আমিরুল ইসলাম অল্ডাম: গাংনীতে প্রায় ৫০ বছর যাবৎ একটি প্রভাবশালী পরিবার সরকারী স্কুলের জমি জবরদখল করে অবৈধভাবে দ্বিতল ভবন নির্মাণ করে বহাল তবিয়তে বসবাস করছে। এনিয়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখালেখি হলে জেলা প্রশাসক পরিমল সিংহ তাৎক্ষনিকভাবে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অনতিবিলম্বে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেছে । এদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল এসিল্যান্ড এর মাধ্যমে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।এর আগে প্রশাসন সব জেনেও ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের ভয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার পায়তারা চালিয়ে আসছিল। অভিযুক্ত দখলদার মামলার সরকারী পক্ষের বাদী শিক্ষা অফিসারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে শুনানীতে হাজির হতে দেয়না।
জানা গেছে, উপজেলার তেরাইল বাজারের পার্শ্বে (গাংনী-কুষ্টিয়া প্রধান সড়কের পার্শ্বে) ১৯০৪ সালে ১৪ শতক জমির উপর তেরাইল প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় গ্রা্রমে শিক্ষার আলো জ্বালাতে এলাকার অলিনগর গ্রামের জহির শাহ ৪১ নং মৌজাধীন ৩ নং খতিয়ানে ৪৭২২ দাগের ১৪ শতক জমি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে শিক্ষা বিভাগকে দান করেন।পরবর্তীতে স্কুলের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ১৯৬৬ সালে রাস্তার বিপরীত দিকে (তেরাইল বাজারের পশ্চিম দিকে) স্কুল ঘরটি স’ানান্তরিত করা হয়। স্কুল ঘরটি স’ানান্তরিত হলে ওই গ্রামের প্রভাবশালী পরিবারের মৃত নাদের হোসেনের ছেলে আঃ গনি ও তার জামাই আজিজুল হক জোরপূর্বক খালি জায়গাটুকু জবরদখলে নিয়ে ঘরবাড়ী স’াপন করে দাপটের সাথে প্রায় ৫০ বছর অবৈধভাবে বসবাস করে আসছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে শিক্ষা বিভাগের নামে আর,এস রেকর্ডভুক্ত জমির উপর কিভাবে একটি গোষ্ঠী জবরদখল করে বসবাস করতে পারে এটি বোধগম্য হয়না এলাকার সচেতন মহলের ।এলাকাবাসীর ক্ষোভ , তাহলে কি প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এই জবরদখল!
এব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, অন্যান্য বিষয়ে মতবিনিময় হলেও স্কুলের জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়ে কিছুই জানানো হয়না । তবে তিনি জানান, পুরাতন স্কুলের জমি নিয়ে কিছু সমস্যা আছে, সব কথা বলা যাবেনা। পুরাতন স্কুলের কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি।
গ্রামবাসীসূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালে তেরাইল প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সরকারী করণ হওয়ার পর থেকে এযাবৎ ওই প্রভাবশালী পরিবারের মধ্যেই বার বার সভাপতি মনোনীত করে স্কুলের সম্পদ আত্মসাত করে আসছে। ক্ষমতাবলে বার বার আঃ গনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বর্তমানে ৬বছর যাবৎ তার জামাই আজিজুল হক সভাপতি হিসাবে একাধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছেন। আরও জানা গেছে, দখলদার আঃ গনি নিজেই কিছুদিন প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে নানা অপকর্ম করেছেন। এই স্কুলে তার স্ত্রী মঞ্জুয়ারা খাতুন স্কুলে বেশীরভাগ সময় অনুপসি’ত থেকে দীর্ঘদীন প্রধান শিক্ষক হিসাবে চাকরী করেছেন। পরবর্তীতে আঃ গনি বামন্দী ইউনিয়ন তহশীলদার হিসাবে নামে- বেনামে স্কুলের জমি ছাড়াও অনেক জমি ভুঁয়া জাল কাগজপত্র বা দলিল করে (জালিয়াতি করে) গ্রামে আলোচিত হয়ে আছেন। একইভাবে স্কুলের ১৪ শতক জমি মহব্বতপুর গ্রামের আফতাব হোসেনের ছেলে আহাম্মেদ আলীর নামে ভুঁয়া দলিল করে দিয়ে তা পরে ক্রয় দেখিয়ে ফিরিয়ে নেন । একযুগ আগে বর্তমান স্কুল এরিয়ার ৫৩ শতক জমি জাল দলিল করে জবরদখল করতে গেলে গ্রামবাসীর তোপের মুখে পড়ে। এনিয়ে গ্রামে সালিশ বসে। পরে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার , থানা কর্মকর্তা ও সকল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এবং গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের চাপে উক্ত জমি ফেরত দিতে বাধ্য হয়। এছাড়াও ১ নং খতিয়ান ভুক্ত ২৯৯৫ দাগের ৪ বিঘা জমি,এনিমি সম্পত্তি সহ বাড়ীর পার্শ্বের ১ বিঘা জমি ছাড়াও তেরাইল বিলের মধ্যে ৪ বিঘা জমি অবৈধভাবে দখল করে পুকুর কেটেছেন।
এব্যাপারে জমি জবরদখল কারী আঃ গণির সাথে আলাপকালে তিনি ক্রয়সূত্রে জমি দখল করেছেন বলে জানান। এসময় তিনি কিছু ভুয়া কাগজপত্র দেখান। উক্ত জমি ভুলবশতঃ আর,এস রেকর্ডে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে শিক্ষা বিভাগের নামে হয়েছে। এতে কোন সমস্যা নেই, সব ঠিক করে নেব। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি দম্ভোক্তি করে বলেন, আমার ক্ষমতাবলে আমি জমি দখল করে বসবাস করছি। আমার বিরুদ্ধে লিখে কোন লাভ হবে না। এনিয়ে বামন্দী ইউনিয়নের সহকারী ভুমি কর্মকর্তার সাথে মোবাইল ফোনে আলাপ করতে চাইলে একাধীকবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
সরেজমিনে তদন্ত করে স্কুলের জমি জবরদখলকারী তেরাইল গ্রামের আঃ গনি গংদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস’া গ্রহন ও সরকারী সম্পত্তি উদ্ধারের দাবী জানিয়েছেন এলাকার সচেতন মহল।