে মাদক ব্যবসার মতো ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন পুলিশের কনস্টেবল থেকে মাঠ পর্যায়ের অসাধু কর্মকর্তারা। ফলে জঙ্গি দমন থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতিসহ পুলিশের নানা সফলতা মস্নান হয়ে যাচ্ছে। নানা অপরাধে জড়িয়ে বছরে অন্তত ১৩ হাজার সদস্যকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। মাসে গড়ে সাড়ে ১১শ’ সদস্যকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। আর দৈনিক অন্তত ৩৮ জন পুলিশ সদস্য আইন অমান্য করা থেকে শুরু করে নানা অপরাধে জড়িয়ে শাস্তি পাচ্ছেন। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১২ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ৫১১ জন পুলিশ সদস্য চাকরিচ্যুত এবং ৪২ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। এরপরও পুলিশ সদস্যদের অপরাধপ্রবণতা কমানো যাচ্ছে না। পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পুলিশের কনস্টেবল থেকে শুরু করে উপ-পরিদর্শক (এসআই) পর্যন্ত সদস্যরা বেশি অপরাধে জড়াচ্ছেন। তারপর রয়েছেন পরিদর্শক মর্যাদার কর্মকর্তারা। এএসপি থেকে শুরু করে আরো
উপরের কর্মকর্তাও অপরাধে জড়িয়ে শাস্তি পাওয়ার নজির রয়েছে। ২০১২ সাল থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত পৌনে ৬ বছরে লঘুদ- পেয়েছেন ৭৩ হাজার ৩৩৩ জন সদস্য। তাদের মধ্যে কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত রয়েছেন ৭৩ হাজার ২৯ জন, পুলিশ পরিদর্শক ৭০ জন এবং এএসপি থেকে তার ঊধর্ে্ব কর্মকর্তা রয়েছেন ২৩ জন। একই সময়ে গুরুদ- পেয়েছেন ৩ হাজার ৯৯১ জন। শাস্তি পাওয়াদের মধ্যে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ১০ হাজার ৮২১ জনকে শাস্তি দেয়া হয়। ২০১৬ সালে শাস্তি পাওয়া পুলিশের সংখ্যা ১৩ হাজার ৫৮৬ জন, ২০১৫ সালে ১১ হাজার ১৬৭ জন, ২০১৪ সালে ১৫ হাজার ২৯৭ জন। ২০১৩ সালে অপরাধ করে শাস্তি পেয়েছেন পুলিশের ১৪ হাজার ৬০ সদস্য এবং ২০১২ সালে এ সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৮৭৯ জন।
সূত্র জানায়, দীর্ঘ তদন্তের পর অভিযুক্ত পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। গুরুতর অপরাধের প্রমাণ পেলে অভিযুক্তরা চাকরিচ্যুত হন। অথচ ওই অভিযুক্তদের অন্তত ৯০ ভাগই আদালতের মাধ্যমে চাকরি ফিরে পান। অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি চাকরি ফিরে পেলে অন্য সদস্যদের অপরাধভীতি কমে আসাটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া পুলিশ অপরাধের অলিগলি চেনে। সেজন্য সহজে সেটা করতে পারে। সেটা থামাতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কঠোর হওয়া জরুরি। শুধু প্রশাসনিক শাস্তি দিয়ে তা রোধ করা যাবে না। পাশাপাশি পুলিশের নিয়োগ-বদলিতে বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। ওসব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকতে হবে। কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা গেলেই পুলিশের অপরাধ কমবে। কারণ অপরাধ দমন এবং অপরাধ কার্যক্রম একই সঙ্গে হতে পারে না।
সূত্র আরো জানায়, পুলিশ অ্যাক্ট-১৮৬১ অনুযায়ী, কোনো পুলিশ সদস্য অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়ালে তার বিরুদ্ধে ২ ধরনের বিভাগীয় শাস্তির বিধান রয়েছে। এর একটি লঘুদ-, অন্যটি গুরুদ-। গুরুদ-ের আওতায় চাকরি থেকে বরখাস্ত, পদাবনতি, পদোন্নতি স্থগিতকরণ ও বেতন বৃদ্ধি স্থগিতকরণ করা হয় এবং বিভাগীয় মামলা রুজু করা হয়। মামলায় অপরাধ প্রমাণ হলে বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত করা হয়। তবে গুরুদ-ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি ছোট ছোট অনিয়ম বা অপরাধের জন্য দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার, অপারেশনাল ইউনিট থেকে পুলিশ লাইন্স বা রেঞ্জে সংযুক্ত করে লঘুদ- দেয়া হয়।
এদিকে সম্প্রতি দুইবার মাদক ব্যবসা করতে গিয়ে দুই পুলিশ সদস্য গ্রেফতার হওয়া ছাড়াও সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশ সদস্যদের কয়েকটি অপরাধ আলোচনার জন্ম দেয়। রাজধানীর ফকিরাপুলে একটি ভবনে অভিযানের নামে একটি রিক্রুন্টিং এজেন্সির মালিকের কাছে সিআইডির এক কর্মকর্তা কোটি টাকা ঘুষ দাবি করে বরখাস্ত হন। গত ১৮ এপ্রিল কাফরুলের কচুখেতের নিউ ওয়েভ ক্লাবে চাঁদাবাজির অভিযোগে ডিবি পুলিশের ১১ পুলিশ সদস্যকে আটক করে মিলিটারি পুলিশ। গত ২৩ অক্টোবর খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার আবদুল্লাহ আরেফের বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। গত ২৫ অক্টোবর টেকনাফের এক ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেয়ার পর ১৭ লাখ টাকাসহ গোয়েন্দা পুলিশের ৭ সদস্য আটক হন। ১৭ অক্টোবর রাজধানীর খামারবাড়ি এলাকায় জসীম উদ্দিন নামে এক পুলিশ সদস্য ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়েন। ঐ সময় পালিয়ে যাওয়া অপর দু’জনও ছিলেন পুলিশ সদস্য। ২৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের মইজ্জারটেক এলাকা থেকে এক হাজার পিস ইয়াবাসহ আটক হন এএসআই আনোয়ার হোসেন। ১৯ ডিসেম্বর বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় এক ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাইয়ের সময় গণপিটুনির শিকার হন কনস্টেবল শাহনেওয়াজ।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের মুখপাত্র ডিআইজি (মিডিয়া) আবদুল আলিম মাহমুদ জানান, বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তা তদন্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করা হচ্ছে। অপরাধের ধরন অনুযায়ী কোনো কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হচ্ছে। ফৌজদারি মামলাও দেয়া হচ্ছে। কোনো সদস্যের ব্যক্তিগত অপরাধের দায় বাহিনী নেবে না। অপরাধ করলে পার পাওয়ার সুযোগ নেই-সেটা শাস্তির পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায়।